সালটা ২০১৩। সন্ধ্যায় অফিসের পর আড্ডা চলছে চার মেধাবী তরুণের। আড্ডার বিষয় নতুন কোনো ব্যবসার আইডিয়া বের করা। রিটেইল এবং ফ্যাশন নিয়ে কিছু করার ব্যাপারে কথা হচ্ছে।
খাওয়া-দাওয়া ছাড়া বাঙালির আড্ডা তো জমেই না। তাই কথোপকথনের এক পর্যায়ে যখন রেস্টুরেন্ট থেকে খাবার আনার প্রসঙ্গ উঠে তখন তারা উপলব্ধি করল যে বাংলাদেশে যেকোনো রেস্টুরেন্ট থেকে খাবার আনা বেশ ঝামেলাদায়ক প্রক্রিয়া।
বিষয়টি তাদের মাথায় গেঁথে গেল। ফলে সিদ্ধান্ত হলো এই প্রক্রিয়াকে সহজ করার জন্যই তারা কাজ করবে। জন্ম নিল দেশের প্রথম অনলাইন ফুড ডেলিভারি প্ল্যাটফর্ম হাংরিনাকি। শুরু হয়ে গেল বাংলাদেশের অনলাইন ফুড ডেলিভারি ইন্ডাস্ট্রির পথচলা।
বাংলাদেশের সম্ভাবনাময় খাতগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো রেস্টুরেন্ট খাত। ২০১৩ সালে উত্থানের পর এই রেস্টুরেন্ট শিল্পের চিত্র বদলে দিয়েছে অনলাইন ফুড ডেলিভারি প্রতিষ্ঠানগুলো। শহরে বেড়েছে ক্লাউড কিচেনের সংখ্যা আর হোমমেইড ফুডের ব্যবসা।
মানুষের চাহিদা পরিবর্তনের সাথে সাথে রেস্টুরেন্টগুলো ডাইন-ইন এর পাশাপাশি অনলাইন ডেলিভারির দিকে বেশ ঝুঁকেছে। বেশিরভাগ রেস্টুরেন্টই যুক্ত আছে কোনো অনলাইন ফুড ডেলিভারি প্ল্যাটফর্মের সাথে।
ধারণা করা যাচ্ছে, সামনের বছরগুলোয় অনলাইন ফুড ডেলিভারি ইন্ডাস্ট্রি আরও বেশি প্রসারিত হবে। এখন যেখানে দিনে ৩ কোটি টাকা লেনদেন হচ্ছে, ভবিষ্যতে এই সংখ্যা বেড়ে হবে বহুগুণ।
আধুনিক প্রযুক্তি মানুষের জীবনযাত্রায় নানা রকম পরিবর্তন এনে জীবনকে অনেক বেশি সহজ করে তুলছে।
এক সময় যা ছিল কেবলই কল্পনা তা এখন প্রযুক্তির কল্যাণে চলে এসেছে মানুষের হাতের মুঠোয়। মোবাইল ফোন ছাড়া আধুনিক জীবন ভাবাই যায় না। অনলাইন ফুড ডেলিভারি ইন্ডাস্ট্রি মোবাইল অ্যাপের ওপর ভিত্তি করেই চলছে।
এখন মোবাইল ফোনে কয়েক ট্যাপে স্বল্প সময়ে খাবার হাজির হয়ে যাচ্ছে ঘরের দরজায়। এমনকি অর্ডার করা খাবারের মূল্য পরিশোধ করতে মানিব্যাগ খোঁজারও প্রয়োজন হয় না, রয়েছে ডিজিটাল পেমেন্টের ব্যবস্থা।
অনলাইন ফুড ডেলিভারি ব্যবস্থা থাকায় সারাদিনের কর্মব্যস্ত দিনশেষে বাড়ি ফিরে রান্নার চিন্তা যেমন করতে হচ্ছে না, জ্যাম ঠেলে রেস্টুরেন্টে যাওয়ার এবং সেখানে বসে খাবারের জন্য অপেক্ষা করারও প্রয়োজন হচ্ছে না। ফলে বাঁচছে মূল্যবান সময়। বন্ধুদের সাথে ঘরে বসে খেলা কিংবা মুভি দেখতে গিয়ে অনায়াসে অর্ডার করা যাচ্ছে পিৎজা-বার্গার।
বাসায় মেহমান আসলে এখন আর খাবার পরিবেশনের জন্য রান্নাঘরে দৌড়ানোর প্রয়োজন হয় না। পছন্দের খাবার অর্ডার করা যাচ্ছে ঘরে বসেই।
রান্নার ঝামেলা ছাড়াই সুস্বাদু খাবার ঘরে বসে পাওয়া যাচ্ছে এবং সময় বাঁচানো যাচ্ছে বলে চট্টগ্রামের মতো বিভাগীয় শহরগুলোয় মানুষ ঝুঁকছে অনলাইনে খাবার অর্ডারের দিকে। বিভিন্ন অনলাইন ফুড ডেলিভারি প্ল্যাটফর্মে প্রতিদিন আসে লাখেরও বেশি অর্ডার।
মাত্র চারজন ‘ফুড ডেলিভারি ম্যান’ নিয়ে রাজধানী ঢাকার গুলশান-বনানী এলাকায় শুরু হয়েছিল বাংলাদেশের প্রথম অনলাইন ফুড ডেলিভারি প্ল্যাটফর্ম হাংরিনাকি।
যাত্রার সূচনালগ্ন থেকে দক্ষ পরিচালনা এবং আধুনিক প্রযুক্তির সুকৌশলী ব্যবহার দিয়ে হাংরিনাকি এগিয়ে যাচ্ছে পুরোদমে। মানুষের জীবন আরও স্বাচ্ছন্দ্যদায়ক করে অচিরেই জনপ্রিয়তা অর্জন করে হাংরিনাকি। কয়েক বছরের মধ্যে লাভ করে বেস্ট আইসিটি স্টার্টআপের সম্মাননা।
সম্প্রতি হাংরিনাকি’কে অধিগ্রহণ করেছে আলিবাবা গ্রুপের অঙ্গসংগঠন ও ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম দারাজ। আলীবাবা এবং দারাজের অভিজ্ঞতার আলোকে হাংরিনাকি’র পরিচালন দক্ষতা আরও বৃদ্ধি পাবে, খাবার অর্ডারের প্রক্রিয়া হবে সহজতর।
বর্তমানে ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, কক্সবাজার ও নারায়ণগঞ্জে পাঁচ লাখেরও বেশি মানুষ খাবার অর্ডার করতে হাংরিনাকি ব্যবহার করে থাকেন আর সহজেই ঘরে বসে হাংরিনাকি’তে অর্ডার করতে পারেন চাইনিজ, থাই, ইন্ডিয়ানসহ পছন্দের যেকোনো কুইজ্যিন।