বাড়ির পাশেই শ্মশান। তাতে লাশের সারি। একটি, দুটি নয়; গুণে গুণে ছয়টি। এর মধ্যে আবার তিনটি শিশু। সেখানে রয়েছে ওমান প্রবাসী নারায়ণ দাশের স্ত্রী রীতা রানী দাশ এবং তাদের চার ছেলেমেয়ে। অপর লাশটি তাদের এক ভাতিজার। আগের দিন মঙ্গলবার হাটহাজারীতে মর্মান্তিক এক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন উপজেলার জোয়ারা ইউনিয়নের মোহাম্মদপুর গ্রামের এ তরতাজা প্রাণগুলো। এ ছয়জন ছাড়াও ওই ঘটনায় নিহত নারায়ণের বোন চিনু দাশ। শেষকৃত্যের জন্য তার মরদেহ নেয়া হয় উপজেলার সাতবাড়িয়া যতরকুল গ্রামে।
স্থানীয়রা জানান, চন্দনাইশের একই পরিবারের নিহত ৭ জনের মধ্যে চার জনের শেষকৃত্য এবং তিনজনের সমাধি হয়েছে। গতকাল বুধবার দুপুর ১২টার সময় উপজেলার জোয়ারা ইউনিয়নের মোহাম্মদপুর গ্রামে এবং সাতবাড়িয়া ইউনিয়নের যতরকুল গ্রামে এ পারলৌকিক ক্রিয়া সম্পন্ন হয়। এর আগে মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে ৬টি অ্যাম্বুলেন্সে করে নিহত ৭ জনের লাশ নিয়ে আসা হয় চন্দনাইশে। পরে বুধবার সকালে ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা শেষে দুপুর ১২টার পর একে একে সবার লাশ নিয়ে যাওয়া হয় বাড়ির পার্শ্ববর্তী শ্মশানে। সেখানে নারায়ণের শিশু কন্যা বর্ষা দাশ, শিশু পুত্র দ্বীপ দাশ ও দিগন্ত দাশের বয়স ১০ বছরের নিচে হওয়ায় তাদের সমাধিস্থ করা হয়। আর দাহ করা হয় তার স্ত্রী রীতা রানী দাশ, বড় মেয়ে শ্রাবন্তী দাশ এবং ভাতিজা বিপ্লব দাশকে। নিহত রীতার বড় জা মল্লিকা দাশ বলেন, দ্বীপ ও দিগন্ত সারাক্ষণ মাতিয়ে রাখতো পুরো বাড়ি। কতবার নিজ হাতে তাদের খাইয়েছি, জামা–কাপড় পরিয়েছি। আহাজারি করতে করতে তিনি বলেন, আর কাকে ভাত খাইয়ে দিব, কাকে কাপড় পরিয়ে দিব। কই গেল আমার দ্বীপ, কই গেল আমার দিগন্ত।
নারায়ণের বড় ভাই বাবলা দাশের আর্তি– ঘাতক বাস চালক যেন এ ঘটনা থেকে পার না পায়। উপযুক্ত শাস্তি যেন নিশ্চিত করা হয়, এই দাবি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টদের প্রতি। নিহত চিনুর ভাবী শেলী দাশ বলেন, এই একটি ঘটনায় তিনটি পরিবার শেষ হয়ে গেছে। অদক্ষ চালকের মাধ্যমে যাতে এ ধরনের ঘটনা আর না ঘটে সেজন্য সংশ্লিষ্টদের ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান তিনি।
দুর্ঘটনার পর থেকেই জোয়ারা ইউপি চেয়ারম্যান আমিন আহমেদ চৌধুরী রোকন নিহতদের স্বজনদের পাশে থেকে সার্বিক সহযোগিতা করে যাচ্ছেন। তিনিও ঘাতক বাস চালককে দ্রুত আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে হাটহাজারী–নাজিরহাট সড়কের মির্জাপুর ইউনিয়নের চারিয়া ইজতেমা মাঠ সংলগ্ন এলাকায় দ্রুতগতির যাত্রাবাহী বাসের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষে দুমড়ে মুচড়ে যায় সিএনজি টেঙি। ওই টেঙিতে ছিল চন্দনাইশের একই পরিবারের শিশুসহ ৮ সদস্য। এরমধ্যে ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারায় ৭ জন। নিহতরা হল উপজেলার মোহাম্মদপুর ধোপাপাড়া এলাকার মৃত ভোলা দাশের ছেলে ওমান প্রবাসী নারায়ণ দাশের স্ত্রী রীতা রানী দাশ (৩৮), তার বাক প্রতিবন্ধী কন্যা শ্রাবন্তী দাশ (১৭), বর্ষা দাশ (৯), যমজ দুই পুত্র সন্তান দ্বীপ দাশ (৪) ও দিগন্ত দাশ (৪), নারায়ণের বড় ভাই প্রতিবন্ধী শম্ভুর ছেলে বিপ্লব দাশ (৩২) এবং উপজেলার সাতবাড়িয়া থেকে আসা নারায়ণের বোন মৃত সচীন্দ্র দাশের স্ত্রী চিনু দাশ (৫৫)। এ ঘটনায় গুরুতর আহত হয় নিহত চিনুর ছেলে বাপ্পা দাশ (৩২)।
ঘটনার পর নাজিরহাট হাইওয়ে পুলিশ বাসটি আটক করলেও ড্রাইভারকে এখনো আটক করা যায়নি বলে জানিয়েছে প্রশাসন। তবে তাকে আটকের সবধরনের চেষ্টা চলছে বলে জানায় থানা পুলিশ।