ভোরের আলো ফোটার আগেই ট্রাকে ট্রাকে আসতে থাকে নানারকম মাছ। ট্রাক থেকে মাছ নামানোর আগেই ভিড় করেন ক্রেতারা। এভাবে ভোর ৬টা থেকে সকাল ১০টা পর্যন্ত চলে এই বাজার। এই চার ঘণ্টায় বিক্রি হয় কোটি টাকার মাছ। ক্রেতাদের মধ্যে অধিকাংশই খুচরা মাছ ব্যবসায়ী। তাদের মাধ্যমে পাইকারি এই বাজারের মাছ চলে যায় পুরো উপজেলার সব বাজার থেকে শুরু করে গ্রামের অলিগলি এমনকি ভোক্তাদের দুয়ারে দুয়ারে। এই বাজারের অবস্থান চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার মরিয়মনগর চৌমুহনী বাজারে। ১৮–২০ বছর আগে মাত্র একটি আড়ত দিয়ে শুরু হওয়া এই বাজারে বর্তমানে ১৮টি আড়ত রয়েছে। এগুলোর মাধ্যমে প্রতিদিন ভোর বেলায় ক্রেতা–বিক্রেতাদের আগমনে চলে জমজমাট এই বাজারের বেচা–কেনা।
আড়তদারদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এই বাজারে কর্ণফুলী ও ইছামতী নদীর তাজা মাছ নিয়ে আসেন জেলেরা। এছাড়া কক্সবাজার, সাতক্ষীরা, খুলনা, কুমিল্লা, নোয়াখালী, মীরসরাই, পটিয়াসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে আসে চিংড়ি ও সামুদ্রিক মাছসহ নানা মাছ। মাছ ব্যবসায়ীরা এসব মাছ পাইকারি দামে কিনে রাঙ্গুনিয়ার বিভিন্ন গ্রামের বাজার ও পাড়ায় বিক্রি করেন। এছাড়া প্রতিদিন এসব মাছ যায় রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান ও রাঙ্গুনিয়ার পার্শ্ববর্তী উপজেলাগুলোতেও। কয়েকজন ক্রেতা–বিক্রেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আড়তটি জমে ওঠায় স্থানীয় মানুষের কর্মসংস্থান বেড়েছে। আড়ত থেকে পাইকারি দামে মাছ কিনে নারীরা বাড়ি বাড়ি ঘুরে খুচরায় বিক্রি করে থাকেন। এতে আর্থিক সচ্ছলতা এসেছে তাদের। তবে আড়তদার, ক্রেতা ও বিক্রেতাদের অভিযোগ, বাজারে দিন দিন ক্রেতা–বিক্রেতা ও আড়তদার বাড়লেও এটি চট্টগ্রাম–কাপ্তাই সড়কের পাশে হওয়ায় দুর্ঘটনার ঝুঁকি থাকে। এছাড়া বাজারের জায়গাও বাড়েনি।
সরেজমিনে দেখা যায়, বেশ ভোর থেকে শুরু হয় এই মাছের বাজার। চাহিদা বেশি থাকায় বাজারে ক্রেতাদের ভিড়ও থাকে অনেক বেশি। আশেপাশের এলাকা ছাড়াও দূর–দূরান্ত থেকে এখানে মাছ কিনতে এসেছেন অনেকেই।
মো. ফয়েজ নামের একজন বলেন, দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে প্রতিদিন কয়েক টন মাছ এ বাজারে আসে। আশেপাশের এলাকার মাছের প্রায় শতভাগ এ বাজার থেকেই পূরণ হয়। উপজেলার প্রায় বাজারগুলোতে এখান থেকেই মাছ কিনে নিয়ে বিক্রি করেন ব্যবসায়ীরা।
মাছের আড়তদার মো. কামাল হোসেন বলেন, ভোর থেকে তার আড়তের সামনের রাস্তায় মানুষের ভিড় জমে। প্রতিদিন তিনি পুকুরের জ্যান্ত মাছ, দেশি ছোট মাছ ও সামুদ্রিক মাছ মিলিয়ে ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকার মাছ বিক্রি করেন।
পৌরসভার দক্ষিণ নোয়াগাঁও এলাকার ঋণা দাশ নামের একজন ক্রেতা বলেন, সাত বছর ধরে তিনি এ আড়ত থেকে মাছ কিনে বিভিন্ন পাড়ায় বিক্রি করেন। এ বাজারে অন্যান্য বাজারের তুলনায় খরচ কম। তাতে ব্যবসা ভালো হয়।
মো. ইলিয়াস হোসেন নামে আরেকজন ক্রেতা জানান, এই বাজারে অনেক প্রজাতির মাছ একসাথে পাওয়া যায়। এছাড়া ফ্রিজে রেখে সারাদিনই চলে বেচা–কেনা। বিয়েসহ যেকোন সামাজিক অনুষ্ঠানের জন্যও এই বাজারই একমাত্র ভরসা।
মরিয়মনগর চৌমুহনী ব্যবসায়ী সমিতির সাবেক সভাপতি ও মাছের আড়তদার মো. নাজিম উদ্দিন বলেন, সড়কের পাশে বাজার হওয়ায় যানবাহনের আনাগোনা থাকলেও সড়কে মানুষের ব্যস্ততা শুরুর আগেই বাজার শেষ হয়ে যায়। তেমন একটা অসুবিধা হয় না।
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সুজাত কুমার চৌধুরী বলেন, এই বাজারের নির্ধারিত কোন জায়গা নেই। অনেকটা রাস্তার উপরই বসে। তাই স্থায়ী কোন স্যাড নির্মাণ সম্ভব নয়। তারপরও আবর্জনাসহ এই বাজারের বিভিন্ন সমস্যার ব্যাপারে ইউএনও মহোদয়কে অবহিত করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, পিরানহা মাছ এবং আফ্রিকান মাগুর, ঝাটকা ইলিশ এবং জেলিযুক্ত চিংড়ি যাতে বিক্রি করতে না পারে সেজন্য বাজারটি নিয়মিত মনিটরিং করা হয়। এছাড়া আড়তদারদের মাছের মান নিয়ন্ত্রণ দপ্তর থেকে লাইসেন্স নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। এই ব্যপারেও কঠোরভাবে দেখা হচ্ছে।