চট্টগ্রাম বন্দরের ইকুইপমেন্ট বহর সমৃদ্ধ করতে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আয়ুষ্কাল ফুরিয়ে যাওয়া ইকুইপমেন্ট পাল্টে নতুন ১০৪টি সংগ্রহ করা হচ্ছে। প্রায় ৯শ কোটি টাকা ব্যয়ে কী গ্যান্ট্রি ক্রেনসহ বিভিন্ন ধরনের ইকুইপমেন্ট আনার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এর মধ্যে এবার প্রথম ১০০ টন ধারণক্ষমতার দুটি ক্রেন কেনা হচ্ছে। বন্দরের উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর লক্ষ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম বন্দরে বর্তমানে ১৪টি কী গ্যান্ট্রি ক্রেনসহ বিভিন্ন ধরনের ইকুইপমেন্ট রয়েছে। তবে এসব যন্ত্রপাতির অনেকগুলোরই আয়ুষ্কাল ফুরিয়ে এসেছে। আবার নতুন নতুন ইয়ার্ডের জন্য প্রয়োজন নতুন ইকুইপমেন্ট। বন্দরের কন্টেনার হ্যান্ডলিং ধারণক্ষমতা বাড়ানোর সাথে সাথে ইকুইপমেন্ট বহর সমৃদ্ধ করার প্রয়োজন জোরালো হয়। অপরদিকে যন্ত্রপাতির মেয়াদ ফুরিয়ে যাওয়া কিংবা পুরনো হওয়ায় উৎপাদনশীলতায়ও প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। বন্দরে কন্টেনারের বাড়তি চাপ সামাল দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এই অবস্থায় বন্দর কর্তৃপক্ষ প্রায় ৯০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ১০৪টি ইকুইপমেন্ট কেনার প্রক্রিয়া শুরু করে। এর মধ্যে চারটি কী গ্যান্ট্রি ক্রেন, ১১টি রাবার টায়ার্ড গ্যান্ট্রি ক্রেন (আরটিজি), ২১টি ফোর-হাই স্ট্র্যাডেল ক্যারিয়ার, ৬টি টু-হাই স্ট্র্যাডেল ক্যারিয়ার, ৪টি রিচ স্টেকার (লোড), ২টি কন্টেনার মোভার, ৪টি ভেরিয়েবল রিচ ট্রাক (৪৫ টন), ২টি মোবাইল ক্রেন (১০০ টন), ২টি মোবাইল ক্রেন (৫০ টন), ২টি মোবাইল ক্রেন (৩০ টন), ১২টি মোবাইল ক্রেন (২০ টন), ২৩টি মোবাইল ক্রেন (১০টন), ২টি লগ হ্যান্ডলার-স্টেকার, ৪টি ফর্ক লিফট ট্রাক (২০ টন) ১টি ম্যাটেরিয়াল-মাল্টি হ্যান্ডলার (৩৫ টন), ২টি লো বেড ট্রেইলার ও ২টি হেভি ট্রাক্টর পাওয়ার রয়েছে।
এর মধ্যে শুধুমাত্র ৪টি কী গ্যান্ট্রি ক্রেন কেনার জন্য খরচ হবে আড়াইশ কোটি টাকার বেশি। এই চারটি গ্যান্ট্রি ক্রেন বন্দরের বহরে যুক্ত হলে নিউমুরিং কন্টেনার টার্মিনাল (এনসিটি) পুরোপুরি গ্যান্ট্রি ক্রেনের আওতায় আসবে। বন্দরে কন্টেনার হ্যান্ডলিংয়ের ক্ষেত্রে কী গ্যান্ট্রি ক্রেনই সর্বাপেক্ষা আধুনিক ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি হিসেবে বিবেচিত।
সংশ্লিষ্ট একজন প্রকৌশলী আজাদীকে জানান, বন্দরে বর্তমানে ৮৪ টন ধারণক্ষমতার ৩টি মোবাইল ক্রেন রয়েছে। এগুলো বর্তমানে বন্দরের সবচেয়ে শক্তিশালী ক্রেন। কিন্তু বন্দরে বিভিন্ন সময় এর চেয়ে বেশি ধারণক্ষমতার ক্রেনের প্রয়োজন দেখা দিচ্ছে। বিশেষ করে বিভিন্ন ধরনের প্রজেক্টের অনেক ইকুইপমেন্ট বিদেশ থেকে আনা হচ্ছে। যেগুলো জাহাজ থেকে খালাস করতে বাড়তি ধারণক্ষমতার ক্রেনের প্রয়োজন। বিষয়টি মাথায় রেখে ১০৪টি ইকুইপমেন্ট সংগ্রহ প্রকল্পে ১০০ টন ধারণক্ষমতার দুটি ক্রেন কেনা হচ্ছে।
বন্দরের একাধিক কর্মকর্তা গতকাল আজাদীকে জানান, ১০৪টি ইকুইপমেন্ট ক্রয় প্রকল্পের আওতায় শুরুতে ১০০ টন ধারণক্ষমতার ২টি মোবাইল ক্রেন কেনা হচ্ছে। এগুলো যত দ্রুত সম্ভব বন্দরের বহরে যুক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। অন্যান্য ইকুইপমেন্টও ক্রমান্বয়ে বন্দরের বহরে যুক্ত হবে। এসব ইকুইপমেন্টের অনেকগুলোর ওয়ার্ক অর্ডার দেওয়ার পরই সংশ্লিষ্ট কারখানা বানাতে শুরু করে। কী গ্যান্ট্রি ক্রেন অর্ডার দেওয়ার পর তৈরি করা হয়। এতে এক বছরের মতো সময় লাগে। আরটিজিসহ বেশ কিছু ইকুইপমেন্ট যত তাড়াতাড়ি আনা যায় তার চেষ্টা করা হচ্ছে।
বন্দর সচিব মোহাম্মদ ওমর ফারুক বলেন, প্রকল্পটি দ্রুত বাস্তবায়নের মাধ্যমে বন্দরের উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর চেষ্টা চলছে।