চার আমদানিকারকের বিরুদ্ধে মামলার অনুমতি চায় কাস্টমস

মানি লন্ডারিংয়ে সম্পৃক্ততা ।। তদন্ত চলছে আরো ২৩ চালানের

আজাদী প্রতিবেদন | সোমবার , ৭ ডিসেম্বর, ২০২০ at ৫:৫৪ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে পণ্য আমদানির আড়ালে মানি লন্ডারিংয়ের সম্পৃক্ততা পাওয়ায় চার আমদানিকারকের বিরুদ্ধে মামলা করতে চায় কাস্টমসের অ্যান্টি মানি লন্ডারিং ইউনিট। মামলার অনুমতি চেয়ে ইতোমধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) সাক্ষ্য স্মারক পাঠানো হয়েছে। এনবিআরের নির্দেশনা পেলেই মামলা করা হবে। তবে মামলার আগে ওই চার আমদানিকারকের নাম প্রকাশ করতে রাজি হননি কাস্টমস কর্মকর্তারা। এর আগে গত বছরের শেষের দিকে মানি লন্ডারিং আইনে ছয় আমদানিকারকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। দীর্ঘ বিরতির পর আবারও মানি লন্ডারিং আইনে মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আদায়ের বৃহৎ এই সংস্থাটি। এছাড়া মানি লন্ডারিং সন্দেহে আরো ২৩ চালানের প্রাথমিক তদন্ত চলমান রয়েছে বলে জানান অ্যান্টি মানি লন্ডারিং ইউনিটের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা।
কাস্টমস সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে ৫৩৬ টন স্ক্র্যাপ ঘোষণায় ২০ কন্টেনারে মূল্যহীন কনক্রিটের তৈরি ব্লক আসার বিষয় উদঘাটন করে চট্টগ্রাম কাস্টমসের অডিট ইনভেস্টিগেশন অ্যান্ড রিসার্চ (এআইআর) শাখা। কুমিল্লার বুড়িচং ময়নামতি বাজারের আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান সাকুরা স্টিল লিমিটেড স্ক্র্যাপ আমদানির ঘোষণায় রূপালী ব্যাংক লিমিটেড দিলকুশা শাখায় একটি আমদানি ঋণপত্র (এলসি) খোলে। ঋণপত্রে পণ্যের মূল্য দেখানো হয় ১ লাখ ৭১ হাজার ৫৭৪ মার্কিন ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। ওই ঋণপত্রের আওতায় ২০১৯ সালের ২১ এপ্রিল দুবাইয়ের জাবেল আলি বন্দর থেকে এমভি স্মাইলি লেডি নামে একটি জাহাজ চালান নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে আসে। ইস্পাত শিল্পের কাঁচামাল ঘোষণা দেওয়ায় বন্দর কর্তৃপক্ষ দ্রুততার সঙ্গে চালানের ২০টি কন্টেনার খালাস করে বেসরকারি কন্টেনার ডিপো সিসিটিসিএলে পাঠায়। আমদানিকারক দীর্ঘদিন ধরে চালানটি খালাস করেননি। এমনকি চালান খালাসের জন্য কাস্টমসে কোনো ডকুমেন্টও দাখিল করেননি। ২৪ নভেম্বর কন্টেনারগুলোর শতভাগ কায়িক পরীক্ষা করে দেখা যায়, ৫৩৬ টন স্ক্র্যাপের পরিবর্তে মূল্যহীন ১১৫ টন কনক্রিট ব্লক নিয়ে এসেছেন আমদানিকারক। কংক্রিটের ব্লক আমদানির মাধ্যমে আমদানিকারক বিদেশে অর্থপাচার করেছেন নাকি রপ্তানিকারকের মাধ্যমে প্রতারিত হয়েছেন সেটি খতিয়ে দেখছে কাস্টমসের অ্যান্টি মানিলন্ডারিং ইউনিট।
এর আগে ২ ফেব্রুয়ারি নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা বিসিক শিল্প এলাকার আমদানিকারক সোয়ারা ফ্যাশন মিথ্যা ঘোষণায় চীন থেকে দুই চালানে পলিয়েস্টার সুতার ঘোষণায় বালু নিয়ে আসে। সুতা আমদানির জন্য আমদানিকারক প্রায় ৫০ হাজার ডলারের ঋণপত্র খোলেন। এছাড়া গত বছরের অক্টোবরে গাজীপুরের আমদানিকারক এন জেড এক্সেসরিজ চীন থেকে ২৫ টন পলিয়েস্টার ইয়ার্ন (সুতা) আমদানির ঘোষণায় বালু-মাটির বস্তা নিয়ে আসে।
অ্যান্টি মানি লন্ডারিং ইউনিটের কর্মকর্তারা জানান, ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে মানি লন্ডারিং ঠেকানোর লক্ষ্যে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে অ্যান্টি মানি লন্ডারিং ইউনিট গড়ে তোলা হয়। তবে প্রথম বছর শাখার কার্যক্রমের গতি ধীর থাকলেও এখন গতি বৃদ্ধি পেয়েছে। এখন পর্যন্ত ছয় আমদানিকারকের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং আইনে দায়ের করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম কাস্টমসের অ্যান্টি মানি লন্ডারিং ইউনিটের দায়িত্বরত সহকারী কমিশনার মো. আমিনুল ইসলাম আজাদীকে বলেন, মানি লন্ডারিং ইউনিটের কার্যক্রম পুরোদমে এগিয়ে যাচ্ছে। চারজন আমদানিকারকের বিরুদ্ধে আমরা অনুসন্ধান চালিয়ে মানি লন্ডারিংয়ের সংশ্লিষ্টতা পেয়েছি। তাই মামলার অনুমতির জন্য নথিপত্র এনবিআরে পাঠিয়েছি। এছাড়া নতুন করে আরো ২৩টি চালান অনুসন্ধান করছি। সেখানে মানি লন্ডারিংয়ের সংশ্লিষ্টতা পেলে এনবিআরের অনুমতির জন্য নথিপত্র পাঠানো হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচট্টগ্রামসহ তিন বন্দর ব্যবহার করতে পারবে ভুটান
পরবর্তী নিবন্ধআড়াই টন জাটকা জব্দ ফিশারিঘাটে