ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে আগুন লেগে বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রার একাধিক মোটিফ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গতকাল শনিবার ভোরের দিকে লাগা আগুনে শোভাযাত্রার জন্য তৈরি করা ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতি এবং শান্তির পায়রা মোটিফ পুড়ে গেছে।
আগুন লাগার ঘটনাটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে মনে করছে পুলিশ। আর ঘটনার পেছনে ক্ষমতাচ্যুত সরকারের দোসরদের হাত রয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। ঘটনা তদন্তে একটি কমিটি করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) কর্তৃপক্ষ। কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক মোহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান খানকে আহ্বায়ক করে এই তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ বিভাগের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে। কমিটির সদস্যরা হলেন আইন অনুষদের ডিন অধ্যাপক মোহাম্মদ ইকরামুল হক, আইসিটি সেলের পরিচালক অধ্যাপক মোসাদ্দেক হোসেন কামাল এবং সহকারী প্রক্টর এ কে এম নূর আলম সিদ্দিকী। সহকারী প্রক্টর মো. ইসরাফিল কমিটির সদস্য সচিবের দায়িত্ব পালন করবেন। খবর বিডিনিউজের।
শোভাযাত্রার মোটিফে আগুন দেওয়ার ঘটনায় অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে মামলা করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) কর্তৃপক্ষ। গতকাল বিকালে শাহবাগ থানায় মামলাটি করা হয় বলে জানিয়েছেন থানার ওসি মো. খালিদ মনসুর। তিনি বলেন, ঢাবি প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি মামলা করা হয়েছে। সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যাওয়া সন্দেহভাজন যুবককে শনাক্ত করতে আমরা কাজ করছি।
দেড় মিনিটে চারুকলায় ঢুকে মোটিফে আগুন দেন এক যুবক : মোটিফে আগুন লাগার ঘটনায় সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে সন্দেহভাজন এক যুবকের কথা বলেছেন অনুষদের সহযোগী অধ্যাপক মো. ইসরাফিল রতন। তিনি বলেন, সে যুবক মাত্র দেড় মিনিটের মধ্যে দেয়াল টপকে ভেতরে প্রবেশ করে আগুন লাগিয়ে একইভাবে চলে যান। তিনি বলেন, আমরা সিসিটিভি ফুটেজে একজনকে দেখেছি। আমাদের দুই তিনটা ক্যামেরাতে ধরা পড়েছে। যার পরনে ছিল কালো রঙের টিশার্ট এবং মুখে মাস্ক ছিল। ৪টা ৪৫ মিনিট থেকে ৪টা ৪৬ মিনিট ৩২ সেকেন্ডের মধ্যে সে দেয়াল টপকে ভেতরে প্রবেশ করে আগুন দিয়ে আবার দেয়াল টপকে বের হয়ে যায়।
ফুটেজ দেখে পুরো ঘটনাটিকেই পূর্বপরিকল্পিত বলে মনে হয়েছে তুলে ধরে তিনি বলেন, ছেলেটি অনেক স্মার্ট, অর্ডিনারি কোনো পিপল মনে হয়নি। মনে হয়েছে কারও অ্যাসাইন করা ছিল।
আগের দিন শুক্রবার আয়োজন সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছিলেন, এবার শোভাযাত্রায় বড়, মাঝারি এবং ছোট মোটিফ থাকবে। এর মধ্যে বড় মোটিফ থাকবে ৬টি। সবার সামনে থাকবে ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতি। নারীর দাঁতাল এই মুখাবয়বে মাথায় রয়েছে খাড়া দুটো শিং।
কীভাবে আগুন লাগল তা তদন্ত করে জানানো হবে বলে বলেছেন চারুকলা অনুষদের ডিন আজহারুল ইসলাম।
শাহবাগ থানার ওসি মো. খালিদ মনসুর সিসিটিভি ফুটেজে একজনকে দেখা যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, সিসিটিভি ভিডিওতে দেখা যাওয়া সন্দেহভাজন যুবককে শনাক্ত করতে আমরা কাজ করছি।
পুড়িয়েছে হাসিনার দোসররা : একাধিক মোটিফ পুড়ে যাওয়ার ঘটনার পেছনে ক্ষমতাচ্যুত সরকারের দোসরদের হাত রয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। তিনি বলেছেন, চারুকলায় ফ্যাসিবাদের মুখাবয়ব পুড়িয়েছে হাসিনার দোসররা।
ফেইসবুক পোস্টে এই ঘটনায় ক্ষোভ জানিয়ে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংস্কৃতি উপদেষ্টা। ফারুকী বলেন, এই দুঃসাহস যারা দেখিয়েছে– সফট আওয়ামী লীগ হোক বা আওয়ামী বি টিম হোক– তাদের প্রত্যেককেই দ্রুত আইনের আওতায় আসতে হবে।