চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ বন্দরে জমে থাকা কন্টেনার দ্রুত খালাসে চারগুণ হারে মাশুল আদায়ের সিদ্ধান্ত বহাল রেখেছে। তবে এই সিদ্ধান্ত আমদানি–রফতানি বাণিজ্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে দাবি করেছে বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ)। সংগঠনটি মাশুল প্রত্যাহারের অনুরোধ জানালেও এখন পর্যন্ত বন্দর কর্তৃপক্ষ অনড় রয়েছে।
সূত্র জানিয়েছে, আমদানি করা পণ্য বন্দরে আটকে রেখে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে দাম বৃদ্ধির অপচেষ্টা করা হয় এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ গত ১০ মার্চ থেকে কন্টেনারের মাশুল চারগুণ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়। এতে নির্ধারিত ফ্রি টাইমের পর ২০ ফুট সাইজের কন্টেনারের জন্য প্রতিদিন ৪৮ ডলার এবং ৪০ ফুট সাইজের কন্টেনারের জন্য ৯৬ ডলার মাশুল পরিশোধ করতে হচ্ছে আমদানিকারকদের। বর্তমানে ৫৩,৫১৮ টিইইউএস ধারণক্ষমতার বন্দরে ২৯,৬৫১ টিইইউএস কন্টেনার রয়েছে, যা মার্চের শুরুতে ৪০ হাজারের কাছাকাছি ছিল। বন্দরে দ্রুত কন্টেনার খালাসের ফলে গত মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) একদিনেই ৪,৮৫৫ টিইইউএস কন্টেনার ডেলিভারি হয়েছে।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের শীর্ষ কর্মকর্তারা বলেন, মাশুল বাড়ানোর ফলে কন্টেনার খালাসের গতি বেড়েছে। প্রতিদিন অতিরিক্ত ১,০০০ কন্টেনার বন্দরের বাইরে যাচ্ছে, যা ইতিবাচক দিক। তবে মাশুল বাড়ানোর এই সিদ্ধান্তে আপত্তি জানিয়েছে তৈরি পোষাক কারখানা মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ।
বিজিএমইএ মনে করছে, অতিরিক্ত মাশুল আরোপ পোশাক রফতানি খাতের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করবে। সংগঠনটির একাধিক নেতা বলেন, অতিরিক্ত মাশুল চাপিয়ে দিলে ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে, ফলে রাজস্ব আদায়ও কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বিজিএমইএ বন্দরের চেয়ারম্যানের কাছে চিঠি দিয়ে কন্টেনারের চারগুণ মাশুল আদায়ের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে। সংগঠনটির দাবি, কাস্টমসের বিভিন্ন জটিলতায় এফসিএল কন্টেনার বন্দরে আটকে পড়ছে, যা ব্যবসায়ীদের জন্য আর্থিক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু বন্দর কর্তৃপক্ষ নিজেদের সিদ্ধান্ত বহাল রেখে জানিয়েছে, শুক্র–শনিবারসহ সরকারি ছুটির দিনগুলোতেও চাল, ডাল, চিনি, ছোলার মতো ভোগ্যপণ্যের ডেলিভারি চালু রাখা হবে। তবে বর্ধিত মাশুল এখনই প্রত্যাহার করা হবে না।
বিজিএমইএর নেতারা বলেন, হঠাৎ এই সিদ্ধান্ত ব্যবসায়ীদের জন্য বড় ধাক্কা। চারগুণ মাশুল বৃদ্ধির ফলে আমদানি ও রফতানির খরচ ব্যাপকভাবে বেড়ে যাবে, যা পণ্যের দামের ওপরও প্রভাব ফেলবে। গার্মেন্টস শিল্পের উদ্যোক্তারা বলছেন, ঈদের ছুটিতে কারখানা বন্ধ থাকার কারণে পোশাক রফতানির জন্য আগেভাগে অফডকের পাশাপাশি বন্দরে পণ্য মজুত করতে হয়। একইভাবে আমদানি করা কাঁচামালও গুদামে না এনে বন্দরের শেডে রাখা হয়। ফলে মাশুল বৃদ্ধির কারণে পোশাক খাত বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে। বন্দর কর্তৃপক্ষ তাদের অবস্থান বজায় রাখলেও বিজিএমইএ এবং অন্যান্য ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছে।
বন্দর সচিব মোহাম্মাদ ওমর ফারুক জানান, বন্দরের স্বাভাবিক কার্যক্রম ধরে রাখা এবং উৎপাদনশীলতা অব্যাহত রাখতে মূলত মাশুল বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। আমদানিকারকেরা নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই পণ্য খালাস করে নিলে সবারই সুবিধা বলেও তিনি মন্তব্য করেন।