চায়না ইকোনমিক জোনের ভবিষ্যৎ কোন পথে ?

এম নুরুল ইসলাম, আনোয়ারা | শুক্রবার , ১৯ জানুয়ারি, ২০২৪ at ৫:১৫ পূর্বাহ্ণ

২০১৬ সালে একই সময়ে বঙ্গবন্ধু টানেল ও চায়না ইকোনমিক জোন প্রকল্প দুটির উদ্বোধন হলেও বাস্তবতার চিত্র সম্পূর্ণ উল্টো। নদীর তলদেশ ফুঁড়ে টানেল হয়ে গাড়ি চললেও প্রস্তাবিত ইকোনমিক জোন এলাকা এখনো ধু ধু শুকনো মাঠ। ৮ জন নিরাপত্তাকর্মী, ক্লিনার মিলিয়ে ১০ জনের একটি টিম একতলা ছোট একটি অফিস পাহারা দিলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। কবে কাজ হবে তার কোনো তথ্যও নেই সংশ্লিষ্টদের কাছে।

প্রথমদিকে চায়না ইকোনমিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল জোন (সিইআইজেড) প্রকল্পের উন্নয়ন কাজের জন্য চীন সরকার চায়না হারবার ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানিকে দায়িত্ব দেয়। প্রায় ৬ বছর পর এসে গত বছর আগস্টে চীন সরকারের মনোনীত আরেক ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান চায়না রোড অ্যান্ড ব্রিজ কর্পোরেশনকে (সিআরবিসি) দায়িত্ব দেওয়া হয়। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে একনেকের সভায় এই অনুমোদন দেয়া হয়েছিল। এরপর বেজার চেয়ারম্যান আনোয়ারায় প্রকল্প এলাকা সরেজমিনে পরিদর্শন করে প্রকল্পের অগ্রগতি নিয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেন এবং প্রকল্পের মাস্টারপ্ল্যান দ্রুত জমা দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন। কিন্তু এরপরও প্রকল্পের তেমন কোনো অগ্রগতি হয়নি।

যদিওবা বঙ্গবন্ধু টানেল চালুর পর কর্ণফুলীর দক্ষিণ তীরে বিকাশমান শিল্প সম্ভাবনায় এই প্রকল্পটিই সবচেয়ে বেশি লাভবান হওয়ার কথা। কোরিয়ান এঙপোর্ট প্রসেসিং জোনের (কেইপিজেড) পর চায়না ইকোনমিক জোনের মাধ্যমে আনোয়ারায় শিল্প সম্ভাবনার নতুন দিগন্তের আশা ছিল। আনোয়ারা উপজেলার টানেল সংযোগ সড়কের পাশেই ৭৮৪ একর জমিতে জিটুজি (দু’দেশের সরকারি পর্যায়) ভিত্তিতে এই অর্থনৈতিক অঞ্চল হওয়ার কথা।

সংশ্লিষ্টরা জানান, মূলত ঠিকাদার জটিলতার কারণেই থেমে আছে এই প্রকল্পের কাজ। চুক্তির প্রথম তিন বছরে প্রকল্প এলাকার ২শ একর পাহাড়ি টিলা সমান করা হয়। পিএবি প্রধান সড়ক কালাবিবি দীঘি থেকে অর্থনৈতিক অঞ্চল পর্যন্ত এক কিলোমিটার অংশ ৪০ ফুট প্রশস্ত করে ইট বিছানো হয়। বৈরাগ থেকে ইকোনমিক জোন পর্যন্ত চার লেনের এক কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ হয়। এছাড়া প্রকল্পের বৈরাগ অংশে প্রায় এক কিলোমিটার সীমানা প্রাচীর নির্মাণ হয়। গত ৭ বছরে ইকোনমিক জোনের কাজ এটুকুই। কোভিড পরিস্থিতিতে প্রকল্পের কাজ এক রকম বন্ধ হয়ে যায়।

ইকোনমিক জোন প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ৩শ’ ৭১টি শিল্পকারখানায় ৫৩ হাজার ৪২০ জন লোকের কর্মসংস্থানের পথ সুগম হবে বলে আশা প্রকাশ করেছিলেন সংশ্লিষ্টরা। অবকাঠামো নির্মাণে সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছিল ৪শ ২০ কোটি ৩৭ লাখ টাকা।

আনোয়ারা উপজেলা চেয়ারম্যান তৌহিদুল হক চৌধুরী আজাদীকে বলেন, বঙ্গবন্ধু টানেল আনোয়ারাকে বদলে দিয়েছে। ৬ লেনের টানেল সংযোগ সড়ক হয়েছে। চায়না ইকোনমিক জোন বাস্তবায়িত হলে বিপুল কর্মসংস্থানসহ শিল্পোন্নয়নে ব্যাপক সুযোগ তৈরি হতো। কিন্তু দীর্ঘ সময়ে এই প্রকল্পে তেমন অগ্রগতি নেই।

ইকোনমিক জোন প্রকল্পে এডমিন সুপারভাইজর হিসাবে কাজ করছেন মোহাম্মদ ফিরোজ। তিনি বলেন, তার কাছেও প্রকল্পের ভবিষ্যত ও অগ্রগতির হালনাগাদ তথ্য নেই। সবকিছু নির্ভর করছে চীনা প্রতিষ্ঠানের উপর।

২০১৪ সালের জুনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চীন সফরকালে চীনা সরকার বাংলাদেশের চট্টগ্রামে একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল ও শিল্পাঞ্চল স্থাপনের আগ্রহ ব্যক্ত করে। ওই সফরে দুই দেশের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। এর দুই বছর পর চীনা প্রেসিডেন্ট শি চিন পিং ঢাকা সফরে এলে অর্থনৈতিক অঞ্চলের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়।

এ সময় ঠিক হয় অর্থনৈতিক অঞ্চলটির অবকাঠামো উন্নয়নে কাজ করবে চায়না হারবার ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেড। কিন্তু দীর্ঘ সময়েও বেজার সঙ্গে চায়না হারবারের কোনো চূড়ান্ত চুক্তি না হওয়ায় অর্থনৈতিক অঞ্চলটির কোনো কাজ হয়নি। এমন পরিস্থিতিতে দীর্ঘ ছয় বছর পর ২০২২ সালের ১১ আগস্ট চীনা অর্থনৈতিক অঞ্চলটি স্থাপনে চায়না রোড অ্যান্ড ব্রিজ করপোরেশনের সঙ্গে চুক্তি করে বেজা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকোভিডের উপধরন জেএন.১ ছড়াচ্ছে বাংলাদেশেও
পরবর্তী নিবন্ধসাবেক কাউন্সিলর মানিক দম্পতির বিরুদ্ধে দুদকের চার্জশিট