চামড়া শিল্পের প্রসারে বিনিয়োগ ও পৃষ্ঠপোষকতা বাড়াতে হবে

| মঙ্গলবার , ২৭ জুলাই, ২০২১ at ১০:৩৬ পূর্বাহ্ণ

ঈদুল আজহা উপলক্ষে প্রতিবছর কোরবানির পশুর চামড়া বিক্রি নিয়ে সমস্যা তৈরি হয়। এবারও তার ব্যত্যয় ঘটেনি। দৈনিক আজাদী রিপোর্ট করলো ‘চামড়ায় এবারও ধস’। এ কথা আজ বলার অপেক্ষা রাখে না যে করোনাকালেও কোরবানির দাতার সংখ্যা আমাদের দেশে তেমন কমেনি। কোরবানি দাতারা পশুর চামড়া বিক্রি করে তা দান করে দেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তাঁরা ভালো ও যথাযথ দাম পান না। তাঁরাও তেমন উৎকণ্ঠায় থাকেন না। কিন্তু যাঁরা ব্যবসা করেন, তাঁরা চান এ ব্যবসার সমৃদ্ধি। এবার তাঁরা ভালো করতে পারেন নি। আজাদীতে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঢাকায় কোরবানির গরুর প্রতি পিস চামড়া গুণগতমান ও আকৃতিভেদে ৬০০ টাকা থেকে ৭০০ টাকায়, অধিকতর ভালো হলে ৯০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে। কিন্তু চট্টগ্রামে একই চামড়া আড়তে বিক্রি হয়েছে ২৫০ টাকা থেকে ৩০০ টাকায়। সর্বোচ্চ ৪০০ টাকায়। তবে, চট্টগ্রামে এবারও কোরবানিদাতারা চামড়ার দাম পাননি। অনেক এলাকায় চামড়া কিনতে কেউ আসেননি। কেউ কেউ ৫০-১০০ টাকায় বিক্রি করেছেন। বেশিরভাগ লোক মাদ্রাসায় দিয়েছেন। দামে ধসের পেছনে সিন্ডিকেটের কারসাজি দেখছেন কোরবানিদাতারা। আড়তদাররা তাদের নির্ধারিত দামে চামড়া কিনেছেন। ফলে মৌসুমি ব্যবসায়ীরা মোটামুটি চামড়ার দাম পেয়েছেন। চট্টগ্রামে এবার সংগ্রহ হয়েছে ৩ লাখ পিসের বেশি কাঁচা চামড়া। এছাড়া চামড়া সংক্রান্ত বিষয় তদারকি করতে কমিটি করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। আড়তদারদের দাবি, গত তিন বছর ধরে চামড়া ব্যবসায় মন্দাভাব যাচ্ছে। অন্যান্য ব্যবসায় মন্দাভাব কাটিয়ে ওঠার চিত্র দেখা গেলেও চামড়া শিল্পের সংকট কাটছে না। গত কয়েক বছর ধরে কোরবানির পশুর চামড়া সংগ্রহে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা যাচ্ছে না। বৃহত্তর চট্টগ্রামে বিভিন্ন এলাকা থেকে মৌসুমি ব্যবসায়ী, বিভিন্ন মাদ্রাসা ও এতিমখানার সংগৃহীত চামড়া ট্রাকে করে নিয়ে আসে আড়তদারদের কাছে।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, ভবিষ্যতে এ ধরনের বিপর্যয় এড়িয়ে চামড়া শিল্পকে বাঁচাতে সরকারি তৎপরতা বৃদ্ধির পাশাপাশি এগিয়ে আসতে হবে বেসরকারি উদ্যোক্তা ও প্রতিষ্ঠানগুলোকেও। অপ্রতুল বিনিয়োগ ও পৃষ্ঠপোষকতার অভাব এ-শিল্প বিকাশের অন্যতম প্রতিবন্ধক। চামড়া খাতের উন্নয়নকল্পে সরকারি বরাদ্দ বাড়ানোসহ সহজ শর্তে ঋণ প্রদান ও শুল্কমুক্ত বাণিজ্য সুবিধা নিশ্চিত করা গেলে চামড়া খাতের উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে বলে দাবি সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের। এখানে বেসরকারি বিনিয়োগের অনীহা দূরীকরণে সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি চামড়া ব্যবসায় জড়িত সকলের সদিচ্ছা প্রয়োজন। সকল ধরনের বিনিয়োগ উপযোগিতা বাড়ানোর জন্য চামড়া শিল্পকে বহুমুখী করে গড়ে তুলতে হবে।
পত্রিকান্তরে প্রকাশিত তথ্যে জানা গেছে, ১৫-১৬ অর্থবছরের পর থেকে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি থেকে আয় ক্রমাগত কমেছে। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে এ খাতে আয় হয়েছিল ১১৩ কোটি ডলার, পরের বছর তা বেড়ে হয়েছিল ১১৬ কোটি। এ খাতে বাংলাদেশের এ যাবৎ সর্বোচ্চ আয়। কিন্তু পরের বছর থেকে রপ্তানি এবং আয় কেবল কমেছে। নামতে নামতে এর পরিমাণ ৭৯ কোটি ডলারে নেমেছে। তবে গত বছরের চেয়ে এ বছর রপ্তানি আয় বেড়েছে। যদিও চামড়া বর্তমানে তৈরি পোশাক শিল্পের পর প্রধান বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জনকারী ও রপ্তানিযোগ্য পণ্য হিসেবে গণ্য। বৈশ্বিক ও অভ্যন্তরীণ নানান প্রতিকূলতার মধ্যেও গত ১৯-২০ অর্থবছরে পোশাকশিল্পের পরে সর্বোচ্চ ১০১ কোটি ৯৭ লাখ ডলারের রপ্তানি আয়ের মাধ্যমে চামড়া শিল্প রপ্তানি আয়ে দ্বিতীয় অবস্থান ধরে রেখেছে। চামড়া খাত থেকে ২০২১ সালের মধ্যে ৫ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি আয়ের সরকারি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
তাঁরা বলেন, দেশীয় অর্থনীতিতে বৈচিত্র্য আনয়নকল্পে বিকল্প খাত হিসেবে চামড়া শিল্প নজরদারি পাওয়ার ক্ষেত্রে অধিক দাবিদার। চামড়া শিল্পের বিকাশ বাংলাদেশের অর্থনীতিতে সম্ভাবনার নতুন দ্বার উন্মোচন করতে সক্ষম, অধিক সমন্বয় ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা এ সম্ভাবনাময় খাতটিকে দেশের অর্থনীতির দুঃসময়ের কান্ডারি করে তুলবে।
মোট কথা, বাংলাদেশের এই সম্ভাবনাময় খাত নিয়ে চিন্তাভাবনা করা দরকার। সরকারের ঊর্ধ্বতন মহল থেকে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করলে এ শিল্প আরো অগ্রসর হবে। কোরবানির সময় যে নৈরাজ্য সৃষ্টি হয়, তার কারণ বের করে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে। সম্ভাবনার এ খাতকে অবশ্যই সমৃদ্ধ করতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে