চামড়া বিক্রির ২০ কোটি টাকা দেয়নি ঢাকার ট্যানারিগুলো

আজাদী প্রতিবেদন | শুক্রবার , ৯ জুলাই, ২০২১ at ৬:৪৯ পূর্বাহ্ণ

পর্যাপ্ত পশু কোরবানির চামড়ার ন্যায্য দাম নিয়ে এবারও শঙ্কায় আছেন চট্টগ্রামের ২ শতাধিক কাঁচা চামড়া আড়তদার-ব্যবসায়ী।
কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ীদের মতে- ২০১৯ সালে চট্টগ্রামে প্রায় সাড়ে পাঁচ থেকে ৬ লাখ গরু-ছাগল কোরাবানি দেয়া হয়েছে। কিন্তু গত বছর করোনায় সেটা কমে ৫ লাখে নেমে এসেছে বলে জানান কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ীরা। এবারও করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় দুই সপ্তাহের কঠোর লকডাউন শেষে মাত্র ৬ দিনের জন্য পশুর হাট বসতে পারবে। এই ৬দিনের মধ্যে সারাদেশ থেকে গরু আসতে পারবে না কিনা তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। একই সাথে করোনার এই কঠিন পরিস্থিতিতে কাঁচা চামড়ার দাম নিয়েও শঙ্কা প্রকাশ করেছেন চট্টগ্রাম কাঁচা চামড়া আড়তদার ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির নেতারা। সবচেয়ে বড়ো কথা হল-চট্টগ্রামে ট্যানারির অভাবে ব্যবসায় ধস নামায় চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা ঢাকামুখী হতে বাধ্য হচ্ছেন। ঢাকার ব্যবসায়ীদের কাছে আগের ২০ কোটি টাকা এখনো পাওনা রয়েছেন চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা। এ ব্যাপারে বৃহত্তর চট্টগ্রাম কাঁচা চামড়া আড়তদার ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সভাপতি মোসলিম উদ্দিন আজাদীকে জানান, করোনার আগে ২০১৮-২০১৯ সালে চট্টগ্রাম কাঁচা চামড়া আড়তদার ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির ১১২ জন সদস্য সহ ২ শতাধিক ব্যবসায়ী প্রায় সাড়ে ৫ লাখ থেকে ৬ লাখের মতো কাঁচা চামড়া সংগ্রহ করতাম কোরবানি ঈদে। কিন্তু গত বছর প্রায় ৫ লাখ চামড়া সংগ্রহ করেছি। এবার ৩ লাখের বেশি হবে না। লকডাউনে কাঁচা চামড়ায় লবণ দেয়ার শ্রমিকও পাওয়া যাবে না। ঢাকার ওয়ারী, কুমিল্লা, কক্সবাজার থেকে শ্রমিকরা আসেন চট্টগ্রামে। গতবারও চামড়ার ভালো দাম পায়নি। করোনায় এবারও দাম নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি।
তিনি বলেন, ‘রিফ লেদার ও মদিনা ট্যানারির কাছে চামড়া বিক্রি করলে নগদ টাকা পাওয়া যায়। কিন্তু ঢাকার ট্যানারি মালিকদের কাছে বিক্রি করলে টাকা বাকি থেকে যায়। টাকা পেতে পেতে আরেক কোরবান এসে যায়। কয়েক বছর ধরে লোকসান দিতে দিতে পুঁজি হারিয়েছি। কোরবানে ধার করে টাকা নিয়ে চামড়া ক্রয় করি, বিক্রয় করি বাকিতে। চট্টগ্রামে একমাত্র রিফ লেদারের ইটিপি আছে। গত বছর প্রতিষ্ঠানটি ৬০-৭০ হাজার পিস চামড়া কিনেছিল। এছাড়া সারা বছরই প্রতিষ্ঠানটি চামড়া কিনে। ফলে এ বছর কোরবানির কী পরিমাণ চামড়া কিনবে তা নির্ধারণ করতে পারেনি প্রতিষ্ঠানটি।
এছাড়া মদিনা ট্যানারি চালু থাকাকালে তারা ২০ শতাংশ চামড়া ক্রয় করতেন। বাকি চামড়াগুলো কোরবানির ১০-১৫ দিন পর ঢাকার ট্যানারি মালিকরা কিনে নিয়ে যান।
মোসলেম উদ্দিন জানান, ঢাকার ট্যানারি মালিকদের শর্ত মেনে অধিকাংশ চামড়াই বাকিতে বিক্রি করতে বাধ্য হতে হয়। ঢাকার ট্যানারিগুলো থেকে গত কয়েক বছরের চামড়া বিক্রির এখনো ২০ কোটি পাওনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা।
জানা যায়, চট্টগ্রামে চামড়া শিল্পের শুরু ১৯৪৮ সালে। লাভজনক থাকায় কালুরঘাট শিল্প এলাকাকে কেন্দ্র করে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত ধীরে ধীরে এখানে গড়ে ওঠে ১৬টি ট্যানারি। স্বাধীনতার পর গড়ে ওঠে আরও পাঁচটি। কিন্তু অনভিজ্ঞতা, পরিবেশ আইন না মানা, অব্যবস্থাপনা, গ্যাস ও বিদ্যুৎ সঙ্কট আর সরকারের পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে ক্রমে বন্ধ হতে থাকে এসব ট্যানারি। ইটিপি না থাকায় কয়েক বছর ধরে বন্ধ আছে মদিনা ট্যানারিও। চালু আছে একমাত্র রিফ রেদার লিমিটেড।
মদিনা ও রিফ লেদার ছাড়া স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে যাওয়া চট্টগ্রামের উল্লেখযোগ্য ট্যানারিগুলো হলো- তিতাস, রওশন, কর্ণফুলী, মন্টি, জামান রহমান, এইচআরসি, ওরিয়েন্ট, মেঘনা, ডোরা, সিকো লেদার, জুবিলী ট্যানারি, খাজা, এশিয়া, মেট্রোপলিটন ও চিটাগাং ট্যানারি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচট্টগ্রামে সর্বোচ্চ ৭১৩ শনাক্ত, মৃত্যু ৯
পরবর্তী নিবন্ধচুনতিতে বাঁশ বোঝাই ট্রাক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পুকুরে