চামড়া, বাসাবাড়ি ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে অগ্রাধিকার

ঈদে নগরের নিরাপত্তা পুলিশের অতিরিক্ত ফোর্স, নিয়ন্ত্রণ কক্ষ, থাকছে র‌্যাবও

ঋত্বিক নয়ন | মঙ্গলবার , ২৭ জুন, ২০২৩ at ৯:০১ পূর্বাহ্ণ

বরাবরের মতো এবারও জনবল সংকট মাথায় রেখেই নগরীর নিরাপত্তা ব্যবস্থা সাজাতে হচ্ছে সিএমপিকে। কোরবানির ঈদের পর চামড়া ছিনতাই, চাঁদাবাজি এবং বাসাবাড়ি ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে চুরিডাকাতি ঠেকানোকেই পুলিশের প্রধান চ্যালেঞ্জ হিসেবে ধরা হয়। নগর পুলিশের নিরাপত্তা পরিকল্পনায় এবারও বিষয়গুলোকেই সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। এ প্রসঙ্গে নগর পুলিশ কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায় বলেন, আমরা জনগণকে আশ্বস্থ করতে চাই, আমাদের পুলিশ বাহিনী ২৪ ঘণ্টা সেবা দিতে প্রস্তুত। তারা নগরজুড়ে চষে বেড়াবে। যে কোনো ধরনের সন্ত্রাসের তথ্য দিয়ে আমাদের সহযোগিতা করতে নগরবাসীর প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।

কোরবানির চামড়া পরিবহন নির্বিঘ্ন করতে সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থায় থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুলিশ। এক্ষেত্রে সকল থানার ওসি, ফাঁড়ির ইনচার্জদের এ বিষয়ে সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন সিএমপি কমিশনার। তিনি বলেন, চামড়া বিক্রি এবং পরিবহনের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিকারীদের কঠোরভাবে প্রতিহত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সিএমপি।

সিএমপি এবার ঈদের ১২ দিনব্যাপী নিরাপত্তা কর্মসূচি হিসেবে ফোর্স মোতায়েনসহ আনুষঙ্গিক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন শুরু করেছে। গরুর বাজার, ঈদুল আজহা, চামড়া ক্রয়বিক্রয় এবং বিনোদনকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে চলমান নিরাপত্তা কর্মসূচিতে। এ ক’দিন অতিরিক্ত এক হাজার ৯ জন পুলিশ ফোর্স নগরীতে মোতায়েন রয়েছে।

নগর পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গবাদি পশুর বিভিন্ন হাটে ২১০ জন পোশাকধারী এবং ১৯ জন সাদা পোশাকধারী অতিরিক্ত পুলিশ ফোর্স মোতায়েন হয়েছে। ঈদের দিন সকালে তাদের হাট থেকে প্রত্যাহার করে ঈদ জামাত এবং চামড়া কেনাবেচার স্থানে নিয়ে যাওয়া হবে।

ঘরমুখো মানুষের নিরাপত্তায় রেলস্টেশন, বাসস্টেশন এবং বিপণী বিতানসহ গুরুত্বপূর্ণ স্পটের সামনে ১০৪ জন পোশাকধারী অতিরিক্ত পুলিশ ফোর্স মোতায়েন করা হয়েছে। ফাঁকা নগরীতে চুরিডাকাতি, ছিনতাই রোধে এবং ঈদের ছুটি শেষে ফিরতি লোকজনের নিরাপত্তায় এই ফোর্স থাকবে।

ঈদের দিন ভোর থেকে পরবর্তী দুদিন চামড়া কেনাবেচার স্থানে মোতায়েন থাকবে ২৮০ জন পোশাকধারী পুলিশ। এর বাইরে নগর গোয়েন্দা পুলিশের একাধিক টিমও টহল দেবে। র‌্যাবের একাধিক টিমও থাকবে।

নগরীর আকবর শাহ থানার ওসি ওয়ালী উদ্দীন আকবর আজাদীকে বলেন, চামড়া ছিনতাই প্রতিরোধের পাশাপাশি বিভিন্ন আবাসিক এলাকা ও বাণিজ্যিক এলাকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কর্মপরিকল্পনা তৈরি করা হয়েছে। ইতোমধ্যে সেভাবে কাজ চলছে।

পতেঙ্গা থানার ওসি আফতাব হোসেন আজাদীকে জানান, ঈদুল আজহা উপলক্ষে নগরীতে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি)। তারই অংশ হিসেবে তার থানা এলাকায় অলিগলিতে বাড়ানো হয়েছে পুলিশের নিয়মিত টহল।

কোতোয়ালী থানার ওসি জাহিদুল কবীর আজাদীকে জানান, বিভিন্ন আবাসিক এলাকার তালিকা করে সংশ্লিষ্ট সমিতির কর্মকর্তাদের পুলিশের নম্বর দেয়া হয়েছে। চুরিডাকাতি প্রতিরোধে যেকোনো সময় তাদের পুলিশের সহযোগিতা চাওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। একইভাবে ব্যাংকের শাখার তালিকা করে তাদের নিজস্ব নিরাপত্তা কর্মীর সঙ্গে পুলিশ সমন্বয় করে দায়িত্ব পালন করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

নগর পুলিশের হিসেব মতে, চট্টগ্রামে সর্বাধিক ৭৪টি আবাসিক এলাকা আছে বায়েজিদ বোস্তামী থানা এলাকায়। এছাড়া আকবর শাহ থানায় ২৩টি, খুলশী থানায় ২২টি, পাঁচলাইশে ১৭টি, ডবলমুরিংয়ে ১৫, চকবাজারে আটটি, পতেঙ্গা, চান্দগাঁও ও পাহাড়তলীতে সাতটি করে, হালিশহরে পাঁচটি, বাকলিয়া, কর্ণফুলী, ইপিজেড ও সদরঘাট থানায় চারটি, বন্দর থানায় তিনটি ও কোতোয়ালী থানায় একটি করে আবাসিক এলাকা রয়েছে। এসব আবাসিক এলাকার বিভিন্ন কমিটির নেতৃবৃন্দের সাথে বৈঠক করে নির্ধারণ করা হচ্ছে নিরাপত্তা ব্যবস্থা।

ঈদের ছুটিতে নগরীর নিরাপত্তা জোরদারে থানা পুলিশের বাইরে অতিরিক্ত পুলিশ ফোর্স মোতায়েন থাকবে। এছাড়া নগরীর গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা (কেপিআই) ও বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে নজরদারির পাশাপাশি নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।

নগরীর বিনোদন স্পটসহ দর্শনীয় স্থানগুলোতে যেখানে লোক সমাগম বেশি হয় সেখানে ঈদের দিন ২৯ জুন সকাল থেকে ৪ জুলাই রাত পর্যন্ত মোতায়েন থাকবে পোশাকধারী ৫৩ জন এবং সাদা পোশাকধারী ৮ জন পুলিশ সদস্য। ৬৩ জন পোশাকধারী পুলিশ সদস্যকে স্ট্যান্ডবাই ডিউটিতে রাখা হবে। তারা ঈদের নিরাপত্তায় সিএমপির তৈরি নিয়ন্ত্রণ কক্ষের অধীনে থাকবেন। নিয়ন্ত্রণ কক্ষ পরিচালনায় থাকবে ৬ জনের একটি টিম।

স্পর্শকাতর ৩০টি পয়েন্টে ১০৫টি দলে বিভক্ত হয়ে মাঠে থাকছে নিয়মিত প্রায় তিন হাজারের পাশাপাশি এক হাজার নয়জন অতিরিক্ত পুলিশ সদস্য। সার্বিক নিরাপত্তা পর্যবেক্ষণে পুলিশ কমিশনারের কার্যালয়ে খোলা হয়েছে একটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষও। নগরীর প্রত্যেকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান, অফিসপাড়া ও অভিজাত আবাসিক এলাকার নিরাপত্তায় গোয়েন্দা নজরদারির পাশাপাশি গড়ে তোলা হয়েছে তিন স্তরের নিরাপত্তা বলয়। এছাড়া ৫৬টি ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরায় নিরাপত্তা পরিস্থিতি মনিটর করা হবে নগরীর স্পর্শকাতর ১৭টি ক্রাইম স্পট।

অন্যদিকে বাড়তি নিরাপত্তায় নিয়োজিত থাকবেন ৩৫০ সদস্যের র‌্যাবের একাধিক দল এবং সোয়াত, এপিবিএনের সদস্যরাও। ব্যাংকগুলোকে সিসিটিভি ২৪ ঘণ্টা সচল রাখতে বলা হয়েছে। প্রত্যেক শাখায় একজন অফিসারকে সার্বক্ষণিক মনিটরিংয়ের দায়িত্ব দেয়ার জন্য বলা হয়েছে। ব্যাংকগুলো নিজেরাই যেন তাদের নিরাপত্তায় বেশি সতর্ক থাকে সেটা বলা হয়েছে।

এ সময় সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মধ্যে থাকে ব্যাংকবীমার মতো আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো। আর আবাসিক এলাকাগুলোতে গ্রিলকাটা চোর এবং ছিনতাইকারীদের দৌরাত্ম্য বেড়ে যায়। এ অবস্থায় কমিউনিটি পুলিশের ওপর ভরসা করতে হচ্ছে পুলিশ প্রশাসনকে। নগরীতে ৫৫টি সরকারিবেসরকারি ব্যাংকের ৫শর বেশি শাখা রয়েছে এবং জুয়েলারি দোকানের সংখ্যা আড়াই হাজারের বেশি।

আতুরার ডিপোতে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পেলে জরুরি ভিত্তিতে র‌্যাব সদস্যরা সেখানে যাবেন। অন্যথায় র‌্যাব নগরীর অলিগলিতে যেসব স্থানে খুচরা চামড়া বিক্রি হয় সেখানে টহল দেবে, যাতে চামড়া নিয়ে ছিনতাই, চাঁদাবাজি না হয়। এছাড়া ঈদের ছুটির পুরো সময় নগরীর ব্যাংকপাড়া, মার্কেট, আবাসিক এলাকায় সতর্ক দৃষ্টি রাখবেন র‌্যাবের সদস্যরা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধএমপি হতে চান আ. লীগের ২৯ জন ভাগ্য নির্ধারণ ৩ জুলাই
পরবর্তী নিবন্ধরাজনৈতিক কর্মী ও সন্ত্রাসী গুলিয়ে ফেলেছেন বিএনপি নেতারা : তথ্যমন্ত্রী