ধর্ষণের বিরুদ্ধে যখন বিক্ষোভে উত্তাল সারাদেশ। এরই মধ্যে আরও একটি গণধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। রাতে রাঙ্গুনিয়া গ্রামের বাড়ি থেকে শহরের বাসায় আসার পথে ৮/১০ জনের একটি দল এক নারীকে রিকশা থেকে নামিয়ে পালাক্রমে ধর্ষণ করেছে। প্রায় আড়াই ঘণ্টা পর ধর্ষকদের কবল থেকে মুক্ত হয়ে সেই ধর্ষিতা নিজেই হাসপাতালে আসেন। বর্তমানে আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। এ ঘটনায় পুলিশ এক নারীসহ আট জনকে গ্রেপ্তার করেছে। গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত আনুমানিক পৌণে ১২টা থেকে পরবর্তী তিন ঘণ্টার মধ্যে বা তারও পরে নগরীর চান্দগাঁও থানাধীন কাপ্তাই রাস্তার মাথা এলাকায় এই গণধর্ষণের ঘটনাটি ঘটে। পরদিন গতকাল শুক্রবার বিকাল সাড়ে ৫টায় সিএমপি উপ কমিশনার (উত্তর) বিজয় বসাক তার কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ভোর সাড়ে ৪টার দিকে চমেক (চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ) হাসপাতাল ওসিসি ওয়ার্ড থেকে ধর্ষণের শিকার ওই নারীর খবরটি পুলিশ পায়। পরে তাৎক্ষণিক অভিযান চালিয়ে ঘটনার সাথে জড়িত এক নারীসহ আটজনকে আটক করা হয়। এ ঘটনায় চান্দগাঁও থানায় একটি মামলা হয়েছে।
তিনি বলেন, তদন্তে ধর্ষণের ঘটনার সাথে যদি আর কারো সম্পৃক্ততা পাওয়া যায় তবে তাদেরকেও দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হবে। পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার আসামিদের অনেকেই সিএনজি চালক বলে জানান তিনি।
এ ঘটনায় জাহাঙ্গীর আলম (৩৮), ইউসুফ (৩২), মো. রিপন (২৭), মো. সুজন (২৪), দেবু বড়ুয়া (৩১), মো. শাহেদ (২৪), রিন্টু দত্ত প্রকাশ বিপ্লব (৩০) ও মনোয়ারা বেগম প্রকাশ লেবুর মা (৫৫) নামে এক নারীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে চারজন সিএনজি চালক ও একজন দোকানদার রয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে সিএমপি উপ কমিশনার (উত্তর) বিজয় বসাক আরও জানান, রাঙ্গুনিয়া গ্রামের বাড়ি থেকে নগরীর চকবাজার এলাকায় বাসায় যাওয়ার সময় কাপ্তাই রাস্তার মাথা এলাকায় এই গণধর্ষণের ঘটনাটি ঘটেছে। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা চান্দগাঁও থানার পরিদর্শক (তদন্ত) রাজেস বড়ুয়া আজাদীকে বলেন, রাঙ্গুনিয়া গ্রামের বাড়ি থেকে কোনো কারণে ওই নারী শহরে আসতে দেরি করেন। রাঙ্গুনিয়া থেকে রাত ১০ টায় সিএনজি টেক্সিতে ওঠার পর শহরে আনুমানিক পৌণে ১২টায় কাপ্তাই রাস্তার মাথা মোড়ে ওই মহিলা সিএনজি থেকে নামেন। সেখান থেকে চকবাজার গণি কলোনির বাসায় যাওয়ার জন্য একটি রিকশা খুঁজতে থাকেন। এসময় ভিকটিম চকবাজারে তার এক পূর্বপরিচিত লোককে ফোন করে কাপ্তাই রাস্তার মাথা থেকে তাকে নিয়ে যেতে বলেন। কোনো কারণে সেখানে জাহাঙ্গীর নামে পূর্ব পরিচিত এক ব্যক্তি তাকে দেখে ফেলেন। তাৎক্ষণিক জাহাঙ্গীর কু-মতলব নিয়ে তার বন্ধুদের ফোন করে ডেকে আনে। এক পর্যায়ে ওই মহিলা রিকশায় যাওয়ার সময় তার গতিরোধ করে আসামিরা। পরে রিকশা থেকে নামিয়ে ভিকটিমকে নানা কথাবার্তা বলার এক পর্যায়ে তাকে মারধর করে। আবার সে যাতে কারো সাথে যোগাযোগ করতে না পারে সেজন্য তার মোবাইল ফোন ও টাকা পয়সা কেড়ে নেয় আসামিরা। তিনি জানান, জাহাঙ্গীর ভুক্তভোগী নারীর স্বামীর বন্ধু ছিলেন।
তদন্ত কর্মকর্তা রাজেস বড়ুয়া বলেন, ওই সময় চকবাজার থেকে ভিকটিমের পূর্ব পরিচিত লোকটি ঘটনাস্থলে পৌঁছে। ওই লোক ভিকটিমকে ছাড়ানোর চেষ্টা করলে আসামিরা সবাই মিলে তাকেও মারধর করে। মার খেয়ে লোকটি পরে ভয়ে সেখান থেকে পালিয়ে যায়। এসময় ভিকটিমকে একটি নির্জন জায়গায় নিয়ে আসামিরা পালাক্রমে ধর্ষণ করে পরে তাকে ছেড়ে দেয়।
ধর্ষিতা নিজেই হাসপাতালে : পুলিশের তদন্ত বলছে, ঘটনার দিন ভোর রাত ৪টা থেকে সাড়ে ৪টার যেকোনো এক সময় ভিকটিম মুমুর্ষূ অবস্থায় চমেক হাসপাতালে পৌঁছেন। সেখানে জরুরি বিভাগে কর্তব্যরতদের মারধরের বিষয়টি খুলে বলেন। এক পর্যায়ে ধর্ষণের বিষয়টি জানার পর হাসপাতালে দায়িত্বরতরা তাকে দ্রুত হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে ভর্তি করেন। হাসপাতালের ওসিসি ওয়ার্ড থেকে ভোর সাড়ে ৪টায় ওই নারীর ধর্ষণের ঘটনার বিষয়টি পুলিশকে জানানো হয়েছিল। পুলিশ দ্রুত হাসপাতালে ছুটে গিয়ে ওই নারীর কাছে ঘটনার বিস্তারিত জানার চেষ্টা করেন। পরিদর্শক রাজেস বড়ুয়া বলেন, ভিকটিম মুমুর্ষূ অবস্থায় ছিল। সেই কারণে তার কাছ থেকে বেশি কিছু জানা যায়নি।