চান্দগাঁওয়ে প্রবাসীকে ছুরিকাঘাতে খুন

স্ত্রী ও যুবক গ্রেপ্তার, আহত হয়েছেন দুজনেই

আজাদী প্রতিবেদন | সোমবার , ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ at ৮:০১ পূর্বাহ্ণ

নগরের চান্দগাঁওয়ের পাঠানিয়াগোদা এলাকায় খুন হয়েছেন আকিব হোসেন (৩২) নামে প্রবাসী এক যুবক। ‘পরকীয়া’ প্রেমিকই তাকে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করেন বলে দাবি করেন আকিবের স্বজনরা। গত শনিবার দিবাগত রাত ৯টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। আকিবের স্ত্রী উম্মে যোহরা পুষ্পা (২৬) ও কথিত ‘পরকীয়া প্রেমিক’ সাইফুল ইসলামকে (৩০) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ধৃত দুজনকে আসামি করে আকিবের মা আরিফা খাতুন বাদী হয়ে গতকাল চান্দগাঁও থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।

পুলিশ জানায়, মোটিভ দেখে মনে হয়েছে, ঘটনার সময় সাইফুল, আকিব ও পুষ্পার মধ্যে ধস্তাধস্তি হয়েছে। এতে সাইফুলও আহত হয়েছেন। তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। চিকিৎসা নিয়েছেন আহত পুষ্পাও। নিহত আকিব কুমিল্লা জেলার নাঙ্গলকোট উপজেলার আলী হোসেনের ছেলে। থাকেন পাঠানিয়াগোদায় ভাড়া বাসায়। পুষ্পার বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। তাদের পরিবার নগরের ব্যাটারিগলিতে থাকে। সাইফুলের বাড়ি কর্ণফুলী উপজেলার মইজ্জ্যারটেক এলাকায়। আকিবরা পাঁচ ভাই। তিনি সবার বড়।

আকিবের পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, আকিব দুবাই প্রবাসী। ৭ আগস্ট দেশে আসেন তিনি। ২০১৭ সালে পুষ্পার সঙ্গে বিয়ে হয় তার। এ দম্পত্তির ছয় বছরের একটি ছেলে ও তিন মাস বয়সী একটি মেয়ে রয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শনিবার রাত ৮টার দিকে আকিবের বাসায় যান সাইফুল। সেখানে তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি থেকে ধস্তাধস্তি ও ছুরিকাঘাতের ঘটনা ঘটে বলে ধারণা স্থানীয়দের। প্রতিবেশীরা বিষয়টি টের পেয়ে ওই বাসায় গিয়ে সাইফুল ও আকিবকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে চিকিৎসক আকিবকে মৃত ঘোষণা করেন। খবর পেয়ে চান্দগাঁও থানা পুলিশ সাইফুলকে আটক করে এবং জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুষ্পাকে থানায় নিয়ে আসে। পরে আকিবের মা মামলা করলে দুজনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

চান্দগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. জাহেদুল কবীর আজাদীকে বলেন, মোটিভ দেখে মনে হচ্ছে ছুরিকাঘাত করে খুন করা হয় আকিবকে। সাইফুলও আহত হয়। কী কারণে এ ঘটনা সেটা তদন্ত করছি। সাইফুল ও পুষ্পাকে গ্রেপ্তার করেছি। আকিবের মা মামলা দায়ের করেছেন।

পরকীয়ার বলি? : আকিবের স্বজনরা দাবি করেন, এক বছর আগেও আকিব একবার দেশে আসেন। তখন পুষ্পার সঙ্গে সাইফুলের সম্পর্কের বিষয়টি জানতে পারে সে। ওই সময় বিষয়টি নিয়ে পারিবারিকভাবে পুষ্পার স্বজনদের উপস্থিতিতে সালিশও হয়। এর কিছুদিন পর আকিব প্রবাসে চলে যায়। সর্বশেষ গত মাসে দেশে আসার পরও সাইফুলের সঙ্গে পুষ্পার সম্পর্ক থাকার বিষয়টি জানতে পারে।

নিহত আকিবের মা আজাদীকে বলেন, আমি আমার ছেলে হত্যার বিচার চাই। ওর (আকিবের স্ত্রী পুষ্পা) সাথে অনেকের পরকীয়া সম্পর্ক ছিল। সাইফুলের বিষয়টি জানাজানি হয়। এটা নিয়ে ঘরোয়াভাবে সালিশবিচারও করে আমরা সমাধানের চেষ্টা করেছি। তারপরও ওই ছেলে (সাইফুল) থেকে সরে আসতে পারেনি। ওই ছেলে ও বউ (পুষ্পা) মিলে পরিকল্পিতভাবে আমার ছেলেকে খুন করেছে। আমার ছেলে আর ফিরে আসবে না। কিন্তু খুনির বিচার চাই।

পরকীয়া’র বিষয়ে পুষ্পার পরিবারকে জানানো হয়েছে কিনা জানতে চাইলে বলেন, ওদের পরিবারে কমপ্লেইন করেছিলাম। গত বছর আমার ছেলে দেশে আসার পর পুষ্পার দাদা, চাচা, ফুফু, মা, খালা সবাইকে নিয়ে ঘরোয়াভাবে সালিশ বিচার হয়েছে।

আকিবের বাবা আলী হোসেন বলেন, পুষ্পা ও তার পরকীয়া প্রেমিক মিলে আমার ছেলেকে মেরে ফেলে। আমি সরকারের কাছে এদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। তাদের ফাঁসির কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হোক।

গতকাল সকালে চমেক হাসপাতালের মর্গের সামনে আকিবের একাধিক বন্ধু সাংবাদিকদের জানান, আকিব বিদেশে থাকা অবস্থায় স্ত্রী ‘পরকীয়া’ সম্পর্কে জড়িয়ে যায়। যা আকিব ভয়েস রেকর্ডে বন্ধুদের জানিয়েছিল। গত বছর আকিব দেশে এলে তাদের মধ্যে বিচ্ছেদেরও সিদ্ধান্ত হয়। এক সময় আইনজীবীর উপস্থিতিতে স্ত্রী পুষ্পার কোনো দাবি নেই জানিয়ে তালাকের কাগজপত্রও চূড়ান্ত হয়। এরপর পুষ্পাকে ১ লাখ টাকা দেয় আকিব। টাকার বিষয়টি লিখিত ছিল না। কিন্তু এরপরে তালাক আর কার্যকর হয়নি।

আমার বোনের দোষ নেই : পুষ্পার ছোট বোন মীম আজাদীকে বলেন, পুষ্পা ও সাইফুলের মধ্যে শুধুই বন্ধুত্ব ছিল। তিনি তার বোনকে নির্দোষ দাবি করে বলেন, আমার বোন দোষী হলে সে কীভাবে আহত হয়েছে? দোষী হলে সে তো ছুরিকাঘাত আহত হতো না, সেলাই করতে হতো না। সাইফুল ছেলেটাই আমার দুলাভাইকে মেরেছে। আমার বোনকে আঘাত করেছে।

মীম বলেন, সাইফুল আমার বোনকে দীর্ঘদিন ধরে পছন্দ করত। ওর সাথে আমার বোনের ভালো ফ্রেন্ডশিপ ছিল। আমার বোন জানত না তাকে পছন্দ করত। এক বছর আগে আমার দুলাভাই দেশে আসলে এগুলো মিটমাটও হয়। এখন এক বছর পর সাইফুল নাকি আমার বোনকে ডিস্টার্ব করছে। আমার দুলাভাই এটার বিচার করছে। সর্বশেষ ৬ সেপ্টেম্বর সাইফুল আমার বোনের বাসায় গেছে। সেখানে কী হয়েছে জানি না। আমার দুলাভাই মারা গেছে। আমার বোনও আহত হয়েছে।

কী বলছেন পুষ্পা : চান্দগাঁও থানায় পুষ্পার সঙ্গে কথা হয় আজাদীর। তিনি বলেন, আমি, আমার জামাই ও বাচ্চারাসহ বাসায় ছিলাম। ও (সাইফুল) হঠাৎ করে বাসায় আসে। এসে বলে, আমি শান্তিতে না থাকলে তোদেরও শান্তিতে থাকতে দেব না। এরপর ছুরি বের করে আমার জামাইকে এলোপাতাড়ি মেরেছে। আমি বাঁচাতে গেলে আমাকেও মেরেছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধহাটহাজারীর পরিস্থিতি স্বাভাবিক
পরবর্তী নিবন্ধসায়েমের জ্ঞান ফিরল সাত দিন পর, মামুনেরও উন্নতির দিকে