করোনা মহামারির ধাক্কা কাটিয়ে স্বাভাবিক হচ্ছে জনশক্তি রপ্তানি খাত। চলতি বছরের সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি পর্যন্ত সারাদেশ থেকে মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে পাড়ি দিয়েছেন ৮ লাখ ২০ হাজার ৮১৪ জন। এরমধ্যে কেবল চট্টগ্রাম থেকে গেছে ৫০ হাজার ৬২৪ জন। এর আগে গত ২০২১ সালের পুরো বছরে ২৪ হাজার ৬১৭ জন এবং ২০২০ সালে বিদেশে পাড়ি দেন ১১ হাজার ৪৩০ জন। গত বছরের হিসেবেও এখন পর্যন্ত দ্বিগুণ জনশক্তি রপ্তানি বেড়েছে। এতে বাড়ছে বৈদেশিক মুদ্রার প্রবাহ।
জনশক্তি রপ্তানি সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আমাদের দেশের শ্রম বাজার প্রধানত মধ্যপ্রাচ্য ভিত্তিক। মোট জনশক্তির রপ্তানির ৯০ ভাগ হয়ে থাকে সৌদি আরব, কাতার, ওমান এবং আরব আমিরাতে। এর বাইরে এশিয়ার চীন, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর এবং দক্ষিণ কোরিয়াতেও ভাগ্য বদলের উদ্দেশ্য অনেকে পাড়ি দিচ্ছেন। এছাড়া পূর্ব ইউরোপের দেশ রুমানিয়া, পোল্যান্ড, মাল্টা এবং বুলগেরিয়ার মতো দেশগুলোতে এখন অনেকে পাড়ি দিচ্ছেন। এছাড়া আফ্রিকার মোজাম্বিক, ইথিওপিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকাতেও অনেকে যাচ্ছেন। তবে এক সময় কোনো দক্ষতা ছাড়াই অনেকে বিদেশে যেতো। বর্তমানে সেই ধারা পরিবর্তন হয়েছে। যেমন কুয়েতে বাংলাদেশে থেকে প্রচুর পরিমাণে প্রশিক্ষিত নার্স যাচ্ছেন।
চট্টগ্রাম জেলা কর্মসংস্থান এবং জনশক্তি অফিস সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রাম থেকে চলতি বছরের ২০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মোট ৫০ হাজার ৬২৪ জন লোক বিদেশে পাড়ি দেন। উল্লেখযোগ্য মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদি আরব গেছেন ১৩ হাজার ৬৯০ জন, ওমানে ২৩ হাজার ১০৯ জন, কাতারে ২ হাজার ৪৪৭ জন এবং আরব আমিরাতে গেছেন ১০ হাজার ৫৩৭ জন। এর আগের বছর অর্থাৎ ২০২১ সালে সৌদি আরবে ৪ হাজার ৯৮৪ জন, ওমানে ৪ হাজার ৯১৫ জন, কাতারে ৮৪৪ জন এবং আরব আমিরাতে পাড়ি দেন ২৯ জন। চট্টগ্রাম জেলা কর্মসংস্থান এবং জনশক্তি অফিসের কর্মকর্তারা বলছেন, বিশ্বব্যাপী করোনার প্রকোপের কারণে গত দুই বছর প্রত্যাশিত জনশক্তি রপ্তানি হয়নি। তবে এখন পরিস্থিতি মোটামুটি ভালো হওয়ায় জনশক্তি রপ্তানিও আগের তুলনায় বাড়ছে। বাংলাদেশে শ্রমবাজার প্রধানত মধ্যপ্রাচ্যকেন্দ্রীক। এর বাইরে পূর্ব ইউরোপের দেশ রোমানিয়া, আর্মেনিয়া, আলবেনিয়া, পোল্যান্ড, মাল্টা, সার্র্বিয়া এবং ক্রোয়েশিয়াতেও অনেকে পাড়ি দেয়।
এজেন্সি মালিকদের সংগঠন বায়রার সদস্য এবং কানন ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী মো. গিয়াস উদ্দিন দৈনিক আজাদীকে বলেন, জনশক্তি রপ্তানিতে এখন সুদিন ফিরেছে বলা যায়। বর্তমানে বিশেষ করে ওমান, সৌদি আরব এবং আরব আমিরাতে বিদেশগমনের চাপ বেড়েছে। তবে সরকারকে বিমান ভাড়ার দিকে একটু নজর দেয়া দরকার। এক শ্রেণীর মানুষ সিন্ডিকেট করে বিমান ভাড়া বাড়িয়ে দিয়েছেন। মধ্যপ্রাচ্যে যারা কাজের জন্য যান, তাদের বেশিরভাগই হচ্ছে নিম্নমধ্যবিত্ত শ্রেণীর মানুষ। অনেকে ধারদেনা কিংবা জায়গা জমি বিক্রি করে বিদেশে পাড়ি দেন। বিমান ভাড়ার বেশি হওয়ার কারণে বেশিরভাগের ওপর বাড়তি চাপ পড়ে।
চট্টগ্রাম জেলা কর্মসংস্থান এবং জনশক্তি অফিসের উপ-পরিচালক জহিরুল আলম মজুমদার দৈনিক আজাদীকে বলেন, করোনার পরিস্থিতি সামলে উঠে এখন জনশক্তি রপ্তানি খাত চাঙা হয়েছে। মধ্যপ্রাচ্য আমাদের জন্য সবচেয়ে বড় শ্রম বাজার। স্বাভাবিকভাবে জনশক্তি রপ্তানির বিরাট অংশই হচ্ছে সৌদি আরব, ওমান ও আরব আমিরাতে। এর বাইরে পূর্ব ইউরোপ ও আফ্রিকার দেশেও অনেকে যাচ্ছেন। তবে বর্তমান সরকার দক্ষ জনশক্তি রপ্তানির দিকে মনোযোগ দিচ্ছে। সেই লক্ষ্যে দেশে উপজেলা পর্যায়ে কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। কারণ ভবিষ্যতে অদক্ষ শ্রমিকদের জন্য বিদেশের মাটিতে অর্থ উপার্জন করাটা কঠিন হয়ে পড়বে।