চাক্তাই খালে গোসল করতে নেমে দুই শিশু নিখোঁজ

ফায়ার সার্ভিসের ৩ ঘণ্টার উদ্ধার অভিযান তথ্য নিয়ে বিভ্রান্তি, স্বজনেরও খোঁজ নেই

আজাদী প্রতিবেদন | বুধবার , ১২ জুন, ২০২৪ at ৭:৩৮ পূর্বাহ্ণ

নগরের ফিশারিঘাট সংলগ্ন চাক্তাই খালে গোসল করতে নেমে নিখোঁজ হয়েছে দুই শিশু। গতকাল মঙ্গলবার বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। পরে স্থানীয়দের কাছ থেকে খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দলসহ দুটি ইউনিট বিকাল ৫টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত তিন ঘণ্টা উদ্ধার অভিযান চালায়। তবে শিশু দুটির কোনো সন্ধান পায়নি।

গত রাত ১০টায় এ রিপোর্ট লেখাকালীন নিখোঁজ শিশু দুটির পরিচয়ও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এমনকি ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধার অভিযান চলাকালেও এদের বাবামাসহ পরিবারের কোনো সদস্য বা অন্য কোনো আত্মীয়স্বজনও ঘটনাস্থলে আসেনি। অবশ্য আরমান নামে এক পথশিশু সাংবাদিকদের বলে, নিখোঁজ দুই শিশুর নাম রাসেল ও তানভীর। তারা ঘটনাস্থলের আশপাশের কোনো বস্তিতে থাকতে পারে বলে তার ধারণা। তবে ডুবে যাওয়ার সময় বাহাদুর নামে এক মাছ বিক্রেতা একটি শিশুকে উদ্ধারের চেষ্টা করে বিফল হন বলে জানান। বাহাদুরের দাবি, তিনি দুজন নন, একজন শিশুকেই ডুবে যেতে দেখেছেন।

ফায়ার সার্ভিসের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা জানান, শিশু নিখোঁজের বিষয়ে একেকজন একেক রকম কথা বলায় তারা নিজেরাও বিভ্রান্ত। কোন জায়গায় শিশু দুটি ডুবেছে সেটাও কেউ নিশ্চিত করতে পারেনি। একটি নাকি দুটি বা আদৌ কোনো শিশু ডুবেছে কিনা সেটা নিয়েও নানা বক্তব্য পাচ্ছে ফায়ার সার্ভিস। এরপরও সম্ভাব্য সব জায়গায় সন্ধান চালায়। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা পেলে আজ বুধবারও শিশু দুটির সন্ধানে অভিযানে চালানো হবে।

গতকাল সন্ধ্যায় ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেছে, কর্ণফুলী নদীর সঙ্গে সংযুক্ত চাক্তাই খালে রয়েছে জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের আওতায় নির্মিত স্লুইস গেট। এর দক্ষিণ পাশে নদী এবং উত্তর পাশে রয়েছে খাল। এ সময় খালে ডুবুরিদের তল্লাশি চালাতে দেখা যায়। তা দেখতে ভিড় করেন শত শত উৎসুক জনতা। এ সময় কেউ বলেন, দক্ষিণ পাশে ডুবেছে শিশু দুটি। কেউ কেউ নিখোঁজ শিশু দুটি পানির স্রোতে কর্ণফুলীতে ভেসে গেছে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ করেন। তবে ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তরা বলেন, তখন জোয়ার ছিল। যদি আদৌ ডুবে থাকে তাহলে জোয়ারের ধাক্কায় শিশুগুলো খালের ভেতর প্রবেশ করবে।

এদিকে ডুবে যাওয়ার সময় এক শিশুকে বাঁচানোর চেষ্টা করেন বাহাদুর নামে এক মাছ বিক্রেতা। গতকাল সন্ধ্যায় ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধার অভিযান চলাকালে খালপাড়ে উপস্থিত সাংবাদিকদের তিনি বলেন, তিনটা সাড়ে তিনটার দিকে আমি গোসল করতে আসি। এ সময় একজন মহিলা আমাকে ডেকে বলে, ভাইয়া ছেলেটাকে বাঁচাও। তখন দেখলাম স্লুইচ গেটের সামনে একটা ছেলে ডুবে যাচ্ছে। সাথে সাথে সাঁতার কেটে সেখানে গিয়ে ছেলেটার হাত ধরে টেনে তোলার চেষ্টা করি। কিন্তু তখন স্রোত বেড়ে যাওয়ায় পারিনি।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী পথশিশু আরমান সাংবাদিকদের জানায়, নিখোঁজ শিশু দুটির নাম রাসেল ও তানভীর। তারা দুজন বন্ধু। খেলতে এসে তাদের সঙ্গে পরিচয়। আমি গোসল করতে আসি। তারাও ওই সময় গোসল করতে আসে। তারা সাঁতার কাটে। যখন স্রোত আসে তখন তারা ভেতরে ঢুকে যায়। তখন একজন লোক তাদের বাঁচাতে যায়, কিন্তু লোকটা নিজেই ডুবে যাচ্ছিল।

এ সময় আরমানের হাতে একটি প্যান্ট দেখা যায়। প্যান্টটি রাসেলের দাবি করে আরমান বলে, সে প্যান্ট খুলে লাফ দিয়ে সাঁতার কাটতে নামে। যেখান থেকে লাফ দেয় সেখানে প্যান্টটি পেয়েছি।

অভিযানে অংশ নেওয়া ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা জসীম উদ্দিন আজাদীকে বলেন, তিন ঘণ্টা উদ্ধার অভিযান চালিয়েছি। সন্ধান পাইনি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা পেলে কাল (আজ) আবার অভিযান চালাব। তিনি বলেন, কেউ বলছে দুজন পানিতে নেমেছে। একজন উঠলেও আরেকজন উঠতে পারেনি। আবার কেউ বলছে দুজনই নিখোঁজ হয়েছে। তবে যে শিশুটি পানি থেকে উঠেছে বলা হচ্ছে আমরা তার খোঁজ পাইনি। আবার নিখোঁজ শিশুর কোনো অভিভাবকও পাওয়া যায়নি।

ফায়ার সার্ভিসের উপসহকারী পরিচালক মো. আবদুল্লাহ বলেন, ভিকটিমের কোনো অভিভাবক পাইনি। তারপরও জনশ্রুতি অনুযায়ী উদ্ধার অভিযান চালিয়েছি। তিনি বলেন, জোয়ারভাটার ব্যাপার আছে। তাই দুই পাশে তল্লাশি চালিয়েছি।

বাকলিয়া থানার ওসি আফতাব হোসাইন সাংবাদিকদের বলেন, শিশু পানিতে তলিয়ে গেছে বলে স্থানীয় লোকজন দাবি করলেও আমরা এখনো কোনো অভিভাবক খুঁজে পাইনি। সেখানে আসলে কী হয়েছে সেটা বোঝা যাচ্ছে না।

পূর্ববর্তী নিবন্ধলোকাল অ্যাডাপটেশন চ্যাম্পিয়নস অ্যাওয়ার্ড গ্রহণ করেছেন প্রধানমন্ত্রী
পরবর্তী নিবন্ধচট্টগ্রামে কিশোর অপরাধীদের হাতে আট দিনে ৪ খুন