ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে গত বছরের অক্টোবরে চাক্তাই–খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীদের ৫০০ কোটি টাকার পণ্য নষ্ট হয়ে যায় দাবি করেন ব্যবসায়ীরা। মূলত প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমের আগে চাক্তাই–খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীদের কপালে ভাঁজ পড়ে। কারণ বর্ষায় নদী–খাল পানিতে টইটম্বুর থাকে। এছাড়া থাকে জোয়ারের পানিরও চাপ। তাই অনেক সময় দেখা যায়, রৌদ্রোজ্জ্বল আবহাওয়ায়ও জোয়ারের পানির ধাক্কায় চাক্তাই– খাতুনগঞ্জের নিম্নাঞ্চল হাঁটু পানিতে তলিয়ে যায়। তাই আসছে ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ নিয়েও ব্যবসায়ীরা রয়েছেন টেনশনে।
সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, এক সময় চাক্তাই খাল দিয়ে নৌপথে শত শত কোটি টাকার বাণিজ্য হতো। কালের পরিক্রমায় সেই চাক্তাই খাল চীনের দুঃখ হোয়াংহো নদীর মতো চাক্তাই–খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীদের দুঃখে পরিণত হয়েছে। এছাড়া খালের দুই পাড়ে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ, পলি জমে খাল ভরাট হয়ে যাওয়া এবং তলা পাকা করার কারণে স্থায়ীভাবে নাব্যতা হারিয়েছে চাক্তাই খাল। ফলে পানির ধারণক্ষমতা কমে যায় খালের। জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি পেতে ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন সময় দোকান–গুদামের প্রবেশমুখও উঁচু করেন। কিন্তু প্রতি বছরই বাড়ে জোয়ারের পানির উচ্চতা। তবে শেষ পর্যন্ত জলাবদ্ধতা নিরসনে স্থায়ী সমাধান হয়নি। গত ২০১৮ সালের মাঝামাঝি সময় চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) চাক্তাই খালের কর্ণফুলী মোহনায় জোয়ারের পানি প্রতিরোধক স্লুইচ গেট নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করে। কিন্তু উদ্বোধনের প্রায় ৫ বছর হতে চললেও এখনো নির্মাণ কাজ শেষ হয়নি। ফলে এখনো ব্যবসায়ীদের দুর্ভোগের সম্মুখীন হতে হচ্ছে।
চাক্তাই–খাতুনগঞ্জ আড়তদার সাধারণ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মহিউদ্দিন দৈনিক আজাদীকে বলেন, ঘূর্ণিঝড় মোখা নিয়ে আমরা খুবই উদ্বিগ্ন রয়েছি। চাক্তাই–খাতুনগঞ্জে জোয়ারের পানির উচ্চতা বাড়লেও নিম্নাঞ্চল হাঁটু থেকে কোমর সমান পানিতে তলিয়ে যায়। এছাড়া দোকান গুদামে পানি প্রবেশ করে ভোগ্যপণ্য নষ্ট হয়ে যায়। গত ২০১৭ সালে ঘূর্ণিঝড় মোরার প্রভাবে বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে ব্যবসায়ীদের প্রায় ৩০০ কোটি টাকার পণ্য নষ্ট হয়ে যায়। এছাড়া গত বছরের অক্টোবরের শেষ দিকে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে ব্যবসায়ীরা প্রায় ৫০০ কোটি টাকার ক্ষতির মুখে পড়েন। জোয়ারের পানি ও জলাবদ্ধতা থেকে রক্ষা পেতে আমরা বারবার নালা নর্দমা নিয়মিত পরিষ্কার করার পাশাপাশি কর্ণফুলী নদী ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে পানির ধারণ ক্ষমতা বাড়ানোর দাবি জানিয়ে আসছিলাম। কিন্তু বিভিন্ন সমস্যার কারণে ড্রেজিংও হচ্ছে ধীরগতিতে। এছাড়া চাক্তাই ও রাজখালী খালের মোহনায় জোয়ারের পানি প্রতিরোধে স্লুইচগেট নির্মাণ কাজ এখনো শেষ হয়নি। তাই আমরা এখনো জলাবদ্ধতা নিয়ে আতঙ্কে আছি।
খাতুনগঞ্জ ট্রেড ও ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের সিনিয়র সহ–সভাপতি এবং বিএসএম গ্রুপের কর্ণধার আবুল বশর চৌধুরী দৈনিক আজাদীকে বলেন, মে থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত খাতুনগঞ্জে জোয়ারের পানিতে জলাবদ্ধতার প্রকোপ বাড়ে। জোয়ারের পানি প্রতিরোধ সিডিএ স্লু্ইচ গেট নির্মাণ কাজ শুরু করেছে, কিন্তু সেই কাজ শেষ না হওয়ায় ব্যবসায়ীরা তার সুফল পাচ্ছেন না। এছাড়া নালা নর্দমা ও খাল ভরাট হয়ে পানির ধারণ ক্ষমতা কমে গেছে, যার কারণে বিভিন্ন স্থানে পানির স্বাভাবিক প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এতেও জলাবদ্ধতা সমস্যাটি প্রকট হচ্ছে। এখন ব্যবসায়ীরা চাইলেই তো হঠাৎ করে গুদামের মালামাল অন্যত্র সরাতে পারেন না।