চাকসুতে শিবিরের বিপুল জয়

২৬ পদের মধ্যে ২৪টিতে জিতল শিবির এজিএস পদে বিজয়ী ছাত্রদল প্রার্থী

চবি প্রতিনিধি ম | শুক্রবার , ১৭ অক্টোবর, ২০২৫ at ৮:৩৩ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) নির্বাচনে বিপুল জয় পেয়েছে ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থিত শিক্ষার্থী সম্প্রীতি জোট। এর মাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) নির্বাচনে জয়ের ধারা বহাল রাখল ছাত্রশিবির। চাকসু নির্বাচনে কেন্দ্রীয় ২৬ পদের মধ্যে ভিপিজিএসসহ ২৪টি পদে শিবির জয়লাভ করেছে। অপর দুই পদের মধ্যে এজিএস পদে ছাত্রদল ও ক্রীড়া সম্পাদক পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী বিজয় লাভ করেন।

এটি চাকসুর সপ্তম নির্বাচন। অন্যদিকে ৪৪ বছর পর দ্বিতীয়বারের মত চাকসুর নেতৃত্বে ফিরেছে শিবির। ১৯৮১ সালে চাকসু নির্বাচনে শিবির প্রথমবার জয় পায়। ৩৫ বছর পর অনুষ্ঠিত হওয়া এবারের চাকসু নির্বাচনে ভিপি নির্বাচিত হয়েছেন শিবির সমর্থিত ইব্রাহিম হোসেন রনি। তিনি পেয়েছেন ৭,৯৮৩ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্রদলের প্রার্থী সাজ্জাদ হোসেন হৃদয় পেয়েছেন ৪,৩৭৪ ভোট। জিএস নির্বাচিত হয়েছেন ছাত্রশিবিরের প্রার্থী সাঈদ বিন হাবীব। তিনি পেয়েছেন ৮,০৩১ ভোট। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্রদল প্যানেলের প্রার্থী শাফায়াত হোসেন পেয়েছেন ২,৭২৪ ভোট। এজিএস পদে ছাত্রদলের প্রার্থী আইয়ুবুর রহমান তৌফিক ৭,০১৪ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী শিবির মনোনীত প্রার্থী সাজ্জাদ হোসেন মুন্না পেয়েছেন ৫,০৪৫ ভোট।

নব নির্বাচিত ভিপি ইতিহাস বিভাগের এমফিল শিক্ষার্থী ও ইসলামী ছাত্রশিবির চট্টগ্রাম মহানগর দক্ষিণের সভাপতি ইব্রাহিম হোসেন রনি বলেন, এ জয় কোনো ব্যক্তির নয়, এটি আদর্শ, সততা ও সৎ রাজনীতির জয়। ২৪ আন্দোলনের ফসল হল চাকসু নির্বাচন। ১৯৮১ সালে যেভাবে আমাদের পূর্বসূরিরা শিক্ষাঙ্গনে শৃঙ্খলার রাজনীতি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, আমরাও সেই ধারা ফিরিয়ে আনব। আমরা শিক্ষার্থীদের কল্যাণে সবসময় কাজ করব। আমরা শুধু শিক্ষার্থীদের দোয়া ও সহযোগিতা চাই।

নব নির্বাচিত জিএস সাঈদ বিন হাবিব বলেন, আমরা কোনো প্রতিশোধের রাজনীতি নয়, পরিবর্তনের রাজনীতি চাই। ১৯৮১ সালের সেই আদর্শিক চাকসুর উত্তরাধিকার আমরা পুনরুদ্ধার করেছি। আমাদের লক্ষ্য হবে জ্ঞান, নৈতিকতা ও সৌহার্দ্যের সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠা। এখানে আমরা শিক্ষার্থীদের কল্যাণে কাজ করব। শিক্ষার্থীরা আমাদেরকে যে আমানত (দায়িত্ব) দিয়েছেন আমরা এই আমানতকে যথাযথ ব্যবহার করব।

এর আগে বৃহস্পতিবার ভোর ৫টা ১৫ মিনিটের দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ অডিটোরিয়ামে হল ভর্তি প্রার্থী ও শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মনির উদ্দিন ফল ঘোষণা করেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপউপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. কামাল উদ্দিন, নির্বাচন কমিশনের সদস্য সচিব অধ্যাপক ড. . কে এম আরিফুল হক সিদ্দিকীসহ আরও অনেকে।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ড. মনিরুল ইসলাম বলেন, এবার চাকসু নির্বাচনে প্রায় ৬৫ শতাংশ ভোট পড়েছে। শিক্ষার্থীরা আনন্দের সাথে নিজেদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিয়ে বিজয়ী করেছে। সুন্দর ও সুষ্ঠু একটা নির্বাচন শিক্ষার্থীদের দিতে পেরে খুব ভালো লাগছে।

প্রসঙ্গত, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় সংসদ চাকসুর ইতিহাসে এখন পর্যন্ত সাতটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে ছাত্রলীগের মোহাম্মদ ইব্রাহিম (ভিপি), আবদুর রব (জিএস); ১৯৭২ সালের নির্বাচনে ছাত্র ইউনিয়নের শামসুজ্জামান হীরা (ভিপি), জাসদ ছাত্রলীগের মাহমুদুর রহমান মান্না (জিএস); ১৯৭৪ সালে এস এম ফজলুল হক (ভিপি), গোলাম জিলানী চৌধুরী (জিএস); ১৯৭৯ সালে মজহারুল হক শাহ চৌধুরী (ভিপি), জমির চৌধুরী (জিএস); ১৯৮১ সালে ইসলামী ছাত্রশিবিরের জসিম উদ্দিন সরকার (ভিপি), আবদুল গাফফার (জিএস); ১৯৯০ সালে সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্যের নাজিম উদ্দিন (ভিপি) ও সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের আজিম উদ্দিন আহমদ (জিএস) নির্বাচিত হন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপাসের হারের সাথে কমেছে জিপিএ-৫
পরবর্তী নিবন্ধআজ স্বাক্ষর হতে যাচ্ছে জাতীয় জুলাই সনদ