সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩০ থেকে ৩৫ বছরে উন্নীত করতে শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল যে ব্যক্তিগত সুপারিশ করেছেন তা প্রধানমন্ত্রীর কাছে তুলে ধরবেন বলে জানিয়েছেন জনপ্রশাসনমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন। গতকাল রোববার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নে তিনি তার এই মনোভাবের কথা জানান।
গত ১৭ এপ্রিল এ সংক্রান্ত একটি চিঠি জনপ্রশাসনমন্ত্রী মো. ফরহাদ হোসেনকে পাঠিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী নওফেল। চিঠিতে তিনি বলেছেন, একজন জনপ্রতিনিধি হিসেবে এটি তার ব্যক্তিগত সুপারিশ।
এদিন জনপ্রশাসনমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্ত হচ্ছে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩০ থেকে বাড়িয়ে ৩৫ বছর না করা। কারণ, এই ধরনের পরিবর্তন করতে গেলে অনেক জটিলতা রয়েছে। তবে শিক্ষামন্ত্রীর প্রস্তাবটি আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আলোচনা করব। তিনি যে নির্দেশনা দেবেন সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বর্তমানে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩০ বছর, মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের ক্ষেত্রে তা ৩২ বছর। এই সীমা বাড়ানোর জন্য বেশ কয়েক বছর ধরেই আন্দোলন করে আসছেন চাকরিপ্রত্যাশীরা। যদিও সরকার তাতে সাড়া দেয়নি।
শিক্ষামন্ত্রী তার চিঠিতে বলেছেন, সরকারি চাকরিতে প্রবেশের ক্ষেত্রে বয়সসীমা ৩৫ করা হলে অনেকে বেসরিকারি খাতের অভিজ্ঞতা নিয়ে সরকারি চাকরিতে আসতে পারবে। এখন যারা একদম ফ্রেশ আসছে, তাদের সে রকম অভিজ্ঞতা থাকে না। সেক্ষেত্রে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ বছর করা হলে অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগাতে পারবেন তারা।
চিঠিতে নওফেল বলেন, চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী ন্যূনতম ৩৫ বছর করার দাবির বিষয়টি নিয়ে শিক্ষার্থীরা দীর্ঘদিন ধরে রাজপথে আন্দোলন চালিয়ে আসছে। সরকার বিষয়টি উপলব্ধি করে ২০১৮ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারের পাতা নম্বর–৩৩ এর শিক্ষা, দক্ষতা ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধি অনুচ্ছেদে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানোর বিষয়ে মেধা ও দক্ষতা বিবেচনায় রেখে বাস্তবতার নিরিখে যুক্তিসংগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছিল। বর্তমান বাস্তবতায় বাংলাদেশের সকল পর্যায়ে চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা আজ থেকে ৩৩ বছর আগে ১৯৯১ সালে ২৭ বছর থেকে ৩০ বছরে উন্নীত করা হয়, যখন বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু ছিল ৫৭ বছর। বর্তমানে বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু বৃদ্ধি পেয়ে ৭৩ বছর, বিধায় চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা বৃদ্ধি করা যৌক্তিক।
কোভিড–১৯ মহামারীর কারণে প্রায় আড়াই বছর কোনো নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়নি বা নিয়োগ পরীক্ষাও অনুষ্ঠিত হয়নি উল্লেখ করে শিক্ষামন্ত্রী চিঠিতে বলেন, লকডাউন উঠিয়ে নেওয়ার পর থেকে প্রতি সপ্তাহান্তে ১০–১৫টি বা ততোধিক পরীক্ষা একই দিনে, একই সময়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে। যার ফলস্বরূপ পরীক্ষা থেকে বঞ্চিত হয়েছে অজস্র চাকরি প্রত্যাশী। কোভিড–১৯ এর শুরুতে যাদের বয়স ২৭–২৯ বছর ছিল, তাদের বয়স এখন ৩০ বা ততোধিক। ফলে চাকরিপ্রার্থীগণ বাস্তবিক অর্থে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় ৩০ বছরের পরিবর্তে সাড়ে সাতাশ বছর পেয়েছে। উক্ত ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সরকার ৩৯ মাসের ব্যাকডেট ধরে একটি বয়স ছাড় প্রদান করে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে ব্যাকডেট কার্যকর ছিল ১৩ মাস, বাকি ২৬ মাস তা অকার্যকর অবস্থায় ছিল। তাই স্থায়ীভাবে বয়স বৃদ্ধি অতীবও জরুরি। বিশ্বের প্রায় ১৬২টি দেশে চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা কমপক্ষে ৩৫ বছর বলে উল্লেখ করেন তিনি।