টেলিযোগাযোগ নজরদারির জাতীয় সংস্থা ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের (এনটিএমসি) মহাপরিচালক পদ থেকে চাকরিচ্যুত মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসানকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গত বৃহস্পতিবার গভীর রাতে খিলক্ষেত থেকে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় হকার শাহজাহান হত্যার ঘটনায় ঢাকার নিউমার্কেট থানার মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। পরে এ হত্যা মামলায় জিয়াউল আহসানকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৮ দিনের হেফাজতে পেয়েছে পুলিশ। তবে মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসান ওই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে নিজের সম্পৃক্ততার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। রিমান্ড শুনানিতে কথা বলেছেন আলোচিত ‘আয়না ঘর’ নিয়েও। অভিযোগ করেন, আটকের পর থেকে তাকেও রাখা হয়ছিল এমন এক বন্দিশালায়। খবর বিডিনিউজের।
গতকাল শুক্রবার বিকেলে এ মামলায় আদালতে নেওয়া হলে রিমান্ড শুনানিতে তিনি বলেন, আমি এনটিএমসির প্রধান ছিলাম। এটি একটি নিরস্ত্র সংস্থা। আমি কীভাবে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকি। আদালতে প্রায় ৩৫ মিনিটের শুনানিতে বাদী ও বিবাদীপক্ষের বক্তব্য শুনে টেলিযোগাযোগ নজরদারির জাতীয় সংস্থা ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের (এনটিএমসি) চাকরিচ্যুত মহাপরিচালক জিয়াউলকে আট দিনের রিমান্ডের আদেশ দেন বিচারক। শুনানিতে জিয়াউল আহসান নিজেকে নির্দোষ দাবি করলেও আওয়ামী লীগ সরকারের মেয়াদে তার বিরুদ্ধে গুম, খুন, নির্যাতন ও আয়না ঘরের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ আনেন বাদীপক্ষের আইনজীবী মোহাম্মদ উল্লাহ খান জুয়েল।
এ আইনজীবীর অভিযোগ, এ আসামি (জিয়াউল) আয়না ঘরের একজন প্রবক্তা। তিনি গুম–খুন ও বিগত সরকারের বিভিন্ন অপকর্মের সঙ্গী। তার মত কতিপয় অফিসারের কারণে আওয়ামী সরকার স্বেচ্ছাচারী হয়ে ওঠে। এই বাংলাদেশ হয়ে যায় আফগানিস্তানের মত।
এরপর আয়না ঘরের সঙ্গে নিজের সম্পৃক্ততা ও অন্যান্য অভিযোগ অস্বীকার করেন জিয়াউল আহসান। বিচারকের অনুমতি নিয়ে শুনানিতে কথা বলেন তিনি।
জিয়াউল বলেন, আমি নিজেই আয়না ঘরের বিরোধী। আমাকে গত ৭ (আগস্ট) তারিখ রাতে সেনাপ্রধানের কথা বলে আমার সহকর্মীরা নিয়ে আসেন। আমি নিজেই গত সাত–আট দিন আয়না ঘরে আটক ছিলাম। আমি কখনই ডিজিএফআইয়ে চাকরি করি নাই। আমি কোনোভাবে আয়না ঘরের মত কনসেপ্টের সঙ্গে জড়িত নই। আমিও চাই এই আয়নাঘর ভেঙ্গে দেওয়া হোক।
আসামিপক্ষের আইনজীবী নাজনীন নাহার রিমান্ড আবেদনের বিরোধিতা করে বলেন, এই আয়না ঘর মিডিয়ার সৃষ্টি। এখানে মিডিয়া ট্রায়াল চলছে। পৃথিবীর সব দেশেই আয়না ঘরের মত কারাগার আছে। এটা ডিজিআইএফআইয়ের একটি কারাগার। আমার মক্কেল ডিজিএফআইয়ে কখনই কাজ করেননি। তাই আমার মক্কেলের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অমূলক। নাজনীন নাহার বলেন, আমার মক্কেলকে গত ৭ আগস্ট তার বাসা থেকে তারই সহকর্মীরা সেনাপ্রধানের কথা বলে নিয়ে আসেন। সেই থেকে তিনি ডিজিএফআইয়ের হেফাজতে ছিলেন।
গণআন্দোলনে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর গোয়েন্দা পরিদপ্তরের (ডিজিএফআই) কথিত আয়না ঘর খুলে দেওয়ার দাবি জানাচ্ছিল অনেক পরিবার। তাদের দাবি, বিগত সরকারের সময় বিরোধী দল ও মতের লোকজনদের অনেককে তুলে নিয়ে বিচারবহির্ভূতভাবে বছরের পর বছর আয়না ঘরে বন্দি রেখে নির্যাতন চালায় সরকারের গোয়েন্দা বাহিনী, যাদের হদিস তারা এখনও পাননি।
কথিত এ বন্দিশালার সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগ করা হলে এনটিএমসির সাবেক প্রধান জিয়াউল আহসান নিজেই সেখানে গত কয়েকদিন ছিলেন বলে আদালতে দাবি করেন। জিয়াউলকে কারাগারে রাখা হলে তার প্রাণনাশের আশঙ্কা করেন আসামিপক্ষের আইনজীবী নাজনীন নাহার।
আট দিনের রিমান্ড আদেশের আগে তিনি বলেন, আমার মক্কেলকে যদি হাজতে পাঠানো হয়, সেখানে শত শত জঙ্গি আছে, হত্যা–ডাকাতিসহ অনেক মামলার আসামি আছে, যাদের বিরুদ্ধে আমার মক্কেল অভিযান পরিচালনা করেছেন। যদি তাকে সেখানে রাখা হয়, তাহলে তার প্রাণনাশের সম্ভাবনা আছে। এ ছাড়া তার শারীরিক চিকিৎসা প্রয়োজন। এসব কারণ দেখিয়ে আদালতে জিয়াউলের রিমান্ড আবেদন বাতিলের প্রার্থনা করেন আইনজীবী নাজনীন নাহার।
জিয়াউলের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রসঙ্গে শুক্রবার আদালতে তদন্ত কর্মকর্তা নিউ মার্কেট থানার এসআই সজীব মিয়া বলেন, গত ৭ জুলাই সকাল ৯টার দিকে একদল লোক লোহার রড ও লাঠিসোঁটা নিয়ে ভাঙচুর করতে করতে সাইয়েন্সল্যাব এলাকা থেকে নিউ মার্কেটের দিকে অগ্রসর হয়। তারা টিটি কলেজের বিপরীতে অর্কেড মার্কেটের সামনে পৌঁছালে স্থানীয় পাপোস বিক্রেতা শাহজাহানকে এলোপাতাড়ি পিটিয়ে গুরুতর যখন করে। এ সময় গুলিতে শাহজাহান মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। তাকে উদ্ধার করে প্রথমে পপুলার মেডিকেল হাসপাতালে ও পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ আসামি (জিয়াউল আহসান) ওই হত্যাকাণ্ডের অন্যতম নির্দেশদাতা।