চাঁদের বুকে ধ্বংস হল রাশিয়ার ‘লুনার ২৫’ নভোযান

মাহেন্দ্রক্ষণের অপেক্ষায় ভারতের চন্দ্রযান-৩

| সোমবার , ২১ আগস্ট, ২০২৩ at ৫:৪৬ পূর্বাহ্ণ

নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে চন্দ্রপৃষ্ঠে আছড়ে পড়েছে রাশিয়ার ‘লুনা ২৫’ নভোযান। প্রায় অর্ধ শতাব্দির মধ্যে চাঁদের উদ্দেশ্যে পাড়ি জমানোয় দেশটির প্রথম উদ্যোগ ছিল এটি।

১৯ থেকে ২১ অগাস্টের মধ্যে নভোযানটির চাঁদে অবতরণ করার কথা থাকলেও অবতরণের আগে গতিপথ বদলাতে গিয়ে সমস্যায় পড়ার কথা জানিয়েছিল রাশিয়ার মহাকাশ গবেষণা কর্তৃপক্ষ রসকসমস। পরে নভোযানটি ধ্বংস হয়ে যাওয়ার খবর দিয়েছে সংস্থাটি। এক বিবৃতিতে তারা জানায়, অপ্রত্যাশিত কক্ষপথে চলে যাওয়ার পর চন্দ্রপৃষ্ঠের সঙ্গে সংঘর্ষে পড়ে এটি ধ্বংস হয়ে গেছে।

১৯৭৬ সালে লুনা ২৪ মিশনের পর রাশিয়া গত প্রায় পাঁচ দশকে আর চন্দ্রাভিযানের উদ্যোগ নেয়নি। নভোযান ধ্বংস হওয়ার এই ঘটনা রাশিয়ার মহাকাশ প্রকল্পে বড় এক ধাক্কা। কারণ, সোভিয়েত যুগের পর রাশিয়া থেকে পরিচালিত প্রথম চন্দ্রাভিযান ছিল এটি। ১০ অগাস্ট উৎক্ষেপিত লুনা ২৫ চাঁদের কক্ষপথে পৌঁছায় ছয় দিন পর। আর আজ সোমবার নাগাদ চাঁদের দক্ষিণ মেরুর কাছাকাছি অবতরণের কথা ছিল এর। পরিকল্পনা অনুসারে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে বরফপানির খোঁজসহ বিভিন্ন পরীক্ষা চালানোর কথা ছিল এর। চাঁদের ওই এলাকায় এখন পর্যন্ত কোনো ‘রোভার বা ল্যান্ডার’ অবতরণ করতে পারেনি।

চাঁদের খুব কাছাকাছি চন্দ্রযান: এদিকে চন্দ্রাভিযানে ভারতের চন্দ্রযান৩ এর দ্বিতীয় ও চূড়ান্ত ডিবুস্টিং অপারেশন সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে গতকাল রোববার সকালে; এখন চাঁদের মাটিতে পৌঁছানোর সেই মাহেন্দ্রক্ষণের জন্য কেবল অপেক্ষা। মহাকাশযানটির ল্যান্ডার আগামী বুধবার চাঁদের মাটিতে অবতরণ করবে, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এই পর্বের দিকেই এখন গভীর মনোযোগ ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থাইসরোর বিজ্ঞানীদের। সংস্থাটির বরাতে এনডিটিভি জানিয়েছে, ল্যান্ডার বিক্রম চাঁদের কক্ষপথের এমন একটি অবস্থানে রয়েছে যেখান থেকে চাঁদের নিকটতম দূরত্ব ২৫ কিলোমিটার এবং দূরবর্তী পথের দূরত্ব ১৩৪ কিলোমিটার। এই কক্ষপথ থেকেই আগামী বুধবার চাঁদের দক্ষিণ মেরু অঞ্চলে সফটল্যান্ডিংয়ের চেষ্টা করবে বিক্রম। চাঁদের ওই অংশ সম্পর্কে এখনও খুব কমই জানে মানুষ। এখন প্রথম দেশ হিসেবে ভারত সেখানে রোবটযান নামাতে যাচ্ছে।

অভিযান সফল হলে নিরাপদে চাঁদের মাটিতে নামতে পারা চতুর্থ দেশ হবে ভারত। এর আগে কেবল যুক্তরাষ্ট্র, সোভিয়েত ইউনিয়ন ও চীনের মহাকাশযান নিরাপদে চাঁদের মাটিতে নামতে পেরেছে।

চাঁদের মাটিতে নামার পর ল্যান্ডার বিক্রমের পেট থেকে বেরিয়ে আসবে রোভার প্রজ্ঞান। তার ছবি তুলে পৃথিবীতে পাঠাবে বিক্রম। রোবটযান প্রজ্ঞান চন্দ্রপৃষ্ঠের রাসায়নিক গঠন বিশ্লেষণ এবং পানির সন্ধান করবে। এই মিশনের আয়ু হবে এক চন্দ্র দিবস, যা পৃথিবীর ১৪ দিনের সমান।

গত ১৪ জুলাই দুপুরে অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীহরিকোটার সতীশ ধাওয়ান মহাকাশ কেন্দ্র থেকে চন্দ্রযান৩ এর সফল উৎক্ষেপণ করে ইসরো। ঐতিহাসিক সেই মুহূর্তের সাক্ষী হতে ভারতের শতকোটি মানুষের চোখ ছিল টেলিভিশন আর সোশাল মিডিয়ায়। আগ্রহ নিয়ে নজর রেখেছেন বিশ্বের অন্যান্য মহাকাশ গবেষণা সংস্থার বিজ্ঞানীরাও।

চন্দ্রযান৩ এর ওজন ৩ হাজার ৯০০ কেজি, যা বানাতে খরচ হয়েছে ৬.১ বিলিয়ন রুপি (সাড়ে ৭ কোটি ডলার)। এই মহাকাশযানও তৈরি হয়েছে অরবিটার, ল্যান্ডার ও রোভারএই তিনটি অংশ নিয়ে। ইসরোর প্রতিষ্ঠাতার নামে চন্দ্রযান৩ এর ল্যান্ডারের নাম রাখা হয়েছে বিক্রম, যার ওজন প্রায় দেড় হাজার কেজি। ওই বিক্রমই তার পেটের মধ্যে বহন করছে ২৬ কেজি ওজনের রোভার বা রোবটযান প্রজ্ঞানকে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধইন্দ্রপুল লবণ শিল্পের অবরুদ্ধ চলাচল পথ উন্মুক্ত
পরবর্তী নিবন্ধযাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি গ্রেপ্তার