চাঁদের পৃষ্ঠের নিচে গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য খুঁজে পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। তাদের দাবি, এ বিষয়টি হয়তো ব্যাখ্যা করতে পারে, চাঁদের দুটি গোলার্ধ এত আলাদা দেখায় কেন। চাঁদের নিকটবর্তী দিকটি পৃথিবী থেকে দেখা যায়, যা অন্ধকার ও প্রাচীন লাভা প্রবাহের অবশিষ্টাংশে ঢাকা। অন্যদিকে চাঁদের দূরবর্তী দিকটি পৃথিবী থেকে দেখা যায় না, যা রুক্ষ ও পাথুরে। খবর বিডিনিউজের।
চাঁদের অভ্যন্তরীণ কিছু কারণে এই পার্থক্য হতে পারে বলে বিজ্ঞানীদের দীর্ঘদিনের অনুমানের সূত্র ধরে প্রতিবেদনে লিখেছে ব্রিটিশ গণমাধ্যম স্বাই নিউজ। তবে এখনও পর্যন্ত এটা প্রমাণ করতে পারেননি বিজ্ঞানীরা। যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার জেট প্রপালশন ল্যাবরেটরির গবেষক দলটির নেতা রায়ান পার্ক বলেছেন, আমরা দেখেছি চাঁদের দৃশ্যমান দিকটি দূরের দিকের চেয়ে বেশি নড়াচড়া করছে, যার মানে হলো চাঁদের দুই দিকের অভ্যন্তরীণ গঠন আলাদা। প্রথমবার ডেটা বিশ্লেষণের সময় এর ফলাফল দেখে আমরা এতটাই অবাক হয়েছিলাম যে, তা বিশ্বাসই করতে পারিনি। তাই ফলাফল যাচাইয়ের জন্য আমরা অনেকবার গণনা চালিয়েছি। সব মিলিয়ে আমাদের প্রায় দশ বছরের পরিশ্রমের ফল এ গবেষণা। চাঁদের দুই দিকের পার্থক্য বোঝার জন্য ২০১১ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে পৃথিবীর একমাত্র প্রাকৃতিক উপগ্রহটির আশপাশে এক বছর ধরে ঘুরেছিল ইবিবি ও ফ্লো নামের দুটি মহাকাশযান। এসব মহাকাশযানের ডেটা ব্যবহার করে পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ টানে চাঁদ কেমনভাবে সাড়া দিয়েছে তার মানচিত্র তৈরি করেছেন গবেষকরা। পৃথিবীর আশপাশে ঘোরার সময় চাঁদের মাধ্যাকর্ষণ সামান্য ওঠানামা করে। যার ফলে চাঁদের অভ্যন্তরে কিছুটা নড়াচড়া বা মোচড় দেওয়ার মতোন ঘটনা ঘটে। নড়াচড়ার মাধ্যমে চাঁদের অভ্যন্তরীণ গঠন বুঝতে পেরেছেন বিজ্ঞানীরা। তারা খুঁজে পেয়েছেন, চাঁদের কাছে থাকা দিকটির অভ্যন্তরীণ গঠন এর দূরবর্তী অংশের তুলনায় বেশি উষ্ণ। গবেষকরা বলছেন, চাঁদ সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিলেও অন্যান্য গ্রহের অভ্যন্তরীণ গঠন বুঝতেও সাহায্য করতে পারে এ গবেষণা। এরইমধ্যে নিজেদের এই কৌশল কাজে লাগিয়ে বৃহস্পতি ও ভেস্টা গ্রহাণুর অভ্যন্তরীণ গঠনের ম্যাপ করেছে গবেষক দলটি। পার্ক বলেছেন, ভবিষ্যতে সৌরজগতের বিভিন্ন রোমাঞ্চকর গ্রহ ও বস্তুগুলোর অভ্যন্তরীণ গঠন জানার ক্ষেত্রে আমাদের এই কৌশল ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।