সাতকানিয়ায় চাঁদা না পেয়ে ইটভাটায় ভাঙচুর ও ইট লুটে নেয়ার ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব–৭। গ্রেপ্তারকৃতরা হলো মো. নোমান (৩৫) ও মমতাজ উদ্দিন (৪০)। গত মঙ্গলবার নগরীর লালদীঘি এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
র্যাব–৭ সূত্র জানায়, সাতকানিয়ার এওচিয়ার ছনখোলা নজুর বাপের বাড়ির আনসারুল হক ও নলুয়া ইউনিয়নের পূর্ব গাটিয়াডেঙ্গা আনিসের বাড়ি এলাকার মো. কামাল উদ্দিন সহ কয়েকজন বন্ধু মিলে ছনখোলা এলাকায় শাহ মজিদিয়া ব্রিকস (এসএমবি) নামের একটি ইটভাটা পরিচালনা করে আসছিলেন।
এদিকে, বাঁশখালীর পলেগ্রাম এলাকার মো. তৈয়বের পুত্র মো. নোমান ও সাতকানিয়ার ছনখোলার আলতাফ মিয়ার পুত্র মমতাজ উদ্দিন এবং তাদের সহযোগীরা ইটভাটা মালিকদের কাছে ১০ লক্ষ টাকা চাঁদা দাবি করে। তাদের দাবিকৃত চাঁদা না দিলে ইটভাটা মালিকদেরকে প্রাণে মেরে ফেলার এবং সেখানে ইটভাটা করতে না দেয়ার হুমকিও দিয়ে যাচ্ছিল। একই সাথে নোমান বাদী হয়ে ২৩ মে কামাল উদ্দিন ও তার অংশীদারদের বিরুদ্ধে সাতকানিয়া থানায় একটি চাঁদাবাজি মামলা দায়ের করেন।
একই দিন মো. নোমান ও মমতাজ উদ্দিনের নেতৃত্বে সংঘবদ্ধ দল অস্ত্র, দা, কিরিচ, হকিস্টিক ও লোহার রড নিয়ে ইটভাটায় গিয়ে ১০ লক্ষ টাকা চাঁদা দাবি করে এবং ইটভাটা করলে প্রতিবছর ১০ লক্ষ টাকা করে চাঁদা দিতে হবে বলেও জানায়। তখন চাঁদা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে নোমান এবং মমতাজ ক্ষিপ্ত হয়ে ইটভাটার ম্যানেজার ও কর্মচারীদের মারধর করে অফিস থেকে বের করে দেয়। এসময় ভাটার মালিক আনসারুল হক বাঁধা দিতে গেলে তাকেও মারধর করে এবং তার কাছ থেকে ১ লক্ষ টাকা ছিনিয়ে নেয়। এছাড়া ইটভাটা অফিসের ক্যাশে থাকা ইট বিক্রির ৫ লক্ষ টাকা ছিনিয়ে নেয়। শুধু তাই নয়, ৫০–৬০টি ডাম্পার ট্রাক দিয়ে ভাটা থেকে ২ লক্ষ ১০ হাজার ইট লুটে নেয় এবং ১০–১২ হাজার কাঁচা ইট নষ্ট করে ফেলে। এ ঘটনায় ইটভাটার মালিক আনসারুল হকের স্ত্রী বাদি হয়ে গত সোমবার সাতকানিয়া থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় মো. নোমান ও মমতাজ উদ্দিনসহ ২১ জনের নাম উল্লেখ করা হয় এবং ১০০–১২০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়।
মামলা দায়েরের পরের দিন র্যাব–৭ গোপন খবরের ভিত্তিতে খবর পেয়ে নগরীর লালদীঘি এলাকা থেকে আসামি মো. নোমান এবং মমতাজ উদ্দিনকে গ্রেপ্তার করে।
অন্যদিকে, ইটভাটার মালিক কামাল উদ্দিনের স্ত্রী মর্তুজা বেগম সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করে বলেন, তার স্বামী ক্যান্সারাক্রান্ত হয়ে গত ১৬ মে থেকে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। হাসপাতালের বিছানায় তিনি মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছেন। অথচ গত ২৩ মে বাঁশখালীর মো. নোমান বাদি হয়ে আমার স্বামী কামাল উদ্দিন ও তার অংশীদারদের বিরুদ্ধে সাতকানিয়া থানায় ‘মিথ্যা চাঁদাবাজি’ মামলা দায়ের করেন। তারা আমার স্বামীসহ ইটভাটা মালিকদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করার পর ইটভাটায় গিয়ে ভাঙচুর ও লুটপাট চালায়।
সাতকানিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ ইয়াসির আরাফাত জানান, ইটভাটা মালিক আনসারুল হকের স্ত্রীর দায়ের করা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি বাঁশখালীর মো. নোমান ও সাতকানিয়ার ছনখোলার মমতাজ উদ্দিনকে র্যব–৭ গ্রেপ্তার করে থানায় হস্তান্তর করেন। আমরা গতকাল তাদেরকে আদালতে হাজির করলে আদালত কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ প্রদান করেন।