চাঁদাবাজদের তালিকা তৈরি করে আইনের আওতায় আনতে হবে

| সোমবার , ২৪ নভেম্বর, ২০২৫ at ৭:১৫ পূর্বাহ্ণ

রাজনৈতিক দলের নামে কেউ চাঁদাবাজি করলে পক্ষপাতহীনভাবে তা প্রতিরোধ করার জন্য থানার ওসিদের (অফিসার ইনচার্জ) নির্দেশ দিয়েছিলেন সিএমপি কমিশনার হাসিব আজিজ। অপরাধীদের কোনো দলীয় পরিচয় থাকতে পারে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, কারো কোনো দলীয় পরিচয়ে প্রভাবিত না হয়ে নিরপেক্ষ ও পেশাদারিত্বের সাথে দায়িত্ব পালনসহ ছিনতাইকারী, কিশোর গ্যাং লিডার, চাঁদাবাজদের তালিকা তৈরি করে তাদেরকে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। সম্প্রতি নগরীর দামপাড়া পুলিশ লাইন্স শ্যূটিং ক্লাবে অনুষ্ঠিত নগরীর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা ও চাঁদাবাজি প্রতিরোধ সমন্বিত মতবিনিময় সভায় সভাপতির বক্তব্যে সিএমপি কমিশনার হাসিব আজিজ এ কথা বলেন। তিনি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা ও চাঁদাবাজি প্রতিরোধে সিটিজেন ফোরাম, ব্যবসায়ী প্রতিনিধি ও বিভিন্ন স্টেক হোল্ডারদের সমন্বয়ে কর্মপন্থা নির্ধারণ করে নিরলসভাবে কাজ করার জন্য থানা ও ট্রাফিক বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট সকল ইউনিট প্রধান এবং সকল পুলিশ সদস্যকে নির্দেশনা প্রদান করেন। সর্বোপরি নগরীকে একটি সত্যিকারের জনবান্ধব পুলিশিং এর মডেল হিসেবে তৈরি করতে সকলের সর্বাত্মক সহযোগিতা কামনা করেন। তিনি চট্টগ্রামে আগ্নেয়াস্ত্র বহনকারী এবং অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের দেখামাত্র ‘বার্স্টফায়ার’ করে হত্যারও নির্দেশ দিয়েছেন সম্প্রতি। বলা জরুরি যে, ৫ আগস্টের পর সবাই আশা করেছিল, নতুন বাংলাদেশে চাঁদাবাজি কমবে, জনজীবনে স্বস্তি আসবে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, চাঁদাবাজি কমেনি বরং কোনো কোনো ক্ষেত্রে বেড়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ মন্তব্য করেছেন, ‘রাজনৈতিক সমঝোতা করা খুব কঠিন কাজ, সে তুলনায় চাঁদাবাজির সমঝোতা অনেক সহজ।’

তিনি আরো বলেছেন, ‘যখন চাঁদাবাজদের এক দল চলে যায়, তখন অন্য দল অনিবার্যভাবে ওই শূন্যস্থানে চলে আসে। এ পর্যবেক্ষণ একটি গভীরতর ব্যবস্থার দিকে ইঙ্গিত করে, যেখানে চাঁদাবাজি কেবল একটি অপরাধ নয়, বরং এটি রাজনৈতিক ক্ষমতা বজায় রাখার একটি কৌশলগত হাতিয়ার। এর অর্থ হলো, রাজনৈতিক পালাবদলের পর সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা ছিল, নতুন সরকার চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেবে এবং একটি স্বচ্ছ ও সুশাসিত বাংলাদেশ গড়ে উঠবে। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়, চাঁদাবাজির চক্র এখনো সক্রিয়। কেবল এর চেহারা এবং নিয়ন্ত্রণকারীদের হাতবদল হয়েছে মাত্র। একটি চক্রের পতনের পর অন্য একটি চক্র সেই শূন্যস্থান পূরণ করছে, যা ইঙ্গিত দেয় যে চাঁদাবাজি কেবল নির্দিষ্ট কোনো রাজনৈতিক দলের সমস্যা নয়, বরং এটি বাংলাদেশের রাজনৈতিক অর্থনীতির একটি গভীর প্রোথিত কাঠামোগত বৈশিষ্ট্য। গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, শুধু ঢাকা শহরে ৫৩টি পরিবহন টার্মিনাল/স্ট্যান্ড থেকে প্রতিদিন আনুমানিক ২.২১ কোটি টাকা চাঁদাবাজি হয়, যা মাসিক ৬০৮০ কোটি টাকায় পৌঁছায়। সারা দেশে বাস ও মিনিবাস খাত থেকে বছরে প্রায় ১, ০৫৯ কোটি টাকা অবৈধভাবে আদায় করা হয়। হাটবাজারের পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা প্রতিদিন প্রকাশ্যে চাঁদাবাজির শিকার হন, যার পেছনে স্থানীয় রাজনীতি ও তথাকথিত সংগঠনগুলোর ছত্রছায়া কাজ করে। চাঁদা দিতে অস্বীকার করলে পণ্য সরবরাহ বন্ধ, ব্যবসা বন্ধের হুমকি বা সরাসরি হামলার মুখোমুখি হতে হয়। সরকারি ও বেসরকারি উন্নয়ন প্রকল্প, টেন্ডার, নির্মাণকাজ, জলমহাল ও বালুমহালের ইজারাসবখানেই দলীয় ও প্রশাসনিক মদদপুষ্ট চাঁদাবাজ চক্র সক্রিয়। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) তথ্য অনুযায়ী, বার্ষিক উন্নয়ন পরিকল্পনা (এডিপি)-তে ২০০৯২০২৩ সালের মধ্যে ১৩২৪ বিলিয়ন ডলার (.৬১.৮০ লাখ কোটি টাকা) দুর্নীতি ও চাঁদাবাজির কারণে নষ্ট হয়েছে।’ সামপ্রতিক সময়ে চাঁদাবাজির ঘটনা বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, পাঁচটি গোষ্ঠী চাঁদাবাজির সঙ্গে সরাসরি জড়িতরাজনীতির সঙ্গে যুক্ত কতিপয় ব্যক্তি; আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ; প্রশাসনে থাকা কতিপয় ব্যক্তি; সন্ত্রাসী গোষ্ঠী; বিচ্ছিন্নভাবে চাঁদাবাজির সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যক্তিরা। বাংলাদেশে এখন সবচেয়ে বেশি হচ্ছে রাজনৈতিক পরিচয়ে বা রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় চাঁদাবাজি। আসলে জনসাধারণ চাঁদাবাজি ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতিতে উদ্বিগ্ন। সাম্প্রতিক সময়ে দেশে খুনের ঘটনাও বৃদ্ধি পেয়েছে, যা সকলকে উদ্বিগ্ন করে তুলছে। তাই চাঁদাবাজদের তালিকা তৈরি করে তাদেরকে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে