চসিক-সিডিএর রশি টানাটানিতে বিব্রত আওয়ামী লীগ

আজাদী প্রতিবেদন | শুক্রবার , ১ অক্টোবর, ২০২১ at ৫:৩৬ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম মহানগরীতে নালায় পড়ে একের পর এক মৃত্যুর ঘটনায় দায় নিচ্ছে না সেবা সংস্থা চসিক ও সিডিএ। এই ধরনের অপ্রত্যাশিত মৃত্যুর ঘটনা রোধে কোন উদ্যোগ না নিয়ে বরং দুই সেবা সংস্থা একে অপরকে দুষছে। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এবং চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান দুইজনই নগর আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতা। বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রামের উন্নয়নে এই দুই সেবা সংস্থাকে অনেকগুলো মেগা প্রকল্প দিয়েছেন। অনেক প্রকল্পের কাজ চলমান, অনেক প্রকল্পের কাজ শুরুর অপেক্ষায় আছে। প্রধান এই দুই সেবা সংস্থার কাজের মধ্যে একে অপরের সাথে সমন্বয় না থাকায় নগরীতে একের পর এক ঘটছে প্রাণঘাতি দুর্ঘটনা। এই নিয়ে এক সংস্থা অপর সংস্থার উপর দোষ চাপাচ্ছে। দুই সংস্থার বিরোধ প্রকাশ্যে চলে এসেছে।
এ অবস্থায় আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন, নগরীতে চসিক ও সিডিএর দুই প্রধান শীর্ষ কর্মকর্তা কেউ এই দুর্ঘটনার দায় না নিয়ে একে অপরের উপর দায় চাপানোর কারণে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে। তারা বলেন, আমরা যারা আওয়ামী লীগ করি-আমরা বিব্রত হচ্ছি।
গত ২৭ সেপ্টেম্বর সোমবার রাত ১০টার দিকে আগ্রাবাদ শেখ মুজিব রোড়ে চশমা কিনতে গিয়ে নালায় পড়ে মারা যান বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রী সেহেরিন মাহবুব সাদিয়া। পুরো নালা আবর্জনায় ভর্তি থাকায় আবর্জনার ভেতর থেকে আর উঠতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐ শিক্ষার্থী। পাঁচ ঘণ্টার পর সেই লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনার দায় নিতে রাজি নয় সিডিএ কিংবা চসিক।
এদিকে ২৫ আগস্ট সকালে ভারী বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা হলে মুরাদপুর এলাকায় খালে পড়ে তলিয়ে যান সালেহ আহমদ নামে এক সবজি ব্যবসায়ী। এখন পর্যন্ত এই ব্যবসায়ীর খোঁজ পাওয়া যায়নি। তারও আগে ৩০ জুন নগরীর ভারী বৃষ্টিতে জলবদ্ধতা হলে ষোলশহর চশমা হিল খালের পাশের সড়ক দিয়ে যাওয়ার সময় একটি সিএনজি ট্যাঙি খালে পড়ে যায়। পড়ার সাথে সাথে খালের ময়লা আর পানির স্রোতে সিএনজি ট্যাঙিটি তলিয়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই মারা যায় ট্যাঙি যাত্রী খাজিদা বেগম ও ট্যাঙি চালক মো. সুলতান।
একের পর এক নগরীর স্ল্যাব ও বেষ্টনীহীন অরক্ষিত নালায় পড়ে মৃত্যুর ঘটনা ঘটলেও কোন সেবা সংস্থাই এর দায়-দায়িত্ব নিচ্ছে না। নগরীর প্রধান প্রধান সড়কের পাশে বড় বড় অনেক ড্রেনের উপর স্ল্যাব নেই। যার কারণে পথচারীদের চলাফেরায় মৃত্যু ঝুঁকি বাড়ছে। অপরদিকে সিডিএ বিমান বন্দর থেকে লালখান বাজার পর্যন্ত এলিভেটেড এঙপ্রেসওয়ের কাজ করছে। এলিভেটেড এঙপ্রেসওয়ের কাজ করতে গিয়ে পতেঙ্গা থেকে আগ্রাবাদ পর্যন্ত সড়কগুলো বেহাল হয়ে পড়েছে। সড়কের মাঝখানে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়ে মৃত্যু ফাঁদে পরিণত হয়েছে।
এই ব্যাপারে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জাতীয় পরিষদের সদস্য ও নগর আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি নঈম উদ্দিন চৌধুরী তার এক প্রতিক্রিয়ায় আজাদীকে জানান, আমাদের সরকার এই নগরীর উন্নয়নের জন্য অনেকগুলো মেগা প্রকল্প বাস্তবায়বন করছেন। কিন্তু সেবা সংস্থা গুলোতে যোগ্য লোকের অভাবে এতোগুলো উন্নয়ন কর্মকান্ডের সুফল জনগণ পাচ্ছে না। এরমধ্যে স্ল্যাববিহীন ও বেষ্টনীহীন অরক্ষিত নালায় পড়ে এক বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রীসহ দুজন মারা গেলেন। এর দায়িত্ব কেউ (চসিক ও সিডিএ) নিতে চাচ্ছে না। যেহেতু সরকার উন্নয়ন কর্মকাণ্ডগুলো পরিচালনা করছেন-এক্ষেত্রে সরকারের দায়বদ্ধতা রয়েছে। সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারেরও এক্ষত্রে দায়-দায়িত্ব আছে। তাকে আইনের আওতায় আনার কথা কেউ বলছে না। সিটি কর্পোরেশন এবং সিডিএতে যারা দায়িত্ব পালন করছেন তারা আমাদের দলের লোক। দুইজনই প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক মনোনীত। এই দুই সেবা সংস্থার উদাসীনতায় মানুষ যখন কষ্ট পাচ্ছে-তখন তারা আওয়ামী লীগকে গালি দেয়। এটা আমাদের গায়ে লাগে। কারণ আমরা আওয়ামী লীগ করি। এই সরকারের আমলে এতো উন্নয়ন অতীতে আর কোন সরকারের আমলে হয়নি। কিন্তু তার সুফল জনগণ পাচ্ছেন না। আমরা যাদেরকে দায়িত্ব দিয়েছি তারা কতটুকু দায়িত্ব পালন করছেন, জনগণ কতটুকু সুফল পাচ্ছেন, এটা দেখতে হবে। যারা নগরীর উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত তাদের অনেক দায়িত্বশীল হওয়া উচিত। প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনের কথা বলেছেন। আমরা নির্বাচনে ভোট চাইতে গিয়ে যাতে জনগণের গালি খেতে না হয় এজন্য উন্নয়নের দায়িত্বপ্রাপ্তদের-দায়িত্বশীল হতে হবে। সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডগুলো এমনভাবে করতে হবে-যাতে জনগণ খুশি হয়, জনগণের মন জয় করা যায়। এরজন্য দায়িত্বপ্রাপ্তদের দায়িত্ব সচেতনতার পরিচয় দিতে হবে।
এই ব্যাপারে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি আলতাফ হোসেন চৌধুরী বাচ্চু আজাদীকে জানান, দুই প্রতিষ্ঠানের (চসিক ও সিডিএ) দুই শীর্ষ ব্যক্তি আমাদের দলেরই। উনাদের দুই ধরনের বক্তব্য দেয়া উচিত না। একে অপরের উপর দায় দিয়ে লাভ নেই। এ ক্ষেত্রে কারো দায়ভার এড়ানো উচিত না। চট্টগ্রামের উন্নয়নের জন্য প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন সংস্থাকে অনেকগুলো মেগা প্রকল্প দিয়েছেন। এগুলোর কাজ চলছে। যেই সংস্থাই কাজ করুক না কেন-এই মেগা প্রকল্পগুলোর কাজের ক্ষেত্রে সকলের সমন্বিত প্রচেষ্টা দরকার। তারা যদি প্রয়োজন মনে করে এই ক্ষেত্রে মহানগর আওয়ামী লীগের সহযোগিতাও নিতে পারেন। আমাদের দলের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ সিনিয়র নেতাদের সাথে বসে সহযোগিতা চাইলে সকলের সমন্বিত প্রচেষ্টায় একটা সুন্দর সমাধান বেরিয়ে আসবে। এতে চট্টগ্রামের জন্য সুফল বয়ে আনবে বলে মনে করি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধছাত্রী উত্ত্যক্তের প্রতিবাদ করায় বিদ্যালয়ে তাণ্ডব
পরবর্তী নিবন্ধতামিমা ফিরতে চাইলে আপত্তি নেই রাকিবের