চসিক রাজস্ব বিভাগের দুই কর্মকর্তা সাময়িক বরখাস্ত

তিন হিসাব সহকারীকে অব্যাহতি ঘষামাজা করে গৃহকরের ২০ কোটি টাকা কমিয়ে দেয়ার ঘটনা

আজাদী প্রতিবেদন | বৃহস্পতিবার , ২৩ অক্টোবর, ২০২৫ at ৬:০৯ পূর্বাহ্ণ

বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ইছহাক ব্রাদার্স ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড ও ইনকনট্রেড লিমিটেড এর হোল্ডিংএর বিপরীতে বার্ষিক মূল্যায়নকৃত পৌরকর (গৃহকর ও অন্যান্য রেইট) থেকে ঘষামাজা করে ২০ কোটি টাকা করে কমিয়ে দেয়ার ঘটনায় জড়িত চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরশনের (চসিক) রাজস্ব বিভাগের দুই কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। একই ঘটনায় জড়িত সংস্থাটির একই বিভাগের তিন হিসাব সহকারীকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। তাদের সচিবালয় বিভাগে সংযুক্ত করা হয়। এছাড়া ইছহাক ব্রাদার্স ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড ও ইনকনট্রেড লিমিটেড এর প্রকৃত মূল্যায়নের উপর ভিত্তি করে পুনরায় আপিল রিভিউ বোর্ডে শুনানি করে চূড়ান্ত মূল্যায়ন করার জন্য প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তাকে নির্দেশনা দেয়া হয়। গতকাল বুধবার জারি করা পৃথক চারটি অফিস আদেশের মাধ্যমে রাজস্ব শাখার দুই কর্মকর্তা ও হিসাব সহকারীর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। এতে স্বাক্ষর করেন চসিক মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। পুনরায় আপিল রিভিউ বোর্ডে শুনানি করে চূড়ান্ত মূল্যায়ন করার জন্য প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তাকে নির্দেশনা দিয়ে দাপ্তরিক পত্রটি দেন চসিকের সচিব আশরাফুল আমিন।

এ বিষয়ে সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন আজাদীকে বলেন, কর্পোরেশনে স্বচ্ছতা নিশ্চিতে এবং দুর্নীতি ও অনিয়মকে প্রশ্রয় না দিতে দোষীদের বিরুদ্ধে তড়িৎ ব্যবস্থা নিয়েছি। কর্পোরেশনে কেউ কোনো দুর্নীতি ও অপরাধ করে ছাড় পাবে না। যে অনিয়ম ও দুর্নীতি করবে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

যাদের বরখাস্ত হয় : সাময়িক বরখাস্ত হওয়া দুইজন হচ্ছেকর কর্মকর্তা নুরুল আলম ও উপকর কর্মকর্তা জয় প্রকাশ সেন। তাদের বরখাস্ত করে জারি করা পৃথক দুটি অফিস আদেশে বলা হয়, প্রতারণার মাধ্যমে বার্ষিক মূল্যায়নে ফিল্ড বুকে ঘষামাজা করে ২০ কোটি টাকা কমিয়ে দেয়ার অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন কর্মচারী চাকরি বিধিমালা, ২০১৯ এর বিধি ৫৫ () মোতাবেক চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হলো। সাময়িক বরখাস্তকালে বিধি মোতাবেক খোরাকি ভাতা প্রাপ্য হবেন।

দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া তিন হিসাব সহকারী হচ্ছেনমঞ্জুর মোর্শেদ, রূপসী রাণী দে ও আহসান উল্লাহ। এ বিষয়ে জারি করা পৃথক দুটি অফিস আদেশে বলা হয়, কর্তৃপক্ষের অনুমোদনক্রমে তাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব হতে অব্যাহতি প্রদানপূর্বক সচিবালয় বিভাগে সংযুক্ত করা হলো।

বরখাস্ত হওয়া নুরুল আলম ইছহাক ব্রাদার্স ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড ও ইনকনট্রেড লিমিটেড দুটি প্রতিষ্ঠানের পৌরকর নির্ধারণে হওয়া মূল্যায়নে ঘষামাজায় জড়িত। জয় প্রকাশ সেন ইছহাক ব্রাদার্স ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড এর ঘটনায় জড়িত। ইনকনট্রেড লিমিটেড এর ঘটনায় সহায়তা করেছেন দায়িত্ব হতে অব্যাহতি পাওয়া মঞ্জুর মোরশেদ ও রূপসী রাণী দে। অব্যাহতি পাওয়া আহসান উল্লাহ্‌ তার দায়িত্ব যথাযথভাবে না করে কর কর্মকর্তা ও উপকর কর্মকর্তার কথামত কাজ করেছেন বা করতে বাধ্য হয়েছেন বলে এ ঘটনায় ঘটিত চসিকের একটি তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

এদিকে ইনকনট্রেড লিমিটেডএর ঘটনায় তৎকালীন উপকর কর্মকর্তা আবদুল কাদের এর জড়িত থাকার সত্যতা পেয়েছে চসিক। তবে অবসরে থাকায় তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। চসিক সূত্রে জানা গেছে, ইছহাক ব্রাদার্স ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড ও ইনকনট্রেড লিমিটেডএর পৌরকর নির্ধারণে ২০১৭২০১৮ অর্থবছরে বার্ষিক মূল্যায়ন করা হয়। এর মধ্যে ইছহাক ব্রাদার্সের হোল্ডিংএর বিপরীতে ২৬ কোটি ৩৮ লাখ ১৯ হাজার ২৫০ টাকা ও ইনকনট্রেড লিমিটেডএর হোল্ডিং এর বিপরীতে ২৫ কোটি ৬৭ লাখ ৪ হাজার ৭৫০ টাকা পৌরকর নির্ধারণ করেন এসেসর।

পরবর্তীতে আপিল রিভিউ বোর্ডের শুনানিতে উপস্থাপনের সময় ‘ফিল্ডবুক’ এবং ‘পি ফরম’ (কর নির্ধারণ ও মূল্যায়নের বিরুদ্ধে আবেদন ফরম) থেকে ‘২’ সংখ্যাটি মুছে দেয়া হয়। অর্থাৎ ২৫ কোটি ও ২৬ কোটি থেকে ২ মুছে দেয়া হয়। এতে কমে যায় ২০ কোটি টাকা। ফলে ইছহাক ব্রাদার্সের হোল্ডিংএর বিপরীতে মূল্যায়ন ৬ কোটি ৩৮ লাখ ১৯ হাজার ২৫০ টাকা এবং ইনকনট্রেড লিমিটেড এর মূল্যায়ন ৫ কোটি ৬৭ লাখ ৪ হাজার ৭৫০ টাকা দেখিয়ে শুনানি করে চূড়ান্ত মূল্য নির্ধারণ করা হয়।

ইছহাক ব্রাদার্স এর শুনানি হয়েছে ২০২১ সালের ১৩ জুন এবং ইনকনট্রেড লিমিটেড এর শুনানি হয়েছে ২০২০ সালের ২৪ ডিসেম্বর। পরবর্তীতে অডিটে বিষয়গুলো ধরা পড়লেও আমলে নেননি চসিকের তৎকালীন মেয়রসহ উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। সর্বশেষ ডা. শাহাদাত হোসেন মেয়র হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর গত ১৩ জানুয়ারি চসিকের আইন কর্মকর্তা মহিউদ্দিন মুরাদকে আহ্বায়ক ও ভারপ্রাপ্ত প্রধান হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির চৌধুরীকে সদস্য সচিব করে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে। গত সোমবার ও মঙ্গলবার সিটি মেয়রকে পৃথক দুটি তদন্ত রিপোর্ট হস্তান্তর করা হয়। এতে ঘষামাজা করে ২০ কোটি টাকা কমিয়ে দেয়ার সত্যতা পাওয়া যায়।

পুনরায় রিভিউ শুনানির নির্দেশ : প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তাকে দেয়া চিঠিতে বলা হয়, চসিকের রাজস্ব বিভাগের দক্ষিণ পতেঙ্গা মহল্লার ফিল্ড বই২ এর ১০০ পৃষ্ঠায় হোল্ডিং নং ৩১৮/৩৩১ এবং দক্ষিণ মধ্যম হালিশহর মহল্লার ফিল্ড বই ২ এর ১০ পৃষ্ঠায় হোল্ডিং নং ৫১৫//৫৯৪ এর বার্ষিক মূল্যায়ন সাদা ফ্লুইড ব্যবহার করে মূল্যায়ন টাকার উপর ঘষামাজা করার সত্যতা তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে। পূর্বের রিভিউ বোর্ডের সিদ্ধান্ত বাতিল করে আপিল রিভিউ বোর্ডে শুনানি করে চূড়ান্ত মূল্যায়ন নির্ধারণ করতে হবে।

চিঠিতে বলা হয়, প্রকৃত মূল্যায়ন ধরে রিভিউ বোর্ডে শুনানি করতে হবে। অর্থাৎ ইছহাক ব্রাদার্সের হোল্ডিংএর বিপরীতে ২৬ কোটি ৩৮ লাখ ১৯ হাজার ২৫০ টাকা এবং ইনকনট্রেড লিমিটেডএর হোল্ডিং এর বিপরীতে ২৫ কোটি ৬৭ লাখ ৪ হাজার ৭৫০ টাকার প্রকৃত মূল্যায়ন ধরে রিভিউ বোর্ডে শুনানি করে চূড়ান্ত মূল্যায়ন নির্ধারণ করতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধভোটের আগে সরকারের বিতর্কিত ব্যক্তিদের চলে যেতে হবে : খসরু
পরবর্তী নিবন্ধবিদ্যুতের তার ছিঁড়ে পড়ল গায়ে, দুই যুবকের মর্মান্তিক মৃত্যু