চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (যান্ত্রিক) সুদীপ বসাকের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধান করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এর অংশ হিসেবে চসিকের কাছে দরপত্র ও ক্রয় সংক্রান্ত ১৩ ধরনের নথি চেয়েছে। আগামী ১০ ডিসেম্বরের মধ্যে তথ্যগুলো সরবরাহের জন্য চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে গত বৃহস্পতিবার চিঠি দিয়েছেন দুদকের উপ-পরিচালক মো. আনোয়ারুল হক।
দুদক সূত্রে জানা গেছে, সুদীপ বসাকের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ অনুসন্ধান করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য মো. আনোয়ারুল হকের নেতৃত্বে ৩ সদস্যের অনুসন্ধান টিম গঠন করা হয়। অন্য সদস্যরা হচ্ছেন- দুদক সমন্বিত বগুড়া জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আমিনুল ইসলাম ও দুদক প্রধান কার্যালয়ের উপ-সহকারী পরিচালক মো. আলতাফ হোসেন।
যেসব নথি চাওয়া হয়েছে : দুদক যেসব নথি চেয়েছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- হালিশহর গার্বেজ ট্রিটমেন্ট প্লান্টের জন্য যন্ত্রপাতি ক্রয়, ২০১৫ হতে ২০১৯ সন পর্যন্ত খাল খনন প্রকল্প, এমপ্রিভিয়াস এস্কেভেটর মেশিন ক্রয় ও ২০১৩ সালে সাগরিকা স্টোর ইয়ার্ড ও হালিশহর ডাম্পিং স্টেশনের জন্য কেনা দুইটি ওয়ে ব্রীজের যাবতীয় নথি চাওয়া হয়। এসবের ক্রয় ও প্রকল্প সংক্রান্ত অনুমোদনপত্র, অনুমোদিত প্রাক্কলন, বরাদ্দপত্র, দরপত্র বিজ্ঞপ্তি, ঠিকাদারের দাখিলকৃত দরপত্রসমূহ, দরপত্রের তুলনামূলক বিবরণী, কার্যাদেশ, মালামাল বুঝে পাওয়া সংক্রান্ত রেকর্ডপত্র, ঠিকাদারকে পরিশোধিত বিল ভাউচারের কপি ও ক্রয়কৃত মালামালের তালিকা। এমপ্রিভিয়াস এক্সকেভেটর মেশিনটি মেরামত করা হয়ে থাকলে এ সংক্রান্ত বিল ভাউচারও দিতে বলে দুদক। খাল খননের ক্ষেত্রে প্রতিটি খালের জন্য আলাদা আলাদা নথি ট্যাগ দিয়ের চিহ্নিত করে দিতে বলা হয়। এছাড়া বিএমটিএফ থেকে ক্রয়কৃত লো-বেড গাড়ি বিক্রি নথি সরবরাহ করতে বলে।
জানা গেছে, গার্বেজ ট্রিটমেন্ট প্লান্টটি নিয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ও অনুসন্ধান শুরু করে। চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (উন্নয়ন) ও স্থানীয় সরকার পরিচালক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বিষয়টি তদন্ত করছেন। চসিকের সাবেক প্রকৌশলী শামসুল হুদা সিদ্দিকী দুদকে অভিযোগ করেন- গার্বেজ ট্রিটমেন্ট প্লান্টের জন্য এডিবি’র বরাদ্দকৃত ২৩ কোটি টাকা নামে মাত্র কাজ করে সিংহভাগ টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে।
দুদকের দেয়া চিঠির সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সালের ২৫ আগস্ট তারিখে ৩৪৮০১৬ ও ৩৯৭৬৩৫ নং টেন্ডার আইডির বিপরীতে ৫০ টন ওয়ে ব্রীজ সরবরাহ ও স্থাপন কাজেও অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগ আছে- ২০১৭ সালের ৩১ অক্টোবর ১২৪২ ও ৩৯৭৬৩৫ টেন্ডার আইডি’র বিপরীতে ৫০ টন ওয়ে ব্রীজ সরবরাহ ও স্থাপন কাজেরও। এর আগে চসিকে দেয়া দুদকের অপর এক চিঠি সূত্রে জানা গেছে, ৫০ টন ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন দুই ইউনিট ওয়ে ব্রিজ সরবরাহ ও স্থাপন প্রকল্পে (কার্যাদেশ ৮৩/১৭-১৮ অর্থ বছর) ৮০ লাখ টাকা কাজে সর্বনিম্ন দরদাতাকে কার্যাদেশ না দিয়ে দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে একটি প্রতিষ্ঠানকে দেয়ার অভিযোগ আছে সুদীপ বসাকের বিরুদ্ধে। তাই এ সংক্রান্ত অনুমোদনপত্র অনুমোদিত প্রাক্কলন, বরাদ্দপত্র, দরপত্র বিজ্ঞপ্তি, ঠিকাদারের দাখিলকৃত দরপত্রসমূহ, দরপত্রের তুলনামূলক বিবরণী, কার্যাদেশ, সমাপ্তি প্রতিবেদন ও এমবি এবং ঠিকাদারকে পরিশোধিত বিল ভাউচারের কপি সরবরাহ করতে বলা হয়।
এছাড়া অনিয়মের অভিযোগ থাকায় লং বুম স্কেভেটর এর বিভিন্ন খুচরা যন্ত্রাংশ সরবরাহের জন্য আহবানকৃত দরপত্রে ৩৪৮০১৭ নং আইডির বিপরীতেও যাবতীয় তথ্য চেয়েছে দুদক।
দুদক সূত্র জানায়, গত বছরের ১৪ অক্টোবর চসিকের বিষয়ে গণ শুনানি হয়েছিল। এতে চসিকের সাবেক প্রকৌশলী শামসুল হুদা সিদ্দিকী অভিযোগ করেন, ‘সাগরিকা রোডে সিটি কর্পোরেশনের পাথর ডিপোতে ২ কোটি টাকার পাথর গ্রহণ ও বিতরণ হিসাবে গড়মিল দেখিয়ে আত্মসাৎ করা হয়।’ বিষয়টি আমলে নিয়েও তদন্ত করছে দুদক। তদন্তের জন্য পাথর গ্রহণ ও বিতরণ সংক্রান্ত রেজিস্টারের সত্যায়িত ফটোকপি এবং পাথর গ্রহণের চালান নং তারিখ, সরবরাহকারীর নাম ও ঠিকানা, গৃহীত পাথরের পরিমাণ, বিতরণকৃত পাথরের চালান ও তারিখ, গ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানের নাম ও ঠিকানা, পাথরের পরিমাণ ও দায়িত্বরত কর্মকর্তা-কর্মচারীর নাম, পদবী ও ঠিকানাসহ যাবতীয় চেয়েছে দুদক।
এছাড়া সিটি কর্পোরেশনের ব্যবহৃত যানবাহনে ২০১৯ সালের সরবরাহকৃত জ্বালানি এবং চসিকের পে লোডার ও ডাম্প ট্রাক ভাড়া সংক্রান্ত তথ্য চাওয়া। চসিক প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন দায়িত্ব নেয়ার পর জ্বালানি বিষয়ে তদন্ত করেন।
চসিকের সাবেক প্রকৌশলী শামসুল হুদা সিদ্দিকী গণশুনানিতে অভিযোগ করেন, ‘২০১৬ সালের নভেম্বর মাসে বিভিন্ন তারিখে চসিকের টলি নং ১২ থেকে ৩৭ পর্যন্ত টলিসসমূহের মেরামত ভুয়া প্রতিষ্ঠানকে দেয়া হয়েছে। অভিযোগটি আমলে নিয়ে মেরামত সংক্রান্ত নথির সত্যায়িত ফটোকপি চাওয়া হয়েছে।
দুদকের নথি তলবের বিষয়ে চসিক প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন বলেন, দুদক নথিপত্র ও তথ্য চেয়ে চিঠি দিয়েছে বলে জেনেছি। তবে এখনো চিঠিটি অফিসিয়ালি আমি পাইনি।’