একটি উন্নয়ন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মো. গোলাম ইয়াজদানীকে মারধরের পর টাইগারপাসস্থ চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের অস্থায়ী কার্যালয়ে নিরাপত্তা জোরদার করা হচ্ছে। এর অংশ হিসেবে ১০ জন সশস্ত্র আনসার সদস্য নিয়োগের উদ্যোগ নিয়েছে সংস্থাটি। এ বিষয়ে আনসার ও ভিডিপি চট্টগ্রাম মহানগর (উত্তর জোন) জোন অধিনায়ককে গতকাল চিঠি দেয়া হয়েছে।
এছাড়া ঘটনায় চসিকের কোনো কর্মকর্তা–কর্মচারীর ইন্ধন আছে কিনা তা খতিয়ে দেখতে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। কমিটি ভবিষ্যতে নিরাপত্তা জোরদারের বিষয়েও করণীয় ঠিক করবেন। এদিকে দায়িত্বে অবহেলার কারণে চসিকের নিজস্ব নিরাপত্তা বাহিনীর ৮ জন সদস্যের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম দৈনিক আজাদীকে বলেন, আনসার নিয়োগের জন্য আমরা চিঠি দিয়েছি। পাশাপাশি আমরা পুলিশও চেয়েছি। মেয়র মহোদয় এখানে অফিস করেন। কাজেই নিরাপত্তা জোরদার করতে হবে। তদন্ত কমিটি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সিটি কর্পোরেশনের কারো ইন্ধন আছে কিনা তা জানার জন্য নিজস্ব ইন্টারেস্টে কমিটি করেছি। সিটি কর্পোরেশনের কি পরিমাণ আর্থিক ক্ষতি হয়েছে এবং ভবিষ্যতে নিরাপত্তা বিধানের জন্য কি করণীয় আছে তার সুপারিশ করবে কমিটি।
চসিকের সচিব খালেদ মাহমুদ বলেন, অভ্যন্তরীণ কারো সম্পৃক্ততা থাকলে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে। এখানে মাফ পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই, সে যেই হোক না কেন। দায়িত্বে অবহেলার জন্য ঘটনার সময় নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ৮ জনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান তিনি।
প্রসঙ্গত, হামলার শিকার মো. গোলাম ইয়াজদানী স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী। গত বছরের আগস্ট মাসে তাকে চসিকের গৃহীত ‘চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের আওতায় এয়ারপোর্ট রোডসহ বিভিন্ন সড়কসমূহ উন্নয়ন ও গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোগত উন্নয়ন’ প্রকল্পের পরিচালকের দায়িত্ব দেয়া হয়। গত রোববার চসিকের নিজ দপ্তরে তার উপর হামলা করে একদল ঠিকাদার।
নিরাপত্তা জোরদার : গতকাল দুপুরে চসিকের টাইগারপাস কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে দেখা গেছে, প্রধান ফটকে চসিকের নিজস্ব নিরাপত্তা কর্মী বাহিনীর সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছেন। এসময় চসিকে কোনো দর্শনার্থী প্রবেশ করতে চাইলে তাদের নাম রেজিস্ট্রি খাতায় এন্ট্রি করছেন তারা। সেখানে দশনার্থী কার কাছে যাবেন তা উল্লেখ করতে হচ্ছে। গতকালের আগে টাইগারপাস কার্যালয়ে দর্শনার্থীর নাম এন্ট্রি করা হতো না। অবশ্য আন্দরিকল্লাস্থ নগর ভবনে কার্যক্রম পরিচালনার সময় এন্ট্রি করা হতো।
চসিকের প্রকৌশলী ও উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপকালে তারা জানিয়েছেন, দপ্তরে ঢুকে প্রকল্প পরিচালককে মারধরের ঘটনায় তারা শঙ্কিত। ঘটনার সময় মেয়র দপ্তরের সামনে দুইজন এবং প্রধান ফটকের সামনে কয়েকজন চসিকের নিজস্ব নিরস্ত্র নিরাপত্তা কর্মী দায়িত্ব ছিলেন। মারধরের ঘটনার সময় কেউ এগিয়ে না আসায় তাদের শঙ্কা বেড়েছে।
এদিকে নিরাপত্তার বিষয়টি সামনে আসায় সশস্ত্র আনসার সদস্য নিয়োগের উদ্যেগ নেয়া হয়। এ বিষয়ে গতকাল চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম আনসার ও ভিডিপি চট্টগ্রাম মহানগর (উত্তর জোন) জোন অধিনায়ককে চিঠি দেন।
এতে বলা হয়, সিটি মেয়র প্রতিমন্ত্রী মর্যাদাসম্পন্ন একজন জনপ্রতিনিধি। রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন জনগুরুত্বপূর্ণ কাজে বিভিন্ন দেশি–বিদেশি সংস্থার উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাবৃন্দ প্রতিনিয়ত টাইগারপাসস্থ চসিকের প্রধান কার্যালয়ে আসেন। তাদের নিরাপত্তার প্রয়োজনে একজন পিসি, একজন এপিসি ও আটজন আনসার সদস্যসহ মোট ১০ জনের একটি টিম পাঁচটি শটগান এবং ১০০ রাউন্ড কাতুর্জসহ নিয়োগ করা প্রয়োজন। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ করা হয় চিঠিতে।
তদন্ত কমিটি : চসিকের রাজস্ব কর্মকর্তা সৈয়দ শামসুল তাবরীজকে আহ্বায়ক করে গঠিত কমিটির অপর দুই সদস্য হচ্ছেন আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা জোনায়েদ কবীর সোহাগ ও আইন কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মনীষা মহাজন। প্রধান নিবাহী কর্মকর্তার স্বাক্ষরে গঠিত তদন্ত কমিটিকে সাত কার্যদিবসের মধ্যে রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়।
কমিটির জন্য পাঁচটি কার্যপরিধি নির্ধারণ করা হয়। এগুলো হচ্ছে– ঠিকাদার কর্তৃক সংঘটিত ঘটনায় চসিকের কোনো কর্মকর্তা–কর্মচারী জড়িত আছে কিনা তা খতিয়ে দেখা। ঘটনায় কোন কোন ঠিকাদার জড়িত ছিলেন এবং ঘটনার কারণ উদ্ঘাটন করা। সংঘটিত ঘটনায় চসিকের কি পরিমাণ আর্থিক ক্ষতি সাধন করা হয়েছে তা নিরূপণ করা। এছাড়া ভবিষ্যতে এরূপ ঘটনা আর না ঘটার জন্য কি কি পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে এবং কর্পোরেশনের নিরাপত্তার জোরদার করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সুপারিশ দাখিল করতে বলা হয়।












