চসিক ও সিডিএর দায় যাচাই, খালের রেলিংয়ে দৈর্ঘ্যের অমিল পেল দুদক

রিকশাসহ পড়ে শিশুর মৃত্যু

আজাদী প্রতিবেদন | সোমবার , ২৮ এপ্রিল, ২০২৫ at ৬:১৪ পূর্বাহ্ণ

নগরীর চকবাজারের হিজরা খালে ব্যাটারিচালিত রিকশাসহ পড়ে শিশু মৃত্যুর ঘটনায় চসিক (চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন) ও সিডিএ’তে (চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ) অভিযান চালিয়েছে দুদক। অভিযানে অভিযোগ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদ এবং সংশ্লিষ্ট আংশিক রেকর্ডপত্র সংগ্রহ করা হয়েছে। এছাড়া অভিযান পরিচালনাকারী টিম নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে খাল পুনঃখনন, সমপ্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন সংশ্লিষ্ট চলমান কাজ সরেজমিন পরিদর্শনও করে। এ সময় প্রকল্পের ডিপিপি’তে উল্লিখিত প্রস্তাবিত রেলিংয়ের দৈর্ঘ্যের সাথে পরিদর্শনকালে প্রাপ্ত দৈর্ঘ্যের মিল খুঁজে পায়নি টিম। এছাড়া আরও কিছু অনিয়ম দৃষ্টিগোচর হয়েছে বলে জানিয়েছে দুদক।

দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয়, চট্টগ্রাম১ এর সহকারী পরিচালক মো. রিয়াজ উদ্দিনের নেতৃত্বে এ অভিযান পরিচালিত হয়। দুদক জানায়, অভিযোগ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার সাথে আলোচনা করা হয়েছে। এ বিষয়ে তিনি জানান, গত ১৮ এপ্রিল নগরীর হিজরা খালে পড়ে এক শিশুর মৃত্যুর ঘটনার প্রেক্ষিতে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সচিবকে আহ্বায়ক করে চার সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।

সিডিএ’তে অভিযান শেষে দুদক কর্মকর্তা মো. রিয়াজ উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, সমপ্রতি খালে (নালায়) পড়ে একটি শিশু মারা গেছে। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন ও সিডিএর এক্ষেত্রে কোনো দায়দায়িত্ব আছে কি না, মূলত আমরা সেটি যাচাই করছি। আমরা সিডিএ চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলেছি। জলাবদ্ধতা নিরসনের প্রকল্প পরিচালকসহ সংশ্লিষ্ট আরও যারা আছেন তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। সিডিএর কাজের আওতায় ৩৬টি খাল আছে। ইতোমধ্যে ১৯টি খালের কাজ উনারা সমাপ্ত করেছেন। যে হিজরা খালে র্দুর্ঘটনাটা ঘটেছে, সেই খালে সিডিএ মাত্র কাজটা শুরু করেছে। কাজটা এখনো শেষ হয়নি, চলমান আছে। যেসব খালের কাজ উনারা সম্পন্ন করেছেন, সেগুলোর তীরে উনারা রেলিং দিয়েছেন বলে আমাদের জানিয়েছেন। আমরা সরেজমিনে গিয়ে সেটা দেখব। আমরা প্রকল্পের যে নকশা পেয়েছি, সেখানে রেলিংয়ের বিষয়টি উল্লেখ আছে। কিন্তু তারা কতটুকু কাজ করেছে, সেটা সরেজমিনে গিয়ে দেখব। শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় সিডিএ কেন তদন্ত কমিটি গঠন করেনি সেটা খতিয়ে দেখা হবে।

এ বিষয়ে সিডিএ চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. নুরুল করিম সাংবাদিকদের বলেন, দুদকের নিয়মিত একটা পর্যবেক্ষণ থাকে। শুধু সিডিএ নয়, তারা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বিভিন্নসময় যায়, বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করে, এটা তাদের নিয়মিত কাজের অংশ। সে হিসেবে দুদকের একটি টিম আমাদের এখানে এসেছিল। আমরা যে জলাবদ্ধতা প্রকল্পটি করছি, সেই প্রকল্পের বিষয়ে তারা কিছু তথ্য আমাদের কাছে জানতে চেয়েছে। আমাদের প্রকল্প পরিচালক উনাদের সবকিছু জানিয়েছেন। উনারা খুবই কনসার্ন যে, কিছুদিন আগে এখানে একটি শিশু মারা গেছে, অত্যন্ত দুঃখজনক। এ বিষয়ে উনারা জানতে চেয়েছেন। দ্রুতগামী একটি ইঞ্জিন রিকশা উল্টে গিয়ে দুর্ঘটনাটা ঘটেছে। তিনি বলেন, ৩৬টি খালে সিডিএ’র কাজ চলছে, এটা সেনাবাহিনী করছে। সিডিএ সেখানে সমন্বয়ের কাজ করছে, মন্ত্রণালয় থেকে সেনাবাহিনীর মাধ্যমে কাজটি সম্পন্ন করা হচ্ছে। যে খালে দুর্ঘটনা ঘটেছে, সেখানে খালটির কাজ আমরা এখনো শুরু করিনি। পর্যায়ক্রমে খালের কাজ শুরু হচ্ছে। যেসব খালের কাজ শেষ করেছি, তারা (দুদক) জানতে চেয়েছে যে সেখানে কোনো প্রটেকশনের ব্যবস্থা আমরা করেছি কী না। যেসব খালের কাজ সম্পন্ন হয়েছে, সবগুলো খালেই আমরা প্রটেকশনের ব্যবস্থা নিয়েছি, প্রকল্প অনুযায়ী সবগুলোতে দেড় থেকে দুই ফুট করে রেলিং দেওয়া আছে। আমরা বিষয়টি দুদককে জানিয়েছি। দুদক কর্মকর্তা মো. রিয়াজ উদ্দিন বলেন, প্রকল্প সংশ্লিষ্ট অন্যান্য রেকর্ডপত্রাদি সংগ্রহ করে এবং পর্যালোচনা করে এনফোর্সমেন্ট টিম কমিশন বরাবর দ্রুত পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন পাঠাবে।

প্রসঙ্গত, গত ১৮ এপ্রিল সন্ধ্যায় বৃষ্টির মধ্যে নগরীর চকবাজারের কাপাসগোলায় হিজরা খালে যাত্রীবাহী একটি ব্যাটারিচালিত রিকশা পড়ে যায়। এতে ৬ মাস বয়সী সেহরিশ নামের এক শিশু তলিয়ে যায়। ১৪ ঘণ্টা পর কয়েক কিলোমিটার দূরে চাকতাই খাল থেকে তার লাশ উদ্ধার হয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধনিলামে উঠল এস আলমের স্টিল মিল, বিদ্যুৎকেন্দ্র ও ভোজ্যতেল কারখানা
পরবর্তী নিবন্ধদুই পুত্রবধূসহ এপ্রিলেই দেশে ফিরছেন খালেদা জিয়া