চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ‘অগ্রগতি’ দেখে প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজনের প্রশংসা করেছেন স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ। তিনি মনে করেন, প্রশাসকের দায়িত্বকালীন নাগরিক সেবা কার্যক্রমে গতি এসেছে। এসময় তিনি বলেন, এখনকার চট্টগ্রাম নগরীকে পরিচ্ছন্ন ও দুর্গন্ধমুক্ত মনে হয়। গতকাল রোববার সকালে টাইগারপাস্থ চসিকের অস্থায়ী কার্যালয়ে প্রশাসক ও কর্মকর্তাদের সাথে চলমান প্রকল্পসমূহের অগ্রগতি নিয়ে পর্যালোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। এতে সভাপতিত্ব করেন প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন।
সভা শেষে হেলালুদ্দীন আহমদ স্থানীয় সরকার বিভাগের বাস্তবায়িত ফরেইন, কমনওয়েলথ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অফিস-এফসিডিও ও ইউএনডিপি সহায়তায় দেয়া পয়ঃনিষ্কাশন এবং স্যানিটেশনের উন্নয়নে ভ্যাকুয়াম ট্যাগ এর ৪টি ট্রাক চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনকে হস্তান্তর করেন।
এদিকে আলোচনা সভায় হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, চসিকের বর্তমান প্রশাসকের দায়িত্বকালীন চট্টগ্রাম নগরীর সেবা কার্যক্রম বিশেষ করে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, আলোকায়ন, রাস্তা-ঘাটের মেরামত ও উন্নয়ন কাজের অগ্রগতি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। সরকারের সর্বোচ্চ মহলেও কর্পোরেশনকে সর্বোচ্চ সাপোর্ট দিতে মন্ত্রণালয়ে নির্দেশনা দিয়ে রাখা আছে।
চট্টগ্রাম নগরীর লাইফলাইন খ্যাত পোর্ট কানেকটিং (পিসি) রোডের নির্মাণকাজ দ্রুততার সাথে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ায় প্রশাসককে ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানান তিনি। তিনি বলেন, প্রশাসক দায়িত্ব নিয়ে রাত-দিন পরিশ্রম ও তোড়জোড় করে যেভাবে পিসি রোডের নির্মাণ কাজে গতি ফিরিয়ে এনেছেন তা প্রশংসনীয়। এই সড়কটির কাজ পুরোপুরি শেষ হলে ওই অঞ্চল ও চট্টগ্রাম বন্দর কেন্দ্রিক ট্যাংক-লরি ও ঢাকা-চট্টগ্রাম দূরপাল্লার বাসগুলো নির্বিঘ্নে চলাচল করতে পারবে। দুর্ভোগ লাঘব হবে জনসাধারণের।
তিনি বলেন, বর্তমানে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের আওতায় সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে চলমান মেগা প্রকল্পের কাজ শেষ হলে নগরীর জলাবন্ধতা আর থাকবে না। এই কাজ চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের তত্ত্বাবধানে হলে ভালো হতো। কারণ অতীতের অভিজ্ঞতা ও জনবলের সক্ষমতা আছে একমাত্র কর্পোরেশনের। কর্পোরেশনে অনেক প্রবীণ ও দক্ষ প্রকৌশলী আছেন যাদের নখদর্পণে পুরো চট্টগ্রাম নগরীর মানচিত্র। তারা জানেন নগরীর খালগুলো কি অবস্থায় কোথায় কয়টা আছে। তিনি বলেন, কর্ণফুলী নদীর ড্রেজিং কার্যক্রম সম্পন্ন হলে চট্টগ্রাম বন্দরের নাব্যতা বৃদ্ধি পাবে, বহিনোঙ্গরে জট কমার পাশাপাশি জাহাজ সহজে অবতরণ করতে পারবে। সচিব চট্টগ্রাম উন্নয়নের স্বার্থে জলাবদ্ধতাসহ অন্য সকল উন্নয়ন ও সেবা কার্যক্রম চসিককে চউক, ওয়াসা ও অন্য সংস্থাগুলোর সাথে সমন্বয় করার আহ্বান জানান।
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন বিভিন্ন সরকারি সংস্থার বকেয়া পাওনাদি দ্রুত পাওয়ার পাশাপাশি নগরীর অবকাঠামো ব্যবহারকারী সরকারি সংস্থাগুলোর কাছ থেকে ১ শতাংশ সার্ভিস চার্জ প্রাপ্তি নিশ্চিত ও কর্পোরেশনের ১২শ কোটি টাকা দেনা পরিশোধে স্থানীয় সরকার সচিবের সহযোগিতা কামনা করলে তিনি মন্ত্রণালয়ে আলোচনা সাপেক্ষে সহযোগিতার আশ্বাস দেন।
সভায় উপস্থিত ছিলেন চসিক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী মুহাম্মদ মোজাম্মেল হক, সচিব মোহাম্মদ আবু শাহেদ চৌধুরী, প্রধান প্রকৌশলী লে. কর্নেল সোহেল আহামদ, প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সেলিম আকতার চৌধুরী, রাজস্ব কর্মকর্তা সাহেদা ফাতেমা চৌধুরী ও চসিক আঞ্চলিক অফিস-৬ এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আফিয়া আকতার, প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ এ কে এম রেজাউল করিম, প্রশাসকের একান্ত সচিব মো. আবুল হাসেম, অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম মানিক, অতিরিক্ত প্রধান হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা হুমায়ুন কবীর চৌধুরী প্রমুখ।
সভায় কর্পোরেশনের শ্রমিক-কর্মচারী লীগ (সিবিএ) এর নেতৃবৃন্দ চসিকে কর্মরত অস্থায়ী শ্রমিক-কর্মচারীদের স্থায়ীকরণে স্থানীয় সরকার সচিবকে অবহিত করে মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপ কামনা করলে, তিনি এ বিষয়ে আলাপ করবেন বলে জানান। এসময় সিবিএ নেতৃবৃন্দের মধ্যে ফরিদ আহমদ, মুজিবুর রহমান, জাহিদুল আলম চৌধুরী, বিপ্লব কুমার চৌধুরী, রতন দত্ত, আব্দুল মওদুদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।