সরকার পতনের পর চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) ওয়ার্ড কার্যালয়ে ভাঙচুরের ঘটনায় ৪ কোটি ৩১ লাখ ৬৩ হাজার ২০০ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। হামলায় চসিকের ৪১ ওয়ার্ডের মধ্যে ২৬টি ওয়ার্ড কার্যালয় ভাঙচুর করা হয়। এছাড়া সংরক্ষিত ১৪টি কাউন্সিলর কার্যালয়ের মধ্যে ৫টিতে ভাঙচুর করা হয়। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ণয় শেষে গতকাল প্রকাশিত প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে আসে।
বিষয়টি দৈনিক আজাদীকে নিশ্চিত করেন চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, সচিবালয় বিভাগ থেকে প্রতিটি ওয়ার্ডের ওয়ার্ড সচিবদের সাথে যোগাযোগ করে ক্ষয়ক্ষতির প্রাথমিক তালিকা করা হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির বিষয়টি মন্ত্রণালয়কে জানাব। চেষ্টা থাকবে দ্রুত সংস্কার করার। কিছু ওয়ার্ডের অবস্থা বেশি বেহাল। সেখানে ভবনের দেয়াল ছাড়া আর কিছুই নেই।
তিনি বলেন, প্রতিটি ওয়ার্ড কার্যালয়ে নাগরিক সেবা দ্রুত স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে কর্মকর্তা–কর্মচারীদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে এবং নির্দেশনা বাস্তবায়ন হচ্ছে কিনা তা মনিটরিং করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে নগরীর পরিচ্ছন্ন কার্যক্রম, রাজস্ব বিভাগের কার্যক্রম চালু হয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দেয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য বিভাগ নাগরিকদের চিকিৎসাসেবা দিচ্ছে। দ্রুতই নাগরিক সেবা পূর্বাবস্থায় ফেরাতে কাজ চলছে।
কোন ওয়ার্ডে কত ক্ষতি : চসিক সূত্রে জানা গেছে, গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর পর চসিকের বেশ কয়েকটি ওয়ার্ড অফিসে হামলা করা হয়। কয়েকটি কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগও করা হয়। এতে ওয়ার্ড কার্যালয়ের আসবাবপত্র, কম্পিউটার, প্রিন্টারসহ অন্যান্য নথিপত্র নষ্ট হয়েছে। এতে সবচেয়ে বেশি ৪১ নং দক্ষিণ পতেঙ্গা ওয়ার্ডে ১ কোটি ৫৫ লাখ ৩০ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দেড় কোটি টাকা ক্ষতি হয় ৯ নং উত্তর পাহাড়তলী ওয়ার্ড কার্যালয়ে। অন্যান্য ওয়ার্ড কার্যালয়গুলোর মধ্যে ২ নং জালালাবাদ ওয়ার্ডে ৩৫ হাজার টাকা, ৩ নং পাঁচলাইশ ওয়ার্ডে ১ লাখ টাকা, ৪ নং চান্দগাঁও ওয়ার্ডে ২৫ লাখ টাকা, ৬ নং পূর্ব ষোলশহর ওয়ার্ডে ১০ লাখ টাকা, ৭ নং পশ্চিম ষোলশহর ওয়ার্ডে ২৫ লাখ টাকা, ১০ নং উত্তর কাট্টলী ওয়ার্ডে ২ লাখ ১০ হাজার টাকা, ১১ নং দক্ষিণ কাট্টলী ওয়ার্ডে ৫ লাখ টাকা, ১২ নং সরাইপাড়া ওয়ার্ডে ১ লাখ টাকা, ১৩ নং পাহাড়তলী ওয়ার্ডে ৩৫ হাজার টাকা, ১৫ নং বাগমনিরাম ওয়ার্ডে ১ লাখ টাকা, ১৬ নং চকবাজার ওয়ার্ডে ১ লাখ টাকা, ১৮ নং পূর্ব বাকলিয়া ওয়ার্ডে ২ লাখ টাকা, ১৯ নং দক্ষিণ বাকলিয়া ওয়ার্ডে ৫ লাখ টাকা, ২১ নং জামালখান ওয়ার্ডে ২ লাখ টাকা, ২২ নং এনায়েত বাজার ওয়ার্ডে ২০ হাজার টাকা, ২৩ নং উত্তর পাঠানটুলী ওয়ার্ডে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা, ২৫ নং রামপুর ওয়ার্ডে ৩০ লাখ ৩৫ হাজার ২০০ টাকা, ৩০ নং পূর্ব মাদারবাড়ী ওয়ার্ডে ২০ হাজার টাকা, ৩১ নং আলকরণ ওয়ার্ডে ৭৮ হাজার টাকা, ৩২ নং আন্দরকিল্লা ওয়ার্ডে ২ লাখ ৩৫ হাজার টাকা, ৩৪ নং পাথরঘাটা ওয়ার্ডে ১ লাখ টাকা, ৩৫ নং বঙিরহাট ওয়ার্ডে ২০ হাজার টাকা, ৩৬ নং গোসাইলডাঙ্গা ওয়ার্ডে ২০ হাজার টাকা, ৩৮ নং দক্ষিণ মধ্যম হালিশহর ওয়ার্ডে ৫০ হাজার টাকা, ৪০ নং উত্তর পতেঙ্গা ওয়ার্ডে সাড়ে ৩ লাখ টাকার টাকার ক্ষতি হয়েছে।
প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ১ নং দক্ষিণ পাহাড়তলী ওয়ার্ড, ১৪ নং লালখান বাজার ওয়ার্ড, ২০ নং দেওয়ান বাজার ওয়ার্ড, ২৪ নং উত্তর আগ্রাবাদ, ২৭ নং দক্ষিণ আগ্রাবাদ ওয়ার্ড, ২৮ নং পাঠানটুলী ওয়ার্ড, ২৯ নং পশ্চিম মাদারবাড়ী ওয়ার্ড, ৩৩ নং ফিরিঙ্গী বাজার ওয়ার্ড এবং ৩৯ নং দক্ষিণ হালিশহর ওয়াড কার্যালয়ের কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।
এছাড়া ৫ নং মোহরা ওয়ার্ড, ৮ নং শুলকবহর ওয়ার্ড, ১৭ নং পশ্চিম বাকলিয়া ওয়ার্ড, ২৬ নং উত্তর হালিশহর ওয়ার্ড এবং ৩৭ নং উত্তর মধ্যম হালিশহর ওয়ার্ড কার্যালয়ের ক্ষয়ক্ষতির তথ্য পাওয়া যায়নি বলে উল্লেখ করা হয়।
প্রতিবেদন সূত্রে জানা গেছে, সংরক্ষিত কাউন্সিলরদের ওয়ার্ড কার্যালয়ের মধ্যে সংরক্ষিত–৩ এর ১ লাখ টাকা, সংরক্ষিত–৫ এর ১ লাখ ২০ হাজার টাকা, সংরক্ষিত–৭ এর ১ লাখ টাকা, সংরক্ষিত–৯ এর ৩৫ হাজার টাকা, সংরক্ষিত–১১ কার্যালয়ের ১ লাখ ২০ হাজার টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।