চসিকের ১ হাজার ৯৮১ কোটি ৫২ লাখ টাকার বাজেট

আজাদী প্রতিবেদন

| শুক্রবার , ২৮ জুন, ২০২৪ at ৫:০৫ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) আগামী অর্থবছরের (২০২৪২০২৫) জন্য ১ হাজার ৯৮১ কোটি ৫২ লাখ টাকার বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে। এতে নগর উন্নয়নে সর্বোচ্চ ১ হাজার ৫০ কোটি ৫০ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়। প্রস্তাবিত এ বাজেটে নিজস্ব উৎসে সর্বোচ্চ ১ হাজার ২৬ কোটি ৪৫ লাখ টাকা আয় ধরা হয়েছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে নগরের থিয়েটার ইনস্টিটিউটে বাজেট ঘোষণা করেন সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী। এ সময় তিনি সমৃদ্ধ বাসযোগ্য ও নান্দনিক নগর প্রতিষ্ঠার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। একই সঙ্গে চসিককে অধিকতর কার্যকর সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান হিসাবে গড়ে তোলার জন্য বর্তমান সরকার এবং চসিকের বর্তমান পর্ষদ দৃঢ়প্রতিজ্ঞাবদ্ধ বলেও ঘোষণা দেন।

বাজেট অধিবেশনে গত (২০২৩২০২৪) অর্থবছরের সংশোধিত ১ হাজার ৬৬১ কোটি ৯ লাখ ৪০ হাজার টাকার বাজেটও ঘোষণা করেন মেয়র। অর্থবছরটিতে প্রস্তাবিত বাজেটের আকার ছিল ১ হাজার ৮৮৭ কোটি ২৮ লাখ টাকা।

উন্নয়নে সর্বোচ্চ বরাদ্দ :

প্রস্তাবিত বাজেটে ৭টি প্রকল্পসহ নগর উন্নয়নের বিভিন্ন খাতে সর্বোচ্চ ১ হাজার ৫০ কোটি ৫০ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়। গত অর্থবছরে এ খাতে ব্যয় হয় ১ হাজার ১৫ কোটি ১৭ লাখ ৮০ হাজার টাকা।

এবার রাজস্ব তহবিলের বিপরীতে উন্নয়ন বরাদ্দ গতবারের চেয়ে কম রাখা হয়েছে। গতবার সড়ক বাতি, রাস্তা ও ফুটপাতের উন্নয়ন, জলাবদ্ধতা দূরীকরণ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, পরিবেশ উন্নয়ন ও সৌন্দর্যবর্ধসসহ ২২টি খাতে রাজস্ব তহবিলের বিপরীতে উন্নয়ন খাতে ব্যয় বরাদ্দ রাখা হয় ১৪৮ কোটি ৫০ লাখ টাকা। এবার তা কমিয়ে ১৪৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়। গতবার এ খাতে ব্যয় হয় ৮৪ কেটি ১২ লাখ ৮০ হাজার টাকা।

বরাদ্দ বেড়েছে রক্ষণাবেক্ষণ খাতে :

গতবার পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ খাতে ৪৫৯ কোটি ৬৩ লাখ ৪৬ হাজার টাকা ব্যয় হলেও এবার প্রস্তাবিত বাজেটে ৬০৯ কোটি ৭৬ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়। অবশ্য গতবার এ খাতে প্রস্তাবিত বাজেট ছিল ৫৮৫ কোটি ২৬ লাখ টাকা।

এদিকে গতবার বেতনভাতা ও পারিশ্রমিক পরিশোধে খরচ হয় ৩০০ কোটি ৮৯ লাখ টাকা। এবার বরাদ্দ রাখা হয় ৩২৮ কোটি ৪২ লাখ টাকা। এছাড়া বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও পানি খাতে ৬১ কোটি টাকা ৫০ লাখ টাকা, কল্যাণমূলক ব্যয় ৩৫ কোটি ৩০ লাখ টাকা ও আতিথেয়তা ও উৎসব খাতে ৫ কোটি ১৫ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে।

মশক নিধনে বরাদ্দ ৮ কোটি টাকা :

গত অর্থবছরে মশক নিধন খাতে ৫ কোটি বরাদ্দ ছিল। এবার তা বৃদ্ধি করে ৮ কোটি টাকা করা হয়। এর মধ্যে ওষুধ ক্রয়ে ৪ কোটি টাকা এবং ফগার ও হ্যান্ড স্প্রে মেশিন কেনায় দুই কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়। গত অর্থবছরে মশক নিধন খাতে খরচ হয় ৩ কোটি ৯১ লাখ টাকা। যা পূর্বের অর্থবছরে (২০২২২০২৩) ছিল ৯০ লাখ টাকা।

অন্যান্য ব্যয় খাতগুলো :

প্রস্তাবি বাজেটে বিটুমিন, পাথর, ইট, বালি, রড, সিমেন্ট ও সেনিটারি মালামাল ক্রয়ে ২৮ কোটি বরাদ্দ রাখা হয়। এছাড়া ভূমি ক্রয় ও ভূমি উন্নয়নে ৬০ কোটি টাকা ও আধুনিক শৌচাগার নির্মাণে ২ কোটি টাকা ব্যয় হবে। এছাড়া এবার বাজেটে চসিকের বকেয়া দেনা পরিশোধে ১৩৬ কোটি ২০ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়। গতবার ১২৫ কোটি ৮০ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখলেও ১১৩ কোটি ৫০ লাখ বকেয়া দেনা পরিশোধ করা হয়।

বেড়েছে করের লক্ষ্যমাত্রা :

গতবার পৌরকর খাতে চসিকের আয় হয়েছে ২৬১ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। প্রস্তাবিত বাজেটে তা বৃদ্ধি করে ৪৭১ কোটি ৪৭ লাখ টাকা নির্ধারণ করা হয়। এছাড়া স্থাবর সম্পত্তি হস্তান্তরের ওপরসহ ৮ ধরনের কর থেকে আরো ২০০ কোটি ১৫ লাখ টাকা আয় প্রস্তাব করা হয়। গতবার এ খাতে আয় হয় ১৫৩ কোটি ২৩ লাখ টাকা।

করসহ নিজস্ব উৎস থেকে প্রস্তাবিত বাজেটে ১ হাজার ২৬ কোটি ৪৫ লাখ টাকা আয় ধরা হয়। এর মধ্যে রাস্তা খননসহ বিভিন্ন ফি থেকে ১৪৪ কোটি ২ লাখ টাকা, জরিমানা খাতে ২ কোটি টাকা, ব্যাংক স্থিতি থেকে ১৫ কোটি টাকা এবং সম্পদ থেকে অর্জিত ভাড়াসহ আয় ধরা হয় ১১৫ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। অন্যান্য উৎস থেকেও ৩৮ কোটি ৫ লাখ টাকা আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়।

এছাড়া প্রকল্পের বিপরীতে উন্নয়ন অনুদান হিসেবে আয় ধরা হয় ৯০৯ কোটি টাকা। গত অর্থবছরে এ খাতে আয় হয়েছে ৯৮৩ কোটি ৫ লাখ টাকা। এছাড়া ত্রাণ সাহায্য খাতে আরো ৫ কোটি আয়ের প্রস্তাব করা হয়।

যা বললেন মেয়র :

বাজেট অধিবেশনে মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, আমি দায়িত্ব গ্রহণ করেছি ১০৭৫ কোটি টাকা দেনা নিয়ে। তিন বছর বছর ধারাবাহিকভাবে দেনা পরিশোধের পর কর্পোরেশনে এর দেনার পরিমাণ ৪৪০ কোটি টাকা। আয়কর বাবদ ১১৩ কোটি ৪৬ লাখ টাকা ও মূল্য সংযোজন কর বাবদ ১৩৪ কোটি ১১ লাখ টাকা সরকারি কোষাগারে জমা করা হয়েছে। আনুতোষিক বাবদ ১৮ কোটি ৪১ লাখ টাকা ও ভবিষ্যত তহবিল বাবদ ১৬ কোটি ৯৬ লাখ টাকা পরিশোধ করা হয়েছে।

নগরের সীমা বাড়ানোর কোনো পরিকল্পনা রয়েছে কীনা এমন প্রশ্নে মেয়র বলেন, ৬০ বর্গমাইল এলাকায় ৭০ লাখ মানুষের বাস। সিটি করপোরশনের আওতা আমরা বাড়াতে চাই। একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আলোচনাও করেছি। একটা কমিটি করেছি। জরিপ করে প্রতিবেদন দিলে কার্যক্রমে হাত দেব। যে এলাকা নিতে চাই সেখানকার বাসিন্দাদের মতামত নেব।

আরেক প্রশ্নের জবাবে মেয়র বলেন, মাঠের অভাবে গতবার বিজয় মেলাও হয়নি। বাণিজ্য নগরী হলেও এখানে কোনো আন্তর্জাতিক মানের মিলনায়তন নেই। এফআইডিসি রোডের সামনে আমাদের ১১ একর জমি আছে। সেখানে চারপাঁচ একর জমিতে ‘ইন্টারন্যাশনাল মাল্টিপারপাস হল’ এবং শিশু পার্ক করতে চাই।

অবৈধভাবে ফুটপাত দখল প্রসঙ্গে প্রশ্নের জবাবে মেয়র বলেন, বাসা থেকে বেরুলে দেখা যাবে ফুটপাতে কাঁচামাল নিয়ে বসে আছে। ফুটপাত অবৈধ দখলদারমুক্ত করার চেষ্টা করছি। এ ব্যাপারে কোনো কম্প্রোমাইজ করব না। ফুটপাত দখলমুক্ত সুন্দর শহর গড়তে চাই। এসময় ফুটপাত দখলমুক্ত রাখতে স্থানীয় থানাগুলোর নজরদারির উপর জোর দেন মেয়র। অপর এক প্রশ্নের জবাবে মেয়র বলেন, মশক নিধন সম্ভব নয়, নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। এসময় এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে সবার মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির উপরও জোর দেন তিনি।

চসিকের ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আশরাফুল আমিন বাজেট অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন। বাজেট বিবরণী উপস্থাপন করেন অর্থ ও সংস্থাপন বিষয়ক স্থায়ী কমিটির সভাপতি কাউন্সিলর মো. ইসমাইল। এ সময় প্যানেল মেয়র আবদুস সবুর লিটন, আফরোজা কালাম, প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআয় বেশি অনুদানে, তবু নিজস্ব উৎসে প্রাধান্য!
পরবর্তী নিবন্ধনিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতিতে আরো চাপে মধ্যবিত্ত