চসিকের বরাদ্দ দেয়া জায়গায় স্থাপনা নির্মাণে আপত্তি স্থানীয়দের

চলাচলের পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ার অভিযোগ খালি জায়গায় দোকান হচ্ছে, রাস্তার ক্ষতি হবে না : মেয়র

আজাদী প্রতিবেদন | রবিবার , ৫ ডিসেম্বর, ২০২১ at ৫:৩১ পূর্বাহ্ণ

নগরের কাজীর দেউড়ি এলাকায় চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) বরাদ্দ দেয়া একটি ‘খালি জায়গা’য় স্থাপনা নির্মাণ শুরুর পর আপত্তি জানিয়েছেন স্থানীয়রা। তাদের দাবি, খালি জায়গা বলা হলেও মূলত এটি রাস্তা। তারা সিটি মেয়র এবং স্থানীয় কাউন্সিলর বরাবর বরাদ্দ বাতিলের আবেদনও করেছেন। তবে বরাদ্দ গ্রহীতার দাবি, যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে বরাদ্দ পেয়েছেন। যারা বরাদ্দ বাতিলের কথা বলছেন তারাও দরপত্র প্রক্রিয়ায় অংশ নিয়েছিল। কিন্তু বরাদ্দ না পেয়ে ষড়যন্ত্র করছে।
চসিকের এস্টেট শাখা সূত্রে জানা গেছে, কাজীর দেউড়ি ঝুমুর সিনেমা হলের পাশে ৫৪০ ফুটের জায়গাটি গত ১৪ জানুয়ারি সাময়িকভাবে ব্যবহারে জন্য স্থানীয় রাবেয়া বেগমকে বরাদ্দ দেয়া হয়। প্রতি বর্গফুটের জন্য মাসিক ভাড়া নির্ধারণ করা হয় পাঁচ টাকা। ওই হিসেবে মাসে দুই হাজার ৭০০ টাকা রাজস্ব পাবে চসিক।
চসিকের দেয়া অনুমতি পত্রে শর্ত রয়েছে, অনুমতিপত্র ইস্যুর ৭ দিনের মধ্যে চসিকের সঙ্গে চুক্তি সম্পাদন করতে হবে। তবে গতকাল পর্যন্ত এ চুক্তি সম্পাদিত হয়নি। জায়গাটিতে কোনো ধরনের স্থায়ী স্থাপনা তৈরি করা যাবে না এবং জনসাধারণের চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি করা যাবে না বলেও শর্ত রয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চসিকের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মো. নজরুল ইসলাম দৈনিক আজাদীকে বলেন, জায়গাটি বরাদ্দ দেয়ার আগে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছিল। সেখানে কম্পিটিশনও হয়েছিল। রাস্তার জায়গা নিয়ে অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, অভিযোগ পাওয়ার পর সার্ভেয়ার পাঠিয়েছি। এখনো রিপোর্ট পাইনি। তিনি বলেন, ব্যবহারের অনুমতি পত্র দিলেও এখনো চুক্তি হয়নি। ওই পয়েন্ট থেকে সেখানে কোনো স্থাপনা নির্মাণ করাকে অবৈধ বলা যেতে পারে। যেহেতু বিষয়টি তদন্তনাধীন তাই আপাতত চুক্তি না করতে বলেছি।
এদিকে গত মাসে স্থানীয় বাসিন্দা মো. মাহবুবুল আলম চৌধুরী ও মো. সেলিম উদ্দিন চৌধুরীসহ স্থানীয় ১০ বাসিন্দা সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী, ১৫ নম্বর বাগমনিরাম ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. গিয়াস উদ্দিন বরাবর একটি আবেদন করেন। সেখানে বলা হয়েছে, ‘সিটি কর্পোরেশন কর্তৃক রাস্তার জায়গা ব্যবহারের অনুমতি প্রদান করা হয়েছে বলে আমরা জানতে পেরেছি। বরাদ্দ গ্রহীতা সেটা পুনরায় দ্বিতীয় পক্ষকে ভাড়া দিয়ে সেখানে প্লাস্টিকের গোডাউন ও বিভিন্ন দাহ্য পদার্থ মজুদসহ কাঁচামাল তৈরির পাঁয়তারা করছে।’
এতে আরো বলা হয়, ‘জায়গাটি আবাসিকের মধ্যবর্তী হওয়ায় এলাকাবাসীর চলাচলের পথও বন্ধ হয়ে যাবে। ২০১৭ সালে সেখানে অবৈধ স্থাপনা করার চেষ্টা করলে সিটি কর্পোরেশন এই স্থাপনা ভেঙে দিয়ে রাস্তা হিসেবে স্থিতিশীল বজায় রাখে। এ বিষয়টি গোপন রেখে চসিকের কতিপয় দুর্নীতিবাজ কর্মচারির সহায়তায় সরকারি রাস্তাকে খালি জায়গা দেখিয়ে ব্যবহারের অনুমতি নেয়া হয়।’
স্থানীয় বাসিন্দা মোকতার দৈনিক আজাদীকে বলেন, চলাচলের রাস্তা ইজারা দিয়েছে সিটি কর্পোরেশন। মেয়র মহোদয়ের সঙ্গে আমরা দেখা করেছিলাম, তিনি ফুলের বাগান করে দেয়ার কথা বলেছিলেন। এরপরও সেখানে স্থাপনা নির্মাণ করা হচ্ছে। এতে চলাচলের পথ বন্ধ হয়ে যাবে।
জানতে চাইলে বরাদ্দ গ্রহীতা রাবেয়া বেগমের স্বামী আবুল হাসনাত সুমন দৈনিক আজাদীকে বলেন, সিটি কর্পোরেশন আমাকে বরাদ্দ দিয়েছে। আমি নিয়মিত ভাড়া পরিশোধ করছি। চুক্তি করার জন্য সিটি কর্পোরেশনে দরখাস্তও করেছি। তিনি বলেন, তারাও দরপত্রে অংশ নেয়। কিন্তু না পেয়ে নানাভাবে ষড়যন্ত্র করছে, কেমিক্যাল ফ্যাক্টরি করছে বলে মিথ্যা অভিযোগ দিয়েছে আমার নামে। সিটি কর্পোরেশন এসে দেখে গেছে, তাদের অভিযোগের সত্যতা পাইনি। তিনি বলেন, আমি ছোটখাট দোকান করব।
এ বিষয়ে মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী দৈনিক আজাদীকে বলেন, অভিযোগ পাওয়ার পর সার্ভেয়ার পাঠিয়েছিলাম। তিনি জানিয়েছেন, সেখানে রাস্তার কর্নারে খালি জায়গা আছে, সেটাই বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। রাস্তার ক্ষতিও করছে না। সেখানে আগে থেকে ছোট দোকান ছিল।
মেয়র বলেন, সেখানকার সোসাইটির লোকজন ফুলের বাগান করার কথা বলছেন। তবে এ বিষয়ে আপাতত কোনো সিদ্ধান্ত নিইনি। জায়গাটি বাগমনিরাম ওয়ার্ডের, তাই স্থানীয় কাউন্সিলর গিয়াস উদ্দিনকে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে বলেছি। এ বিষয়ে জানার জন্য ১৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. গিয়াস উদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগ করেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকৌতুক কণিকা
পরবর্তী নিবন্ধ১২ দিন পর পজিটিভ শূন্য চট্টগ্রাম