চসিকের প্রধান নির্বাহীকে অপসারণের দাবি

প্রধান ফটকে তালা দিয়ে শ্রমিক-কর্মচারীদের বিক্ষোভ

আজাদী প্রতিবেদন | শুক্রবার , ৩১ অক্টোবর, ২০২৫ at ৭:২৯ পূর্বাহ্ণ

অনিয়ম ও দুর্নীতিসহ বিভিন্ন অভিযোগ এনে চটগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলামকে সাত কর্মদিবসের মধ্যে অপসারণের দাবি জানিয়েছে সংস্থাটির শ্রমিককর্মচারীরা। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় টাইগারপাসস্থ নগর ভবনের সামনে বিক্ষোভ করে এ দাবি জানান তারা। বেঁধে দেয়া সময়ের মধ্যে অপসারণ করা না হলে পরবর্তীতে কঠোর কর্মসূচি দেয়ার ঘোষণা দেন তারা। এ সময় বিক্ষোভকারীরা চসিকের প্রধান ফটকে তালা দেন। পরে মেয়র এসে আশ্বাস দিলে তালা খুলে দেন।

এর আগে আগে গত ৮ জুলাইও ‘সচেতন চট্টগ্রামবাসী’ ব্যানারে এ প্রধান নির্বাহীর অপসারণের দাবিতে একই স্থানে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন হয়। গতকাল বিক্ষোভ হয়েছে ‘চসিকের সকল সাধারণ কর্মচারীবৃন্দ’ ব্যানারে। ব্যানারে লেখা ছিল– ‘কমিশন বাণিজ্য, অবৈধ সম্পদ অর্জন ও ক্ষমতার অপব্যবহারে অভিযুক্ত চট্টগ্রাম কলেজ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রলীগ নেতা, চসিকের প্রধান নিবাহী কর্মকর্তা ফ্যাসিস্ট হাসিনার দোসর শেখ তৌহিদুল ইসলামকে অপসারণ চাই’। বিক্ষোভে চসিকের শ্রমিককর্মচারী ইউনিয়নের সদস্যরা অংশ নেন। তারা প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্লোগান দেন।

চসিক সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩ সালের ২২ জানুয়ারি চসিকে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে যোগ দেন শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম। গত ৬ সেপ্টেম্বর একটি প্রশিক্ষণে যোগ দেন তিনি। প্রশিক্ষণ শেষে গত ২৩ অক্টোবর যোগ দিতে আসলে তার ‘যোগদানপত্র’ গ্রহণ করা হয়নি। যা গতকাল পর্যন্ত গ্রহণ করা হয়নি। এর আগে ২২ অক্টোবর একটি অফিস আদেশ জারি করেন মেয়র। এতে বলা হয়, শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম প্রশিক্ষণ শেষে ফেরত আসার পরে তার যোগদানপত্র গৃহিত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত সকল বিভাগীয় প্রধানগণ চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সচিবএর মাধ্যমে নথি অনুমোদনের জন্য মেয়র বরাবর প্রেরণ করবেন। কর্পোরেশনের কাজের স্বার্থে এই আদেশ জারি করা হল’। এছাড়া গত ২৭ অক্টোবর হোল্ডিংএর বিপরীতে চসিকের মূল্যায়নকৃত পৌরকর (গৃহকর ও অন্যান্য রেইট) থেকে ঘষামাজা করে ২০ কোটি টাকা করে ৪০ কোটি টাকা কমিয়ে দেয়ার ঘটনায় শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলামকে গত ২৭ অক্টোবর কারণ দর্শানো নোটিশ দেন মেয়র।

এদিকে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, যোগদানপত্র গৃহীত না হওয়ায় গতকাল মেয়রের দপ্তরে যান প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম। এ সময় কারণ দর্শানো নোটিশের সন্তোষজনক জবাব না দেয়া পর্যন্ত তার যোগদানের বিষয়ে মেয়র নেতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করেন। এসময় সেখানে থাকা চসিকের সচিব (বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা) মোহাম্মদ আশরাফুল আমিনকে এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী করেন শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম। এক পর্যায়ে সচিবের সঙ্গে ‘দুর্ব্যবহার’ করেন বলে জানান প্রত্যক্ষদর্শীরা। এরপর নগর ভবন থেকে বের হয়ে চলে যান প্রধান তৌহিদুল ইসলাম।

এ ঘটনার ঘণ্টাখানেক পর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলামের অপসারণের দাবিতে সিটি করপোরেশন কার্যালয় ঘেরাও করার কর্মসূচি ঘোষণা করে শ্রমিককর্মচারী ইউনিয়ন। সমাবেশে চসিক জাতীয়তাবাদী শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দেও মধ্যে মামুনুর রশীদ মামুন, খাজা আলাউদ্দিন, সবুর খান মাসুম, রমিজুল হক, আবুল কালাম আজাদ বক্তব্য রাখেন। বক্তারা বলেন, বর্তমান প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফ্যাসিস্টের দোসর। তিনি ছাত্র জীবনে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তিনি চসিকের বিভিন্ন দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত। এতে সিটি কর্পোরেশনের সুনাম ক্ষুণ্ন হচ্ছে। সিটি কর্পোরেশনের কর্মচারীদের মান ক্ষুণ্ন হচ্ছে।

তারা বলেন, ভবিষ্যতে মেয়র মহোদয়ের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে তিনি যদি বাধা সৃষ্টি করে তাহলে নগরবাসীকে সাথে নিয়ে তা প্রতিহত করা হবে। ৭ কার্য দিবসের মধ্যে অপসারণ করতে হবে। যদি ৭ কর্মদিবসের মধ্যে অপসারণ করা না হয় তাহলে আমরা কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য থাকব।

বিক্ষোভ চলাকালে নগর ভবনে ছিলেন না মেয়র। সন্ধ্যায় তিনি নগর ভবনে প্রবেশ মুখে বিক্ষোভকারীদের আশ্বস্ত করে বলেন, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনে কোনো দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাকে রাখা হবে না। প্রধান নির্বাহীকে হোল্ডিং ট্যাঙের অনিয়মের কারণে শোকজ করেছি। ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়েছে। সন্তোষজনক জবাব না দিলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এসময় তিনি মেয়র শাহাদাত হোসেন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার কারণ দর্শানোর নোটিশের জবাব দেওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি স্থগিতের অনুরোধ করেন।

এ বিষয়ে চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম আজাদীকে বলেন, কর্পোরেশনের থাকা বা না থাকার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আমি কেউ না। এটি মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নেবে। আমি স্থানীয় সরকার বিভাগকে বিষয়গুলো জানিয়েছি। মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধরাউজানে প্রয়াত চেয়ারম্যানের বাড়ি থেকে বিপুল অস্ত্র ও মাদক উদ্ধার
পরবর্তী নিবন্ধবাকলিয়ায় ছাত্রদলকর্মী হত্যা মামলায় আরো দুই আসামি গ্রেপ্তার