চসিকের দুই প্রকৌশলীর অনিয়ম তদন্তে দুদক

অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা নিয়োগ

আজাদী প্রতিবেদন | বুধবার , ১১ মে, ২০২২ at ৫:৪১ পূর্বাহ্ণ

অর্থ আত্মসাৎ এবং অনিয়মের মাধ্যমে পদোন্নতি নেয়াসহ চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) দুই প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে উত্থাপিত বিভিন্ন অনিয়মের তদন্ত শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এ লক্ষ্যে অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তাও নিয়োগ দিয়েছে দুদক। অভিযুক্ত দুই প্রকৌশলী হচ্ছেন যান্ত্রিক শাখার নির্বাহী প্রকৌশলী মির্জা ফজলুল কাদের ও উপ-সহকারী প্রকৌশলী আনু মিয়া।

দুদক সূত্রে জানা গেছে, অভিযুক্ত দুই প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে নিয়ে দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয় চট্টগ্রামকে তদন্তের নির্দেশনা দেয় প্রধান কার্যালয়। এর প্রেক্ষিতে গত সপ্তাহে সমন্বিত জেলা কার্যালয়, চট্টগ্রাম-১ এর সহকারী পরিচালক এনামুল হককে অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়া হয়। উপ-পরিচালক মো. নাজমুচ্ছায়াদত তদারককারী কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করবেন। এ বিষয়ে মো. নাজমুচ্ছায়াদত স্বাক্ষরিত অফিস আদেশে দুই প্রকৌশলী বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগগুলো দুদক আইন, ২০০৪ (সংশোধিত) এবং দুদক বিধিমালা ২০০৭ (সংশোধিত) অনুসরণপূর্বক নির্ধারিত সময়ের মধ্যে অনুসন্ধান কার্যক্রম সম্পন্ন করে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশনা দেয়া হয়।

দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয়, চট্টগ্রাম-১ এর সহকারী পরিচালক এনামুল হক বিষয়টি আজাদীকে নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, তদন্ত করছি। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তাদের এখনো ডাকিনি।

এদিকে দুদকে উত্থাপিত অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, মির্জা ফজলুল কাদেরের বিরুদ্ধে নিয়মবহির্ভূতভাবে পদোন্নতি, অনিয়মের মাধ্যমে নিকটাত্মীয়কে কন্টেনার মেরামতে কাজ দেয়াসহ নানা অভিযোগ রয়েছে। আনু মিয়ার বিরুদ্ধে আবর্জনা অপসারণের জন্য চেইনড্রোজার ভাড়ার নামে অর্থ আত্ম্মসাতের অভিযোগ রয়েছে।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, কর্মজীবনের শুরুতে ট্রান্সপোর্ট সহকারী পদে চসিকে যোগ দেন মির্জা ফজলুল কাদের। এরপর সহকারী প্রকৌশলী হয়ে নির্বাহী প্রকৌশলী পদে পদোন্নতি পান। মাঝখানে উপ-সহকারী প্রকৌশলী পদে কর্মরত ছিলেন না, যা নিয়মের লঙ্ঘন বলে অভিযোগ উঠেছে।

স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রণীত ‘চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন কর্মচারী চাকরি বিধিমালা’ অনুযায়ী, যান্ত্রিক শাখার নির্বাহী প্রকৌশলী পদে পদোন্নতির জন্য সহকারী প্রকৌশলী (যান্ত্রিক) পদে সাত বছর চাকরি করতে হবে। একই বিভাগের সহকারী প্রকৌশলী পদে পদোন্নতি পাওয়ার জন্য উপ-সহকারী পকৌশলী পদে আট বছর এবং উপ-সহকারী প্রকৌশলী (যান্ত্রিক) পদোন্নতির জন্য সড়ক তদারককারী বা বাতি পর্যবেক্ষক পদে ১২ বছরের চাকরির অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।

চসিক সূত্রে জানা গেছে, ২০১০ সালের ৫ আগস্ট চসিকের তৎকালীন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশ অনুযায়ী, মির্জা ফজলুল কাদেরকে পুল সহকারী-২ থেকে পুল সহকারী ১/২ এ বদলি করা হয়। এ অফিস আদেশের আলোকে ২০১০ সালেও সুপারভাইজার পদ মর্যাদায় কর্মরত ছিলেন। পরে ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে সহকারী প্রকৌশলী (যান্ত্রিক) পদে প্রতিস্থাপিত করে আরেকটি অফিস আদেশ জারি করেন চসিকের তৎকালীন সচিব। এ অফিস আদেশ অনুযায়ী, উপ-সহকারী প্রকৌশলী পদ বাদ দিয়ে সরাসরি সহকারী প্রকৌশলী করা হয়। এক্ষেত্রে কর্মবিধির আলোকে বাধ্যবাধকতা অনুসরণ করা হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে। সর্বশেষ ২০১৯ সালের ৩০ মে নির্বাহী প্রকৌশলী পদে দায়িত্ব দেয়া হয়।

এদিকে ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর সমন্বিত জেলা কার্যালয়-২ থেকে মির্জা ফজলুল কাদেরসহ দুজনের পদোন্নতি ‘নিয়মবহির্ভূত’ভাবে হয়েছে উল্লেখ করে একটি অভিযোগ পাঠানো হয় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে। যা তদন্তের জন্য দুদকের অভিযোগ যাচাই-বাছাই কমিটির আহ্বায়ক এ কে এম সোহেল গত ২১ সেপ্টেম্বর স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিবের কাছে পাঠান। এর প্রেক্ষিতে অক্টোবর মাসে স্থানীয় সরকার বিভাগের উপসচিব মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক পত্রে চসিকের প্রধান নির্বাহীকে তদন্ত করে সুস্পষ্ট মতামত প্রতিবেদনসহ পাঠানোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল।

মির্জা ফজলুল কাদেরের বিরুদ্ধে উত্থাপিত আরেকটি অভিযোগ হচ্ছে, চসিকের আবর্জনাবাহী কন্টেনার মেরামতের জন্য নিকটাত্মীয়কে একমাত্র দরদাতা হিসেবে কার্যাদেশ প্রদান করা হয়।

উপসহকারী প্রকৌশলী আনু মিয়ার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগটি হচ্ছে, আবর্জনা অপসারণের জন্য চেইনড্রোজার ভাড়ার নামে দরপত্র বিজ্ঞপ্তি না দিয়ে টাকা অগ্রিম নিয়ে কোনো কাজ না করে আত্মসাৎ করেছেন। জানা গেছে, ২০২০ সালের ৩০ জুন চসিকের হালিশহর টিজি আবর্জনার মাটি লেভেলিং করার জন্য শ্রমিকসহ চেইনড্রোজার ভাড়া নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। এ জন্য দৈনিক ১৬ ঘণ্টা সিডিউল মোতাবেক দুটি চেইনড্রোজার ভাড়া নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর ই-জিপির মাধ্যমে দরপত্র আহ্বান করার জন্য তৎকালীন চসিক প্রশাসক বরাবরে সুপারিশ করা হয়। কিন্তু সরাসরি ভাড়া নেয়া হয় দুটি চেইনড্রোজার। ২০২০ সালের ৬ অক্টোবর ওই দুটি চেইনড্রোজারের ভাড়া বাবদ ব্যয় দেখানো হয় ২৯ লাখ ২৬ হাজার ৪০০ টাকা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআটজনের বিরুদ্ধে দুদকের দুই মামলা
পরবর্তী নিবন্ধদেশে করোনায় আরো ২৬ জন আক্রান্ত