পৌরকর পুনর্মূল্যয়ন প্রস্তাবনায় অটোমেশনসহ ‘গোপনকৃত’ তথ্যের ব্যাখা দিতে হবে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনকে (চসিক)। পাশাপাশি সুনির্দিষ্ট তিনটি তথ্য উল্লেখ করে পুনরায় পঞ্চবার্ষিকী কর পূর্নমূল্যায়নে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠাতে হবে সংস্থাটিকে। এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে আগামীকাল রোববার চসিককে নির্দেশনা দেয়ার কথা রয়েছে।
জানা গেছে, পৌরকর নির্ধারণে পঞ্চবার্ষিকী কর পূর্নমূল্যায়ন (রি-অ্যাসেসমেন্ট) কার্যক্রম শুরুর জন্য চসিককে ২০১৭ সালে ‘অনলাইন ভিত্তিক অটোমেশন পদ্ধতি চালুর’ শর্ত দিয়েছিল স্থানীয় সরকার বিভাগ। শর্তটি এখনো পূরণ করতে পারেনি চসিক। এরপরও রি-অ্যাসেসমেন্ট কার্যক্রম শুরুর উদ্যোগ নিয়েছে সংস্থাটি। সে লক্ষ্যে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে দুই দফা পত্র দিয়ে অনুমতিও চেয়েছে। তবে কোনো পত্রেই অটোমেশন কর্যক্রম সম্পন্ন না হওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করে নি। ফলে প্রশ্ন ওঠে তথ্য গোপন করেই রি-অ্যাসেসমেন্ট কার্যক্রম শুরু করতে চায় চসিক?
এ বিষয়ে গত ১৭ জুন দৈনিক আজাদীতে ‘পৌরকর পুনর্মূল্যায়ন ॥ তথ্য গোপন করে কার্যক্রম শুরু করতে চায় চসিক?’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনটি আমলে নিয়ে চসিকের কাছে নতুন করে নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে বলে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন। স্থানীয় সরকার বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চসিকের কাছে নির্দেশনা সম্বলিত পত্রে গত সপ্তাহে স্বাক্ষর করেছেন স্থানীয় সরকার বিভাগের উপসচিব মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম। এতে বলা হয়, ‘চসিক হোল্ডিং ট্যাক্স, রেইট নির্ধারণ ও আদায় কার্যক্রম অটোমেশন কোন পর্যায়ে রয়েছে বা
হোল্ডিং ট্যাক্স কোন প্রক্রিয়ায় আদায় করা হবে সে সর্ম্পকে পত্রে উল্লেখ করা হয়নি। তাছাড়া কর পুনর্মূল্যায়নের বিষয়ে মাসিক সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে কি-না সে বিষয়েও অবহিত করা হয়নি।’
পত্রটিতে তিনটি তথ্যসহ পুনরায় প্রস্তাব প্রেরণের নির্দেশনা দেয়া হয়। তথ্য তিনটি হচ্ছে- ‘হোল্ডিং ট্যাক্স, রেইট নির্ধারণ ও আদায় কার্যক্রম অটোমেশনের বর্তমান অগ্রগতি, ২০১৬-২০১৭ সনে পুনর্মূল্যায়িত কর আদায়ের বা নতুনভাবে পুনর্মূল্যায়নের মাধ্যমে আদায়ের কার্যক্রম ম্যানুয়ালি নাকি অটোমেশনের মাধ্যমে সম্পন্ন করা হবে? এছাড়া গৃহকর আদায় অথবা পুনর্মূল্যায়নের বিষয়ে মাসিক সভার সিদ্ধান্ত পাঠানোর নির্দেশনা দেয়া হয়।’
এ বিষয়ে চসিকের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মো. নজরুল ইসলাম আজাদীকে বলেন, মন্ত্রণালয়ের চিঠি এখনো হাতে পাইনি। তিনি বলেন, অটোমেশন কার্যক্রম শীঘ্রই শুরু করবো। প্রথমে কয়েক মাস ম্যানুয়ালি এবং অটোমেশন দুভাবেই করতে হবে। ম্যানুয়ালি আদায় করে অনলাইনে আপলোড দিব। পরবর্তীতে ম্যানুয়েল আর থাকবে না।
যেভাবে তথ্য গোপন :
স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে চসিকে পাঠানো পত্র সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালের ১০ ডিসেম্বর রি-অ্যাসেসমেন্ট কার্যক্রম স্থগিত করে মন্ত্রণালয়। একইসঙ্গে জরুরি ভিত্তিতে অন-লাইন ভিত্তিক অটোমেশন পদ্ধতি চালু করে স্থানীয় সরকার (সিটি কর্পোরেশন) আইন, ২০০৯ এর ধারা-৮২ অনুযায়ী সরকারের পূর্বানুমোদন গ্রহণ করে গৃহকর পুর্নমূল্যায়ন কার্যক্রম শুরু করতে নির্দেশ দিয়েছিল চসিককে।
এদিকে চসিক সূত্রে জানা গেছে, ‘আর্বান পাবলিক এনভায়রনমেন্টাল হেলথ সেক্টর ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট’ প্রকল্পের আওতায় চট্টগ্রামসহ সাত সিটি কর্পোরেশনে অটোমেশনে আনার প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছিল। প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ হয়েছে। তবে চসিকের পৌরকর কার্যক্রম অটোমেশনে আসেনি। সর্বশেষ ‘এটিএন এন্ড আর কে’ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের সাথে চসিক এক বছরের চুক্তি করে। প্রতিষ্ঠানটি অনলাইন ভিত্তিক পৌরকর আদায়ে ভবন মালিকদের ডাটা এন্ট্রির কাজ করছে। ইতোমধ্যে ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ ডাটা এন্ট্রি সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। অর্থাৎ এখনো পৌরকর ব্যবস্থাপনা সম্পূর্ণ অটোমেশন হয়নি।
এ অবস্থায় ২০২০ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর চসিকের তৎকালীন প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে স্থগিত হওয়া পঞ্চবার্ষিকী কর পুর্নমূল্যায়নের আলোকে পৌরকর আদায়ের অনুমতি চেয়ে প্রস্তাব পাঠান। তবে সেখানে অটোমেশন কার্যক্রম সমাপ্ত না হওয়ার বিষয়টি উল্লেখ ছিল না।
সর্বশেষ গত ৩ জুন চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী মুহাম্মদ মোজাম্মেল হকের স্বাক্ষরে আরেকটি চিঠি পাঠিয়ে দুটো প্রস্তাব দেয় হয়। প্রস্তাবগুলো হচ্ছে- ব্যক্তি মালিকানাধীন বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের হোল্ডিংয়ের বিপরীতে পঞ্চবার্ষিকী কর পুর্নমূল্যায়নের স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে কর আদায়। অথবা স্থগিতকৃত পুর্নমূল্যায়ন বাতিল করে নতুন করে অ্যাসেসমেন্ট করা। এ চিঠিতেও অটোমেশন কার্যক্রম সমাপ্ত না হওয়ার তথ্যটি গোপন রাখা হয়।
প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালে গৃহ ও ভূমির পঞ্চবার্ষিকী কর পুনর্মূল্যায়ন করে চসিক। এর মধ্যে ২০১৬ সালের ২০ মার্চ প্রথম দফায় নগরের ১১টি ওয়ার্ডে অ্যাসেসমেন্ট শুরু করে এবং একই বছরের ২০ জুন শেষ হয়। দ্বিতীয় দফায় একই বছরের ১৮ অক্টোবর বাকি ৩০টি ওয়ার্ডে অ্যাসেসমেন্ট শুরু করে এবং তা শেষ হয়েছে ২০১৭ সালের ১৫ জানুারি। পুর্নমূল্যায়ন শেষে তা ২০১৭ সালের ৩১ আগস্ট জনসম্মুখে প্রকাশ করা হয়। তখন প্রস্তাবিত পৌরকরের বিরুদ্ধে আপত্তি জানান ভবন মালিকরা।