চসিকের অধীনে পরিচালিত হবে প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়

ঘোষণা মেয়রের এটা সিটি কর্পোরেশনের সম্পত্তি, দখলমুক্ত করতে আইনের আশ্রয় নেওয়া হয়েছে

আজাদী প্রতিবেদন | সোমবার , ৯ ডিসেম্বর, ২০২৪ at ৬:৫২ পূর্বাহ্ণ

শিক্ষার্থীদের দাবির প্রেক্ষিতে তাদের সুন্দর শিক্ষাজীবন নিশ্চিতে প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) অধীনে পরিচালনার ঘোষণা দিয়েছেন মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। এ সময় প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়কে চসিকের সম্পত্তি উল্লেখ করে তা জালজালিয়াতির মাধ্যমে দখল করা হয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি। তিনি বলেন, প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়কে দখলমুক্ত করতে আইনের আশ্রয় নেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে আমরা শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসির চেয়ারম্যানকে অবহিত করেছি এবং আইনজ্ঞদের পরামর্শ নিয়েছি। আইনি প্রক্রিয়াতেই প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় কর্পোরেশনের নিয়ন্ত্রণে ফিরবে। ভবিষ্যতে কোনো মেয়র বা প্রভাবশালী কেউ যাতে প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়কে জবরদখল না করতে পারে সে ব্যবস্থাও করা হবে। আমরা চাই প্রথমে প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়কে কর্পোরেশনের আওতাভুক্ত করতে। এরপর পর্যায়ক্রমে সংস্কারের কাজ পরিচালনা করব।

চসিকের সার্বিক কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য স্থানীয় সরকার বিভাগের গঠিত কমিটির বিশেষ সভায় মেয়র এ ঘোষণা দেন। গতকাল রোববার টাইগারপাসে চসিকের অস্থায়ী কায়ালয়ে এ সভা হয়। সভায় শাহাদাত বলেন, কর্পোরেশনের টাকায় এবং জমিতে প্রতিষ্ঠিত হয় প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়। ২০০৩ সালেও চসিকের নিজস্ব ৪৭ কোটি টাকা দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টির ভূমি কেনা হয়েছে। তাই প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের এবং চট্টগ্রামের জনগণের সম্পত্তি। চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ওই ইউনিভার্সিটির মূল তিনটি পদের (ভিসি, ট্রেজারার, প্রক্টর) পদত্যাগ করায় এখানে একটা শূন্যতা তৈরি হয়েছে। ছাত্রদের মধ্যে এবং নাগরিকদের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি হয়েছে। এতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটতে পারে। সেই প্রেক্ষাপটগুলো বিবেচনা করে আমরা আজকের সভা আহ্বান করেছি। যেহেতু চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মধ্যে অবস্থিত, এর প্রপার্টিগুলোও সিটি কর্পোরেশনের টাকা দিয়ে কেনা হয়েছে এবং জনপ্রতিনিধি হিসেবে মেয়র আছেন।

তিনি বলেন, প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠা হয়েছিল। তৎকালীন মেয়র এটার দায়িত্বে ছিলেন, ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান ছিলেন এবং এটার যে সম্পত্তি ক্রয় থেকে শুরু করে সব ব্যবস্থাপনা কিন্তু সিটি কর্পোরেশন কর্তৃক করা হয়েছে। ২০১৫ সাল পর্যন্ত এটা চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন পরিচালনা করেছে। এরপর এটা দুর্বৃত্তায়নের কবলে পড়েছে। অন্য একটি কর্তৃপক্ষ এটা জোর করে দখল করে নিয়েছিল। আমরা সিটি কর্পোরেশন থেকে সরকারের কাছে বরাবর আবেদন জানিয়েছি এবং মেয়র মহোদয় এই বিষয়টা অবহিত আছেন। তিনি (মেয়র) শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে ইতোমধ্যে এটি ট্রান্সমিট করেছেন। এই প্রপার্টি চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনে আবার ফেরত আসছে। এটা সময়ের ব্যাপার। হয়তো সপ্তাহ দুই সপ্তাহ লাগতে পারে।

চসিকের আইন কর্মকর্তা মহিউদ্দিন মুরাদ বলেন, আইন বলছে, ইউনিভার্সিটি একটা ট্রাস্টের অধীনে চলবে। কিন্তু আইনে তা থাকলেও বেসিক্যালি একটা অথরিটিতে এটা থাকে। প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি নিয়ে হাই কোর্টে দুইটা মামলা হয়েছে। সেগুলো হয়েছে মূলত ইউজিসির বিভিন্ন চিঠি চ্যালেঞ্জ করে। মালিকানার বিষয়ে কোনো মামলা কিন্তু হাই কোর্টে হয়নি। এটা আরো গ্রেটার অথরিটির বিষয়। একটা প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি প্রতিষ্ঠার পরে ইনিশিয়াল যে পাঁচ কোটি টাকা লগ্নি করতে হয়, জমি দিতে হয়, সবকিছুই চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন দিয়েছে। ২০০৩ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমি তো আমরা কিনেছি। ৫০ লাখ টাকার প্রথম এফডিআরটাও আমাদের। ফেস বাই ফেস আমাদের কাছে সেগুলোর নোটিং আছে।

সড়ক ও জনপথ বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মোহাম্মদ জাহেদ হোসেন বলেন, প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটির ক্ষেত্রে আমরা যেটা দেখছি নর্দমার উপরে একটা বিল্ডিং, তারপর সিএনজি ফিলিং স্টেশনের উপর ক্যাম্পাস। সিএনজি ফিলিং স্টেশন নিজেই একটা বিপজ্জনক জায়গা। এর উপরে একটা বিল্ডিং করে ক্যাম্পাস পরিচালনা করা হচ্ছে। মেয়র মহোদয়ের প্রতি আমাদের প্রত্যাশা, এমন একটা সিস্টেম করে দেবেন, যাতে ভবিষ্যতে কেউ যেন এটাকে কুক্ষিগত করার চেষ্টা করতে না পারে।

ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের উপসহকারী মো. আবদুল মান্নান বলেন, অগ্নি প্রতিরোধ ও নির্বাপণ আইন ২০০৩এর ৭ নম্বর ধারা অনুযায়ী প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠানকে ফায়ার সার্ভিস থেকে সেফটি প্ল্যান অ্যাপ্রুভাল করাতে হয়। যেহেতু সভায় একজন বক্তা বলেছেন, সেটা একটা সিএনজি পেট্রোল পাম্পের উপরে স্থাপিত, তাই প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি আসলে সেফটি প্ল্যান নিয়েছে কিনা তা যাচাই করা প্রয়োজন।

সভায় উপস্থিত কমিটির সদস্যবৃন্দ সর্বসম্মতভাবে প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়কে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের অধীনে পরিচালনার প্রস্তাব সমর্থন করেন।

সভায় উপস্থিত ছিলেন চসিকের সচিব মো. আশরাফুল আমিন, চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক অং সুই প্রু মারমা, ডিসি (ট্রাফিক উত্তর) জয়নুল আবেদীন, ওয়াসার উপব্যবস্থাপনা পরিচালক বিষ্ণু কুমার সরকার, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের প্রধান প্রকৌশলী (সিভিল) মাহমুদুল হোসেন খান, বিটিসিএলের মুখ্য মহাব্যবস্থাপক প্রদীপ দাশ, গণপূর্ত অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মুহম্মদ আশিফ ইমরোজ, সিনিয়র সহকারী কমিশনার এসএমএন জামিউল হিকমা, সিডিএর নির্বাহী প্রকৌশলী আহম্মদ মঈনুদ্দিন, পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক সাইফুল ইসলাম, প্রাথমিক শিক্ষার উপপরিচালক মো. আতাউর রহমান, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা চট্টগ্রামের উপপরিচালক মুহাম্মদ ফরিদুল আলম হোসাইন প্রমুখ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধভারতকে উড়িয়ে ফের এশিয়ার সেরা টাইগার যুবারা
পরবর্তী নিবন্ধপাহাড়তলীতে ৪০ লিটার চোলাই মদসহ পাঁচ কারবারি গ্রেপ্তার