চল, চাই আই

এ কৌতূহল বিপজ্জনক, থামানো দরকার

হাবীবুর রহমান | রবিবার , ১৭ মার্চ, ২০২৪ at ৪:৩৪ পূর্বাহ্ণ

কোথাও আগুন লাগবে, আর সেখানে উৎসুক জনতা ভিড় করবে নাএমনটি যেন এখন কল্পনাই করা যায় না। দিন দিন এটি একটি স্বাভাবিক প্রবণতায় পরিণত হয়েছে আমাদের। গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় নগরীর আমতলের রাইফেল ক্লাব ভবনের নিচের ইউসিবিতে (ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক) আগুন লাগার পরও অতি কৌতুহলীদের ভিড় ছিল লক্ষ্যণীয়। এতে আগুন নেভাতে ব্যস্ত থাকা দমকল বাহিনীকে বেগ পেতে হয় তাদের কাজে।

রাইফেল ক্লাব ভবনের পাশের রাস্তার উল্টো দিকে অপর্ণাচরণ সিটি কর্পোরেশন স্কুল। স্কুলের রেলিং ধরে, সেটির উপর বসে একমনে আগুন দেখতে দেখা গেছে উৎসুক জনতাকে। কীভাবে আগুন লাগল, ভেতরে কী অবস্থা, কেউ আটকা পড়ল কিনা, দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে নানান হাহুতাশ ঝরে ঝরে পড়ে তাদের কথোপকথনে। একশ থেকে দুইশ গজ দূরে থিয়েটার ইনস্টিটিউটের সামনেও ছিল জটলা। এরমধ্যে এক লোক আরেক লোককে বলছেন, ‘চল, চাই আই’। বলতে বলতেই তারা আগুন লাগার স্থানের দিকে চললেন। তাদের পিছু নিয়ে দেখা গেল, তারা ঠিক ঘটনাস্থলের পাশে উৎসুক জনতার সঙ্গে দাঁড়িয়ে পড়লেন। একজন আরেক জনের কাঁধে হাত রেখে দাঁড়ালেন আয়েশি ভঙ্গিতে। স্মার্টফোন এখন সবার হাতে হাতে। সেটির যেমন ভালো দিক রয়েছে, তেমনই রয়েছে খারাপ দিকও। বিশেষ করে যখন কোথাও আগুন বা এমন কোনো দুর্ঘটনা ঘটে সেখানে মোবাইলের খারাপ দিকটাই চোখে পড়বে বেশি। তখন মোবাইল ফোন আর কারো পকেটে থাকে না। হাতে মোবাইল নিয়ে সবাই ছবি তুলতে থাকেন এবং ভিডিও করতে থাকেন। নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বা ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা সরে দাঁড়াতে বললেও তাদের কানে সে কথা পৌঁছায়ই না। ঠাঁই দাঁড়িয়ে থেকে তারা ছবি তুলবেন, ভিডিও করবেন।

গতকাল আমতলের ঘটনার সময় পুলিশ সেখানে ভিড় করা লোকজনকে বারবার বলছিলেন, পেছনে যান, বাঁয়ে যান, ডানে যান। কে শুনে কার কথা! এক পা পেছনে গিয়ে দুই পা সামনে এগোয় তারা। কখনো কখনো লাঠি দিয়ে ঠেলেও তাদের সরানো মুশকিল হয়ে পড়ে। এর ফলে আগুন নিয়ন্ত্রণে বাধার সম্মুখীন হন ফায়ার ফাইটার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।

গত ১৩ মার্চ গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার তেলিরচলা এলাকায় সিলিন্ডারের ছিদ্র থেকে বের হওয়া গ্যাস থেকে আগুনের ঘটনা ঘটে। এতে ৩৬ জন দগ্ধ হয়। এদের প্রায় সবাই ছিল এ রকম উৎসুক মানুষ। পুরুষের পাশাপাশি দগ্ধের তালিকায় ছিল নারী ও শিশুও। এর আগে রাজধানীর বেইলি রোডের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার সময়ও এ কৌতুহলী মানুষের কারণে দমকল বাহিনীকে বেশ বেগ পেতে হয়েছে। তারা শুধু আগুনের দিকে চেয়ে থাকেন। সেই সাথে ছবি তোলেন, ভিডিও করেন এবং করেন নানারকম গবেষণা।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এ কৌতুহল একটা সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। দুর্ঘটনা ঘটা মাত্রই তারা উপস্থিত হচ্ছেন। বারবার সরে যেতে বললেও তারা সরেন না। এতে আগুন নিয়ন্ত্রণে বেগ পেতে হয়।

বিশিষ্টজনেরা বলছেন, উৎসুক জনতার এমন অবস্থার এখানেই শেষ হওয়া প্রয়োজন। সংশ্লিষ্টদের একটা গাইডলাইন দিতে হবে। অন্যথায় চড়া মূল্য দিতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধরাইফেল ক্লাব ভবনে ইউসিবিতে আগুন
পরবর্তী নিবন্ধচাহিদার বেশি উৎপাদন, তবুও চট্টগ্রামে লোডশেডিং