বিমানবন্দর সড়কের ভোগান্তি এবং যানজট এড়াতে বহুল প্রত্যাশার পতেঙ্গা-ফৌজদারহাট আউটার রিং রোড অনানুষ্ঠানিকভাবে চালু করা হয়েছে। এতে করে বিশ কিলোমিটারের বেশি নতুন সড়ক ব্যবহার করে জিইসি মোড় থেকে চল্লিশ মিনিটে বিমানবন্দরে আসা-যাওয়া সম্ভব হচ্ছে। সড়কটি পুরোদমে চালু হলে নগরীর যান চলাচলে গতি আসবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
সংশ্লিষ্টরা জানান, চট্টগ্রামের যান চলাচলে গতি আনতে আউটার রিং রোড নির্মাণের কার্যক্রম শুরু হয়। ২ হাজার ৪২৬ কোটি ১৪ লাখ টাকার এই প্রকল্পটির আওতায় পতেঙ্গা থেকে সাগরিকা বিভাগীয় স্টেডিয়ামের সন্নিকট পর্যন্ত ১৫.২ কিলোমিটারের চার লেনের একটি সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে সড়কের ৯২ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। সাগরিকার জহুর আহমদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের পাশে এক কিলোমিটার দীর্ঘ একটি ওভারপাসসহ ফিডার রোডের নির্মাণ কাজ শেষ হলে সড়কের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হবে। এজন্য আরো ছয় মাস সময় লাগবে। তবে রিং রোড থেকে স্টেডিয়াম পর্যন্ত ফিডার রোডটি চালু হওয়ার আগে টোল রোডের সাথে যুক্ত করে রাস্তাটি চালু করা হয়েছে। এতে ১৫.২ কিলোমিটার আউটার রিং রোড এবং ৫ কিলোমিটারের টোল রোড ব্যবহার করে যে কেউ ইচ্ছে করলে পতেঙ্গা থেকে ফৌজদারহাটে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে পৌঁছতে পারবেন।
অপরদিকে ফৌজদারহাট থেকে টোল রোড ধরে রাসমনি ঘাটের কাছ পর্যন্ত গিয়ে আউটার রিং রোড ব্যবহার করে অনায়াসে যাওয়া যাবে পতেঙ্গায়। লালখান বাজার বা জিইসি মোড় থেকে ফ্লাইওভার ধরে বায়েজিদ-ফৌজদারহাট বাইপাস রোড ব্যবহার করে ফৌজদারহাট গিয়ে টোল রোড দিয়ে মাত্র চল্লিশ মিনিটে পতেঙ্গায় পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে। সম্প্রতি অনানুষ্ঠানিকভাবে সড়কটি চালু করার পর প্রতিদিন অনেক মানুষ এই রোড ব্যবহার করে পতেঙ্গা আসা-যাওয়া করছেন।
চট্টগ্রাম আউটার রিং রোড প্রকল্পের পরিচালক এবং সিডিএর প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস গতকাল আজাদীকে বলেন, আমাদের কাজ প্রায় নববই শতাংশ শেষ হয়েছে। ফিডার রোডে কিছু সমস্যা হয়েছে। এগুলো পুরোপুরি বাস্তবায়িত হতে কিছুটা সময় লাগবে। তবে পতেঙ্গা থেকে দক্ষিণ কাট্টলী রাসমনি ঘাট পর্যন্ত আউটার রিং রোডের কাজ প্রায় পুরোপুরি শেষ। এই পয়েন্ট থেকে এক কিলোমিটারের মতো অংশ পিচঢালা করে টোল রোডের সাথে যুক্ত করেছি। এতে করে পতেঙ্গা থেকে এসে রাসমনি ঘাট পয়েন্ট থেকে ফৌজদারহাটের দিকে টোল রোড ব্যবহার করা যাচ্ছে। তবে এই ব্যবস্থাটি দীর্ঘমেয়াদি নয়।
তিনি বলেন, আউটার রিং রোড প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ের একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছি। তাতে রাসমনি ঘাটের এই পয়েন্ট থেকে ফৌজদারহাট পর্যন্ত আলাদা পাঁচ কিলোমিটার রাস্তা হবে। এটি শুধু আউটার রিং রোডের অংশ হিসেবে ব্যবহৃত হবে। টোল রোডে কোনো ডিসটার্ব করবে না। তবে ওই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত টোল রোডের এই পাঁচ কিলোমিটার এলাকা ব্যবহার করে ফৌজদারহাট থেকে পতেঙ্গা আসা-যাওয়া করা যাবে।
সড়কটি চালু করা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, চট্টগ্রাম বিমানবন্দর সড়কে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ চলছে। বন্দরকেন্দ্রিক অনেক গাড়ি এবং এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজের জন্য বিমানবন্দর সড়কে মানুষের ভোগান্তি হচ্ছিল। এক্ষেত্রে মূল শহর থেকে বিমানবন্দর বা পতেঙ্গা যাতায়াতে মানুষ যাতে কষ্ট থেকে রক্ষা পান সেজন্য ফৌজদারহাট থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত রাস্তা চালু করে দেওয়া হয়েছে। ফলে বহু গাড়ি এখন বিমানবন্দর সড়কের পরিবর্তে আউটার রিং রোড ব্যবহার করছে। এর ফলে এই রাস্তায় গাড়ির চাপ ক্রমান্বয়ে কমে আসছে।
উল্লেখ্য, পতেঙ্গা থেকে সাগরিকা পর্যন্ত ১৫.২ কিলোমিটার দীর্ঘ ৮৪ ফুট প্রস্থ রাস্তাটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৩০ ফুট উঁচু। যান চলাচলে গতি আনতে এই সড়কটি নির্মাণ করা হচ্ছে। আউটার রিং রোডের সাথে তিনটি পয়েন্টে নগরী যুক্ত হওয়ার কথা ছিল। এর মধ্যে ফিডার রোড-১ (পতেঙ্গা স্টিল মিল এলাকায় র্যাব কার্যালয়ের পাশ দিয়ে নারিকেলতলা হয়ে রিং রোড), ফিডার রোড-২ (বড়পোল আনন্দবাজার হয়ে রিং রোড) এবং ফিডার রোড-৩ (সাগরিকা হয়ে রিং রোড)।
এর মধ্যে ফিডার রোড-২ বাতিল হয়ে গেছে। ফিডার রোড-১ নিয়ে কিছু ঝামেলা চলছে। ফিডার রোড-৩ এর বেশিরভাগ কাজ হয়ে গেছে। এক কিলোমিটার দীর্ঘ ওভারপাসটি চালু হলে এই ফিডার রোড ধরে নগরীর সাথে আউটার রিং রোড যুক্ত হবে।
সিডিএর প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস বলেন, শুধু বিমানবন্দরের মানুষ নন, পতেঙ্গা এলাকার বিভিন্ন শিল্প কারখানাসহ স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকেই এই রাস্তা ব্যবহার করে মূল শহরে আসা-যাওয়া করছেন। রাস্তাটি শহরের যান চলাচলের ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে।