আশি আর নব্বইয়ের দশকে কিশোর–তরুণ শ্রোতাদের মন মাতানো ‘চাঁদ তারা সূর্য নও তুমি’, ‘জ্বালা জ্বালা জ্বালা এই অন্তরে’, ‘ফিরিয়ে দাও’ এর মত গানের শিল্পী, দেশের জনপ্রিয় ব্যান্ডদল মাইলসের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা শাফিন আহমেদ ইন্তেকাল করেছেন (ইন্নালিল্লাহে… রাজেউন)। বাংলাদেশ সময় বৃহস্পতিবার ভোরে যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়ার একটি হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয় বলে মাইলসের কি বোর্ডিস্ট মানাম আহমেদ জানান। তিনি বলেন, সকাল ৬টা ২৫ মিনিটে মৃত্যুর খবর পাই। যুক্তরাষ্ট্রে চিকিৎসাধীন ছিলেন। সেখানে ট্যুরে গিয়েছিলেন, পাশাপাশি কনসার্টও ছিল। শাফিন আহমেদের ইন্তেকালে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এক শোক বার্তায় প্রধানমন্ত্রী মরহুমের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানান।
২০ জুলাই ভার্জিনিয়ায় একটি কনসার্টে গান করার কথা ছিল ৬৩ বছর বয়সী শাফিনের। কিন্তু তার হার্ট অ্যাটাক হলে শো বাতিল করা হয়। সেদিনই হাসপাতালে ভর্তি করা হয় শাফিনকে, পরে নেওয়া হয় লাইফ সাপোর্টে, কিন্তু বাঁচানো যায়নি। মানাম আহমেদ জানান, শাফিন হৃদরোগে ভুগছিলেন অনেক দিন ধরেই। তার হৃদযন্ত্রে রিং পরানো ছিল। তাছাড়া কিডনিতেও সমস্যা দেখা দিয়েছিল। সব মিলিয়ে তার শরীরের অঙ্গগুলো অকার্যকর হতে থাকে, যেটা তাকে আর সার্ভাইব করতে দেয়নি। এই শরীরে এত ঘন ঘন ট্রাভেল করাটা ঠিক হয়নি। কিছুদিন আগেও দেশের বাইরে ছিল। এত ট্রাভেল আর অনিয়মে অসুস্থ হয়ে পড়ে। শাফিনের মরদেহ কবে দেশে আনা হবে, পরিবারের সদস্যরাই সে সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানান মানাম। বাংলাদেশের সংগীত অঙ্গনের দুই মহারথী সংগীত শিল্পী ফিরোজা বেগম এবং সুরকার কমল দাশগুপ্তের ছেলে শাফিন নিজে ছিলেন বেইজ গিটারিস্ট, সুরকার এবং গায়ক। ১৯৬১ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি তাঁর জন্ম।
পারিবারিক ঐতিহ্যের কারণে ছোটবেলা থেকেই গানের আবহে বেড়ে উঠেছেন শাফিন। বাবার কাছে উচ্চাঙ্গ সংগীত আর মায়ের কাছে নজরুলগীতি শিখেছেন।
বড় ভাই হামিন আহমেদসহ ইংল্যান্ডে পড়তে গিয়ে পশ্চিমের সংগীতের সঙ্গে সখ্য হয় শাফিনের। শুরু হয় তার ব্যান্ড সংগীতের যাত্রা। একরকম শখের বশেই ১৯৭৯ সালে তারা গড়ে তোলেন ব্যান্ড দল ‘মাইলস’। প্রথম কয়েক বছর তারা বিভিন্ন পাঁচতারা হোটেলে ইংরেজি গান গাইতেন। পরে মাইলসের বাংলা গানের প্রথম অ্যালবাম ‘প্রতিশ্রুতি’ বের হয় ১৯৯১ সালে। ওই অ্যালবামের জনপ্রিয়তার পর বিটিভিতে বিভিন্ন গানের অনুষ্ঠানে দেখা যেতে থাকে মাইলসকে। ধীরে ধীরে মাইলস দেশের অন্যতম জনপ্রিয় ব্যান্ডদলে পরিণত হয়। মাইলসের সঙ্গে তিন দশকের পথচলার সমাপ্তি টেনে ২০১০ সালের জানুয়ারি মাসে বেরিয়ে আসেন আসেন শাফিন আহমেদ। তবে তার সংগীত যাত্রা চলতে থাকে। তার বিভিন্ন সলো অ্যালবামও জনপ্রিয় হয়। পরে তিনি গড়ে তোলেন নিজের ব্যান্ড দল ‘ভয়েস অব মাইলস’। মাঝে কিছুদিন রাজনীতিও করেছেন সংগীত ভুবনের তারকা শাফিন। চলতি বছর প্রকাশিত হয় শাফিনের জীবনীগ্রন্থ ‘পথিকার’।