যাতায়াতের পথ নিয়ে মুখোমুখি অবস্থানে রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ এবং বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি)। গত ৬ জুলাই রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ ইট ও কংক্রিট দিয়ে সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করায় বিপাকে পড়েছে বিএডিসি রাঙামাটি আঞ্চলিক বিপণন অফিস। জেলা পরিষদের পাশের বিকল্প পথ দিয়ে কেবল হেঁটে চলাচলের সুযোগ থাকলেও যানবাহন ও গুদামে বীজ গুদামজাতের সুযোগ না থাকায় চিন্তিত প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা। যদিও জেলা পরিষদ কর্তৃপক্ষ বলছে, পরিষদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার স্বার্থে পরিষদের নিজস্ব সীমানায় সীমানা প্রাচীর দিয়ে সুরক্ষিত করা হয়েছে।
বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) সূত্রে জানা গেছে, ১৯৭৯–৮০ সাল থেকে রাঙামাটি জেলা শহরের উত্তর কালিন্দীপুরে (বর্তমান রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ ভবনের পেছনে) বিএডিসির কার্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করা হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিগত প্রায় ৪৫ বছর ধরে খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটি পার্বত্য জেলার ১৭ উপজেলার কৃষক ও ডিলাররা রাঙামাটির এই আঞ্চলিক বীজগুদাম থেকে ধান, সরিষা, ভুট্টা, বাদাম ও পেঁয়াজসহ প্রভৃতি প্রজাতির ফসলের বীজ সংগ্রহ করেন। গুদামটির বীজ সংরক্ষণ সক্ষমতা ২০০ মেট্রিক টন। তবে প্রতি অর্থবছরে ৪০০–৫০০ মেট্রিক টনের অধিক বীজ বিতরণ ও গুদামজাত করা হয়ে থাকে এখানে।
বিএডিসির কর্মকর্তারা বলছেন, কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীনে এটি সরকারিভাবে কৃষক ও ডিলারদের মাঝে বীজ সরবরাহের একমাত্র প্রতিষ্ঠান। পার্বত্য চট্টগ্রামের রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ি জেলার প্রান্তিক কৃষক ও বীজ ডিলাররা এ গুদাম থেকে বীজ সংগ্রহ করে থাকেন। রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ নিরাপত্তার স্বার্থে সীমানা প্রাচীর দেওয়ার কথা বললেও এতে করে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন প্রান্তিক কৃষকরা। স্থানীয় উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান হিসাবে জেলা পরিষদকে প্রান্তিক কৃষকের স্বার্থ রক্ষার দিকটি বিবেচনায় নেওয়ার কথা বলেছেন তারা।
বিএডিসির বীজ বিপণণ রাঙামাটি আঞ্চলিক শাখার উপপরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) দীপক কুমার দাশ আজাদীকে বলেন, ‘রাঙামাটি জেলা পরিষদের নতুন পরিষদ গঠনের পর বিগত মাস দুয়েক আগে তারা সীমানা দেওয়ার কথা বলেন। জেলা পরিষদ সীমানা প্রাচীর দেওয়ার আগেই আমি আমাদের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। আমি জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের সঙ্গে দেখা করেছি, লিখিতভাবে বলেছি। দেওয়াল দিলে কৃষকরা কীভাবে বীজ নেবে, এখান থেকে লোড–আনলোড করতে সমস্যা হবে। ঢাকা থেকে বড় গাড়িগুলা আসে। এখানে দেওয়াল দিলে আমরা কীভাবে কী করব। তিনি আমাকে জানালেন, এটা নিয়ে উনার কিছুই করণীয় নেই। পাশে দিয়ে একটা জায়গা করে দিয়েছেন সেটা দিয়ে শুধু মানুষ হাঁটতে পারে। গাড়ি যেতে পারে না। চেয়ারম্যান নিরাপত্তার কথা বলে চলাচলের পথ দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন।‘
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কৃষিবিদ কাজল তালুকদার আজাদীকে বলেন, ‘জেলা পরিষদের বাউন্ডারি আমরা রক্ষা করব। পরিষদের সীমানা প্রাচীরের পাশ দিয়ে আমরা ৫ ফুট জায়গা দিয়েছি বিএডিসিকে যাতায়াতের জন্য এবং সে রাস্তা দিয়ে সিএনজি অটোরিকশা যেতে পারে, বড় গাড়ি যেতে পারে না। আমার জেলা পরিষদ প্রোটেকশনের জন্য এটা আমি করছি। এটা আমার দায়িত্ব। পরিষদের নিচে একটা টব রাখতে পারি না। সব সময় গরু–ছাগল প্রবেশ করে। বিগত সময়ে মোটর–সাইকেলও চুরি হয়েছে ৪–৫টা। আগের চেয়ারম্যান ওয়াল দিয়েছে ৫ ফুট জায়গা ছেড়ে। এখন আপনি কীভাবে যাবেন, না যাবেন; সেটা তো ভাই আমার দেখার বিষয় না। আমার প্রোটেকশনের জন্য দেওয়াল দিয়েছি।‘