কঙবাজারের চকরিয়ায় রাতের আঁধারে সশস্ত্র সন্ত্রাসী পাহারা বসিয়ে শত বছরের চলাচল পথের ওপর ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। এতে গত একমাস ধরে জিম্মি দশায় পতিত হয়েছে ১২টি পরিবারের সদস্যরা। এই অবস্থায় চরম দুর্ভোগে সময় পার করছেন এসব পরিবারের সদস্যরা।
অমানবিক এই ঘটনা ঘটেছে উপজেলার উপকূলীয় বদরখালী ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের চৌধুরী পাড়া গ্রামের মমতাজুল ইসলামের ওয়ারিশ সূত্রে প্রাপ্ত জমিতে। চলাচল পথে বহুতল ভবন নির্মাণের কাজ চলমান থাকায় গত একমাস ধরে ভুক্তভোগী ১২ পরিবারের সদস্যরা অন্যের বাড়ি–ভিটার ওপর দিয়ে চলাচল করছেন বলে অভিযোগ ওঠেছে।
এই ঘটনায় রাস্তা ও জমি মালিক ভুক্তভোগী মৃত মমতাজুল ইসলামের ছেলে নুরুল আবছার ও আনোয়ার হোছাইন বাদী হয়ে সম্প্রতি কঙবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি এমআর মামলা (২০৩/২৫) রুজু করেন। আদালত অভিযোগ আমলে নিয়ে বিরোধীয় বিষয়ে তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে এসিল্যান্ড চকরিয়া এবং আইন–শৃঙ্খলা তদারকি করতে চকরিয়া থানার ওসিকে নির্দেশ দিয়েছেন।
মামলার বাদী নুরুল আবছার অভিযোগ করেছেন, তাদের চলাচলের পথ জবর–দখল চেষ্টার বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করায় ক্ষিপ্ত হন অভিযুক্ত সাহেদ লতিফ, শাহাদাত কবির, জসিম উদ্দিন, শাহাব উদ্দিন গং। এর জের ধরে প্রায় একমাস আগে তারা রাতের আঁধারে বহিরাগত সশস্ত্র সন্ত্রাসী জড়ো করে বিভিন্ন অবৈধ অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে হামলা চালায়। এমনকি তাদের বাড়ির দরজায় তালা দিয়ে পরিবারের সবাইকে চলাচলের পথটি দখলে নিয়ে সেখানে রাতারাতি বহুতল ভবন তৈরির কাজ শুরু করেছে।
মামলার বাদী ভুক্তভোগী নুরুল আবছার ও তার ভাই আনোয়ার হোছাইন বলেন, চলাচল পথের মালিকানা নিয়ে ইতোপূর্বে বদরখালী সমিতির গ্রাম আদালত কর্তৃক আমাদের পক্ষে রায় দিয়েছে। তারপরও তারা দখল চেষ্টা চালালে আমরা নতুন করে কঙবাজারের জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আইনের আশ্রয় নিয়েছি। কিন্তু তারা আদালতের আদেশ অমান্য করে আমাদের চলাচলের পথটি দখলে নিয়ে এখন বাড়ি তৈরি করছেন।
সরজমিন দেখা গেছে, শতবছরের চলাচল পথে বহুতল ভবন নির্মাণের কারণে যাতায়াত বন্ধ হয়ে গেছে প্রায় ১২টি পরিবারের শতাধিক সদস্যের। ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর সদস্যরা বলেছেন, পৈতৃক অংশের মালিকানাধীন জমিতে তৈরি করা চলাচলের পথটি বন্ধ করে দেওয়ার কারণে আমাদের পরিবার ছাড়াও আশপাশের আরও ১১টি পরিবারের সদস্য গত একমাস ধরে চলাচলের ক্ষেত্রে চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে। অভিযুক্তরা স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী হওয়ায় আমরা তাদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছি। তাদের এই অমানবিক কর্মকাণ্ডে বাধা প্রদান করারও সাহস পাচ্ছি না। আমরা এই অবস্থায় বিজ্ঞ আদালত, উপজেলা ও থানা প্রশাসনের কাছে সুবিচার চাই। পাশাপাশি জিম্মিদশা থেকে আমাদের পরিবারকে উদ্ধারে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও এলাকাবাসীর কাছে সহযোগিতা কামনা করছি।
এই ঘটনার বিষয়ে বদরখালী সমবায় কৃষি ও উপনিবেশ সমিতির একজন পরিচালকের ভাষ্য– ভুক্তভোগী পরিবারগুলো শত বছর ধরে তাদের পৈতৃক জায়গায় চলাচল করে আসছিলেন। কিন্তু তাদেরই একটি পক্ষ আইন না মেনে গায়ের জোরে রাতের আঁধারে এসব পরিবারের চলাচল পথে বহুতল ভবন নির্মাণকাজ চালিয়ে যাচ্ছে। যা একেবারেই অমানবিক ঘটনা। তবে অভিযুক্তরা দাবি করেছেন, যেখানে ভবন নির্মাণের কাজ চলছে তা তাদের পৈতৃক সম্পত্তি। এখানে গায়ের জোরে কারও জায়গায় ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে না।












