চলন্ত গাড়িতে চালকদের মোবাইল ব্যবহার বন্ধ হয়নি

আইন আছে, মানা হচ্ছে কম, বাড়ছে দুর্ঘটনা ট্রাফিক পুলিশ, বিআরটিএ ও চালক-মালিকদের মধ্যে সমন্বয়ে গুরুত্ব

আজাদী প্রতিবেদন | মঙ্গলবার , ৮ নভেম্বর, ২০২২ at ৬:০৫ পূর্বাহ্ণ

আইনি নিষেধাজ্ঞা থাকলেও চলন্ত গাড়িতে চালকদের মোবাইল ফোনের ব্যবহার বন্ধ হয়নি। অথচ প্রতি বছর সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ বলা হচ্ছে চালক ও পথচারীদের মোবাইল ফোন ব্যবহার। দুর্ঘটনার প্রধান কারণ বলা হচ্ছে, চালকদের অসাবধানতা ও গাড়ির বেপরোয়া গতি। দ্বিতীয় কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, মোবাইল ফোনের ব্যবহার।

ভারতেও চালকদের মোবাইল ফোনে কথা বলা বন্ধে আইন রয়েছে। সেখানে এ আইন ভাঙলে ২ হাজার টাকা জরিমানা বা ৬ মাসের জেল অথবা উভয় দণ্ড দেয়ার বিধান রয়েছে। সেদিক বিবেচনায় আমাদের দেশে শাস্তি কম। তাই সমস্যা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা সম্ভব হচ্ছে না। মহানগরী থেকে হাইওয়ে, এমনকি আঞ্চলিক সড়ক, সবখানেই চালকরা মোবাইল ফোন ব্যবহার করছেন। সব যানবাহনের চালক ইচ্ছেমতো চলন্ত অবস্থায় মোবাইল ফোনে কথাবার্তা বলেন।

শুধু গাড়ি চালানো অবস্থায় চালক নন, মোবাইল ফোন ব্যবহারে অসতর্কতার কারণে গাড়ির নিচে চাপা পড়ে বা গাড়ির ধাক্কায় আহত অথবা নিহত হচ্ছেন পথচারীরা। আবার ট্রেনের লাইন ধরে হাঁটার সময় মোবাইল ফোনে কথা বলতে বলতে দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন অনেকে।

যানবাহন চালানোর সময় চালকের কিংবা রাস্তা পারাপারের সময় পথচারীর মোবাইলে হঠাৎ করে কল এলে তাদের মনোসংযোগ বিঘ্নিত হয়। ফলে মুহূর্তের মধ্যে ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। এছাড়া অনেক সময় দেখা যায়, চালকরা ডান হাতে স্টিয়ারিং ধরে বাম হাতে মোবাইল সেট কানে চেপে ধরে গাড়ি চালাতে চালাতে কথা বলেন। নগরীতে প্রায়ই চোখে পড়ে এই দৃশ্য। দেখা যায় মোটরসাইকেল আরোহীর ক্ষেত্রেও। এছাড়া প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস, যাত্রীবাহী বাস কিংবা মালবাহী ট্রাক চালকদের কথা বলার দৃশ্যও চোখে পড়ে।

সিএমপি ট্রাফিক বিভাগের উপ-কমিশনার তারেক আহমেদ আজাদীকে বলেন, ছোট-বড় যেকোনো গাড়ি চালানোর সময় চালকের মোবাইল ফোনে কথা বলা কখনোই উচিত নয়। এ সম্পর্কিত আইন আছে। এজন্য মোবাইল কোর্ট পরিচালনার ওপরও গুরুত্বারোপ করেন তিনি। তবে শুধুমাত্র মোবাইল কোর্ট পরিচালনার মাধ্যমে এর সমাধান আসবে না। সচেতনতাই একমাত্র সমাধান। মোবাইল কোর্ট নিয়মিত চালিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। এজন্য চালককে সচেতন হতে হবে, যাত্রীকে সচেতন হতে হবে, পথচারীদের সচেতন হতে হবে। ট্রাফিক পুলিশ, বিআরটিএ ও চালক-মালিকদের মধ্যে সমন্বয় সাধন করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।

মোবাইলজনিত কারণে কত দুর্ঘটনা ঘটছে, এর কোনো পরিসংখ্যান নেই বাংলাদেশে। মোবাইল ফোনে কথা বলতে অথবা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ম্যাসেজ আদান-প্রদান করতে গিয়ে মনোযোগ হারিয়ে সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন। এ প্রবণতা ১৫ থেকে ৩০ বছরের তরুণ-যুবকদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। চালকদের মধ্যে বয়সে অপেক্ষাকৃত তরুণ ও যুবকদের মধ্যে দুর্ঘটনা বেশি ঘটছে।

২০০৭ সালের ১২ জুলাই গাড়ি চালানোর সময় মোবাইল ফোনে কথা না বলার ব্যাপারে মোটরযান আইনের ১১৫ (বি) ধারার সংশোধন করে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। এতে গাড়ি চালানোর সময় মোবাইলে কথা বলা নিষিদ্ধ করা হয়। ওই আইনে যানবাহন চলার সময় চালকের এয়ারফোন ব্যবহারও নিষিদ্ধ করা হয়। এ আইন ভঙ্গ করলে সর্বোচ্চ ৫০০ টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়। পরবর্তীতে সংশোধিত মোটর ভেহিক্যালস আইন কার্যকর হয় ২০১৯-এর ১ সেপ্টেম্বর থেকে। ওই আইনের ৬৩ ধারায় যেসব পরিবর্তন আনা হয়েছে সেখানে কোনো জরুরি পরিষেবা প্রদানকারী গাড়িকে রাস্তা ছাড়তে ব্যর্থ হলে জরিমানার পরিমাণ বাড়িয়ে করা হয়েছে ১০ হাজার টাকা। আগে এই জরিমানার পরিমাণ ছিল ২ হাজার টাকা। মোবাইল ফোনে কথা বলার সময় গাড়ি চালালে জরিমানার পরিমাণ ৫ হাজার টাকা করা হয়। আগে এক্ষেত্রে জরিমানা করা হতো ১ হাজার টাকা।

মোবাইলে কথা বলা বন্ধ করা যাচ্ছে না কেন? এই প্রশ্নে নগরীর ট্রাফিক ইন্সপেক্টর (টিআই দক্ষিণ) প্রসিকিউশন অনিল বিকাশ চাকমা আজাদীকে বলেন, মোবাইল ফোন ব্যবহারের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট আইন রয়েছে। আইনে জেল-জরিমানার বিধানও আছে। কিন্তু আইন মানার প্রবণতা কারো মধ্যে লক্ষ্য করা যায় না। মূলত আইন অমান্য করে গাড়ি চালানোর কারণে দুর্ঘটনা বেড়ে চলেছে। তবে পুলিশের মামলা দেওয়ার চেয়ে মানুষের সচেতনতা বৃদ্ধিতে কাজ করা জরুরি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধব্রাজিলের পতাকা লাগাতে গিয়ে ছাদ থেকে পড়ে কিশোরের মৃত্যু
পরবর্তী নিবন্ধআ. লীগ নেতাকে পেটানোর অভিযোগ উপজেলা চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে