পার্বত্য অববাহিকা হয়ে কক্সবাজারের চকরিয়ার হারবাং ছড়া খালের একটি শাখা খাল প্রবাহিত হয়েছে বরইতলী ইউনিয়নের ওপর দিয়ে। চাষাবাদের জন্য এই মিঠা পানির উৎস হচ্ছে এই শাখা খাল। কিন্তু বছরের পর বছর ধরে এই শাখা খালটি পলি জমে ভরাট হয়ে থাকায় প্রতিবছর বরইতলী ইউনিয়নের অন্তত ১২০০ একর জমিতে ধান, রকমারি সবজিসহ বিভিন্ন ফসল ফলানো যাচ্ছিল না। এই অবস্থায় কৃষকেরা তিন ফসলা জমিতে দীর্ঘ দুই যুগ ধরে প্রতিবছর দুইবারের ফসল তুলতে পারছিলেন না। তবে কৃষকের সেই দুঃখ এবার ঘুচতে চলেছে ভরাট হয়ে থাকা শাখা খালটির দুই কিলোমিটার খননের মধ্য দিয়ে। এতে আশা করা যাচ্ছে– চলতি মৌসুম থেকে কৃষককে আর তাদের জমিতে ফসল ফলাতে মিঠা পানির উৎস নিয়ে দুশ্চিন্তায় ভুগতে হবে না।
উপজেলার কৃষি মাত্রিক ইউনিয়ন বরইতলীর ওপর দিয়ে প্রবহমান থাকা এই শাখা খালের খনন কাজ শুরু হয়েছে অন্তত ১৫ দিন আগে থেকে। শাখা খালটির দুই তীরের দুই কিলোমিটার জুড়ে খনন করার কাজ পুরোদমে এগিয়ে চলছে। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে এই খননের কাজ শতভাগ শেষ হবে। উপজেলা কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, বরইতলী ইউনিয়নের অন্তত ১২০০ একর জমিতে ধানসহ রকমারি সবজি উৎপাদনের জন্য মিঠা পানির উৎস নিয়ে হতাশায় ছিলেন শত শত কৃষক। সেচ সুবিধা অনিশ্চয়তার কারণে বছরের পর বছর ধরে এলাকার বিপুল পরিমাণ কৃষি জমি অনাবাদি পড়ে থাকার বিষয়টি বরইতলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ছালেকুজ্জামান উপজেলা মাসিক উন্নয়ন সমন্বয় সভায় উত্থাপন করেন। তখনই বিষয়টি আমলে নিয়ে শাখা খালটি দ্রুত খনন করে কৃষকের সেচ সুবিধা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের (বিএডিসি) দায়িত্বপ্রাপ্ত উপ–সহকারী প্রকৌশলীকে নির্দেশ দেন উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভার সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ আতিকুর রহমান। এরই প্রেক্ষিতে বিএডিসি চকরিয়া উপজেলা কার্যালয়ের উপ–সহকারী প্রকৌশলী মোজাম্মেল হকের নেতৃত্বে একটি টিম সরেজমিন হারবাং ছড়া ও শাখা খালসহ আশপাশের কৃষি জমি পরিদর্শন শেষে খালটি খননের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে একটি প্রকল্প প্রস্তাবনা পাঠান। সেই প্রস্তাবনার আলোকে প্রাথমিকভাবে খালের দুই কিলোমিটার অংশে খননের জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স কামরুল ইসলাম কামরানকে দরপত্রের মাধ্যমে ঠিকাদার নিয়োজিত করা হয়। এরপর শুরু হয় খাল খননের কাজ। খনন কাজের উদ্বোধন করেন বরইতলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ছালেকুজ্জামান।
বরইতলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ছালেকুজ্জামান বলেন, বরইতলীর গুরুত্বপূর্ণ ও দীর্ঘদিনের মৃতপ্রায় হারবাং ছড়ার শাখা খাল খননের কাজ অবশেষে শুরু হয়েছে। এই খাল খননের মধ্য দিয়ে বৃহত্তর হারবাং বড় বিলসহ আশপাশের আরও চারটি বিলের পানি দ্রুত নিষ্কাশন হবে। এতে বন্যা–দুর্যোগের সময় পহরচাঁদা গ্রামসহ বরইতলী ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলীয় এলাকা থেকে পানি সহজে মাতামুহুরী নদীতে নেমে যাবে। চকরিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাহনাজ ফেরদৌসী বলেন, বছরের বেশিরভাগ সময় চকরিয়া উপজেলার হারবাং বড়বিলের বিপুল পরিমাণ চাষের জমি জলাবদ্ধতায় নিমজ্জিত থাকে। কারণ ওই বিলের পানি নিষ্কাশনের খালটি পলি জমে ভরাট হয়ে পড়ার কারণে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। এ কারণে হারবাং বড়বিলের বেশিরভাগ জমি অনাবাদি পড়ে থাকে বছরের পর বছর ধরে। একইভাবে হারবাংছড়া খালটি ভরাট হয়ে পড়ায় সেচ সুবিধার অভাবে বরইতলী ইউনিয়নের ১২০০ একর জমিতে চাষাবাদ করা কঠিন হয়ে পড়ে কৃষকদের। এই অবস্থায় বিএডিসি কর্তৃক হারবাংছড়ার শাখা খালটি খননের কাজ শুরু হওয়ায় কৃষকেরা চাষাবাদ নিয়ে নতুন করে স্বপ্ন বুনছেন।
বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) চকরিয়া উপজেলা কার্যালয়ের উপ–সহকারী প্রকৌশলী মোজাম্মেল হক বলেন, শাখা খালটির দুই কিলোমিটারজুড়ে খননের ফলে হারবাং বড়বিলের বেশিরভাগ অংশ এবং বরইতলী ইউনিয়নের সিকদার খাল, বাইন্যারবিল খাল, পহরচাঁদা বিল লাগোয়া ছড়াখালে পানির গতিপথ সচল হতে চলছে। এতে করে চাষাবাদ নিয়ে স্থানীয় কৃষকের সেচ সুবিধা অনিশ্চয়তা কেটে গেছে।












