করোনা সংক্রমণের আগে চট্টগ্রাম-কলকাতা রুটে রাষ্ট্রীয় বিমান সংস্থা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের পাশাপাশি বেসরকারি বিমান সংস্থা ইউএস বাংলা, রিজেন্ট এয়ারওয়েজ ও ভারতের বেসরকারি বিমান সংস্থা স্পাইস জেট ফ্লাইট পরিচালনা করত। এখন স্পাইস জেট ছাড়া অন্য সব ফ্লাইট চলাচল বন্ধ রয়েছে। অথচ সংক্রমণ কমার পর এই রুটে বিমানে যাত্রীর চাপ বেড়েছে দ্বিগুণেরও বেশি। যাত্রীদের বেশিরভাগই রোগী। বিশেষ করে ভিসা ওপেন হওয়ার পর চিকিৎসাসহ নানা কারণে প্রচুর বাংলাদেশি প্রতিদিন কলকাতায় যাচ্ছেন। সেই কারণে চট্টগ্রাম-কলকাতা রুটে দুই-তিন মাসের ব্যবধানে বিমান ভাড়া বেড়ে দাঁড়িয়েছে তিন গুণের কাছাকাছি।
শুধু চট্টগ্রাম-কলকাতা রুট নয়, ঢাকা থেকে ভারতের সব রুটের বিমান ভাড়া এখন আকাশছোঁয়া। যাত্রীরা বলেছেন, আমাদের অবস্থা শোচনীয়। তাদের দাবি, চট্টগ্রাম-কলকাতা রুটে বাংলাদেশ বিমানসহ অন্যান্য কোম্পানির ফ্লাইট চালু করা হোক। ২০২০ সালের ৫ নভেম্বর প্রথম চট্টগ্রাম-কলকাতা রুটে স্পাইস জেটের ফ্লাইট চলাচল শুরু হয়। তখন এই রুটে একমুখী ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছিল ৫ হাজার ৬১৩ টাকা। আসা-যাওয়া মিলিয়ে ভাড়া ১০ হাজার ১০৪ টাকা। শুরুতে তারা সপ্তাহে চারটি ফ্লাইট পরিচালনা করে।
মহামারীর কারণে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর ৬ জানুয়ারি থেকে পুনরায় স্পাইস জেটের চলাচল শুরু হয়। চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে চারটি ফ্লাইট দিয়ে ড্যাশ-৮ উড়োজাহাজে যাত্রী পরিবহন শুরু করে তারা। শুরুতে এই রুটের যাত্রীদের জন্য একমুখী সর্বনিম্ন ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছিল ৮ হাজার ৯৩২ টাকা। রিটার্ন ভাড়া ১৭ হাজার ৮৩৭ টাকা।
চট্টগ্রাম থেকে সরাসরি কলকাতায় ফ্লাইট চালু হওয়ায় যাত্রীদের চাহিদা বেড়ে যায়। চাহিদার সাথে সাথে ভাড়াও বেড়ে গেছে। চট্টগ্রাম ছাড়াও ঢাকা বিমানবন্দর থেকে ভারতের মুম্বাই, দিল্লি ও কলকাতা রুটে নিয়মিত ফ্লাইট রয়েছে স্পাইস জেটের।
এ ব্যাপারে স্পাইস জেট লিমিটেডের চট্টগ্রামের ইনচার্জ মো. আসিফ চৌধুরী আজাদীকে বলেন, বাংলাদেশ-ভারত এয়ার বাবল চুক্তির আওতায় চট্টগ্রাম-কলকাতা রুটে শুধু আমরা সপ্তাহে চারদিন ফ্লাইট পরিচালনার অনুমোদন পেয়েছি। চুক্তির কারণে চারদিনের বেশি ফ্লাইট চালানো সম্ভব হচ্ছে না। এই চুক্তি বাতিল হলে তখন ডেইলি ফ্লাইট পরিচালনার চিন্তা রয়েছে। ডেইলি ফ্লাইট চালু হলে তখন হয়ত এই ভোগান্তি থাকবে না। বিমানের প্রতি চাপ বেড়েছে। যাত্রীরা যেভাবে চাচ্ছেন আমরা সেভাবে চাহিদা পূরণ করতে পারছি না। এখন আমাদের প্রতিটি ফ্লাইট ৭৮ সিটের। বড় এয়ার ক্রাফট নামানোর চিন্তা রয়েছে বলেও জানান তিনি।
এদিকে চট্টগ্রাম-কলকাতা রুটে বিমানের ভাড়া হঠাৎ করে দুই-তিন গুণ বেড়ে যাওয়ায় কারণ হিসেবে একটি মাত্র কোম্পানির ফ্লাইট চলাচলকে দায়ী করেছেন এয়ার বাংলা ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরের জিএম মিঠু পারিয়াল। তিনি আজাদীকে বলেন, এই রুটে বাংলাদেশ বিমানসহ অন্যান্য কোম্পানির ফ্লাইট চালু করা হলে বিমান ভাড়া আগের মতোই ওয়ানওয়ে ৮-৯ হাজার কিংবা ১০ হাজারের বেশি হওয়ার কথা নয়। তিনি জানান, রিটার্ন ভাড়া ১৭ হাজার টাকায় ওরা ১৫টি অফার দিয়েছে। এই ১৫টি বিক্রি হয়ে গেলে পরের ১৫টির অফার দেয় ২০ থেকে ২২ টাকায়। এই ১৫টি সেইল হয়ে গেলে পরের ১৫টি আরো বাড়তি দামে বিক্রি করে। যাত্রীদের বাধ্য হয়ে যেতে হচ্ছে। এমন অবস্থা, ইন্ডিয়ার টিকিট আমরা বুকিংও করতে পারছি না। ওদের সিস্টেমে যখন যে অবস্থায় টিকিটের দাম দেখা যাচ্ছে সেই অবস্থাতেই বুকিং দিতে হয়। বুকিং না দিলে ২ মিনিটের মধ্যে আবার বেড়ে যাচ্ছে। অথচ মধ্যপ্রাচ্যসহ অন্যান্য দেশের ক্ষেত্রে আমরা টিকিট বুকিং দিয়ে রাখতে পারি। ইন্ডিয়ার ক্ষেত্রে সেটা হয় না। এটা ওদের সিস্টেমে (অনলাইনে) গেলে দেখবেন। মানুষ কষ্ট পাচ্ছে বেশি। এটা নিয়ে ভাবা উচিত।
একই কথা জানালেন সুন্দরবন ইন্টারন্যাশনাল ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরের ম্যানেজার মো. মোরশেদ আলম। তিনি আজাদীকে বলেন, কলকাতাগামী ফ্লাইটের ভাড়া বেড়ে যাওয়ার কারণ হলো, ফ্লাইট কম যাত্রী বেশি। এখন ইন্ডিয়ান ভিসা ওপেন করে দেয়া হয়েছে। এতে চিকিৎসার জন্য রোগী বেশি যাচ্ছেন। তারা যেকোনো প্রকারে বিমানে যেতে চাচ্ছেন। তিনি জানান, ১৬ ফেব্রুয়ারি একজন যাত্রীর চট্টগ্রাম-কলকাতা ভাড়া চেয়েছে ২৬ হাজার টাকা।
স্পাইস জেট বাংলাদেশ সূত্র জানায়, এয়ার বাবল চুক্তির আওতায় রোববার, সোমবার, বুধবার ও বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম-কলকাতা রুটে ফ্লাইট চলছে। বাংলাদেশ সময় সকাল ১০টা ১৫ মিনিটে ফ্লাইট চট্টগ্রাম ছেড়ে স্থানীয় সময় ১০টা ৪৫ মিনিটে কলকাতা পৌঁছায়। কলকাতা থেকে ফ্লাইটগুলো স্থানীয় সময় সকাল ৭টা ৫০ মিনিটে ছেড়ে চট্টগ্রামে নামে ৯টা ২০ মিনিটে।