রাঙামাটি পার্বত্য জেলার কাপ্তাইয়ে অবস্থিত কর্ণফুলী পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্র চরম পানি সঙ্কটে পড়েছে। কাপ্তাই লেকে পানির স্তর দিন দিন কমে যাচ্ছে। পানির অভাবে কাপ্তাই বিদ্যুৎ কেন্দ্র বর্তমানে চরম ঝুঁকিতে রয়েছে। টানা খরার কারণে কাপ্তাই লেকে পানি আশঙ্কাজনক হারে কমে যাচ্ছে বলে জানা গেছে।
সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা গেছে কাপ্তাই লেকের বিভিন্ন জায়গা বর্তমানে শুকিয়ে আছে। যেসব নৌকা পানিতে ভেসে থাকার কথা সেগুলো এখন শুকনো মাটিতে আটকা পড়ে আছে। লেকে পানি কম থাকার করণে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ধস নেমেছে। বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য কাপ্তাই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ৫টি ইউনিট পুরোপুরি সচল থাকলেও বর্তমানে শুধু ১টি ইউনিট চালু রেখে নামমাত্র ২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।
পানি পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলে এই কেন্দ্র থেকে ২৪২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপন্ন করা হয় বলে জানা গেছে।
কর্ণফুলী পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী এ টি এম আব্দুজ্জাহের কাপ্তাই লেকে পানি কম থাকার কথা স্বীকার করেছেন।
তিনি বলেন, “রুলকার্ভ (পানির পরিমাপ) অনুযায়ী এই মুহুর্তে আজ রবিবার (২১ মে) কাপ্তাই লেকে পানি থাকার কথা ৭৮.২০ ফুট মিন সী লেভেল (এমএসএল) কিন্তু লেকে এখন পানি রয়েছে ৭৩.৬২ ফুট এমএসএল। কাপ্তাই লেকে পানি কম থাকার কারণে বর্তমানে ১ নম্বর ইউনিট চালু রেখে ৪২ মেগাওয়াটের স্থলে মাত্র ২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপন্ন করা হচ্ছে। পানির স্তর আরো কমলে বিদ্যুৎ উৎপাদনও যথারিতি কমে যাবার আশঙ্কা রয়েছে।”
একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, কাপ্তাই বিদ্যুৎ কেন্দ্র বর্তমানে চরম ঝুঁকিতে রয়েছে। আকাশে মেঘ দেখা যাচ্ছে না। তপ্ত রোদে খাঁ খাঁ করছে চারিদিক। বৃষ্টির দেখা নেই। সহসা ভারী বৃষ্টি না হলে এবং কাপ্তাই লেকে পানির স্তর ৭০ ফুট এমএসএলের নিচে নেমে গেলে পানির অভাবে বিদ্যুৎ উৎপন্ন বন্ধ হয়ে যাবে।”
এদিকে, কাপ্তাই লেকে পানি কম থাকায় বিদ্যুৎ উৎপাদনে ধস নামার পাশাপাশি নৌ যোগাযোগও প্রায় বন্ধ হয়ে আছে। কাপ্তাই লেক তীরবর্তী এলাকা ছাড়াও বিলাইছড়ি, বরকল, লংগদু, জুরাছড়ি, নানিয়ারচর, বাঘাইছড়ি, রাঙ্গামাটি সদর উপজেলার বিশাল অংশে যাতায়াতে প্রধান মাধ্যম হলো নৌ যোগাযোগ কিন্তু লেকে পানি কম থাকায় নৌ চলাচলও প্রায় বন্ধ হয়ে আছে। এমন পরিস্থিতিতে অত্যন্ত কষ্ট ও ঝুঁকি নিয়ে মানুষ যাতায়াত করছে।
কাপ্তাই বোট চালক সমিতির সভাপতি মো. ইদ্রিস জানান, লেকে পানি না থাকায় তাদের বোট চালানো যাচ্ছে না। এর ফলে বোট চালকদের আয়-রোজগারও হুমকির মুখে পড়েছে।
সহসা ভারী বৃষ্টি না হলে এবং লেক পানিতে ভরে না উঠলে এই পরিস্থিতি সামাল দেওয়া সম্ভব নয় বলেও তিনি মন্তব্য করেন। তাই লেক সংশ্লিস্ট হাজার হাজার মানুষ আকাশের দিকে চেয়ে আছে কখন ঝুপঝুপ বৃষ্টি ঝরবে। আর কখন কাপ্তাই লেকে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসবে।
