চমেক হাসপাতালে রিপ্লেসমেন্ট ছাড়া চিকিৎসকদের বদলিতে সংকট বাড়বে

| বৃহস্পতিবার , ৮ জুলাই, ২০২১ at ৪:৪৩ পূর্বাহ্ণ

চিকিৎসক গণবদলির আদেশে ব্যাপক সমালোচনা চলছে দেশব্যাপী। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের শতাধিক চিকিৎসককে একযোগে বিভিন্ন হাসপাতালে বদলি করা হয়েছে। সংযুক্তির মাধ্যমে এসব চিকিৎসককে জেলা-উপজেলার বিভিন্ন হাসপাতালে পদায়ন করা হয়েছে। বদলিকৃতদের একটি বড় অংশই সিনিয়র চিকিৎসক। এদিকে, চিকিৎসকদের একসঙ্গে বদলি করার আদেশ বাস্তবায়নে ‘জটিলতা’ থাকার কথা তুলে ধরে সমালোচনার মুখে তা সংশোধন করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। বদলির আদেশ দেওয়ার একদিন পরই যেসব চিকিৎসকের ‘বদলি আদেশ বাস্তবায়নে সমস্যা হবে’ তা বৃহস্পতিবার ৮ জুলাই পর্যন্ত স্থগিত করা হয়েছে।
গত ৬ জুলাই দৈনিক আজাদীতে প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়, একযোগে এত সংখ্যক চিকিৎসককে বদলির কারণে নিজেদের (চমেক) হাসপাতালে করোনার চিকিৎসাসহ অন্যান্য চিকিৎসা সেবা মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হবে বলে মন্তব্য করেছেন চমেক হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এস এম হুমায়ুন কবীর। হতাশা প্রকাশ করে তিনি আজাদীকে বলেন, এত সংখ্যক চিকিৎসক নিয়ে গেলে আমার এখানে চিকিৎসার জন্য লোক থাকবে না। আর চিকিৎসার জন্য ডাক্তার না থাকলে করোনা ওয়ার্ডসহ অন্যান্য ওয়ার্ডেও মারাত্মক প্রভাব পড়বে। করোনা ওয়ার্ড বন্ধ করে দিতে হয় মতো পরিস্থিতিও হতে পারে। আমি বিষয়টি এরই মধ্যে সংশ্লিষ্ট সকলকে অবহিত করেছি। সার্বিক বিবেচনায় মন্ত্রণালয়ের এ সিদ্ধান্ত পুন:বিবেচনার অনুরোধ জানিয়েছেন চমেক হাসপাতাল পরিচালক। এ নিয়ে মন্ত্রণালয়ের সচিব মহোদয়ের সাথে কথা বলবেন বলেও জানান তিনি।
এদিকে, ৬০ জন চিকিৎসককে পদায়নে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে জায়গা সংকটের আশঙ্কা করছেন হাসপাতাল সংশ্লিষ্টরা। এ বিষয়ে জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কের দায়িত্বে থাকা চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বলেন- সব সিনিয়র চিকিৎসকদের পদায়ন করা হয়েছে। কিন্তু এত সংখ্যক চিকিৎসককে এক সাথে বসতে দেয়ার মতো জায়গার সংস্থান হবে কী না, একটু দ্বিধা রয়েছে। অবশ্য জেনারেল হাসপাতালে বর্তমানে উপজেলা পর্যায়ের ৬০ জনের মতো চিকিৎসক কর্মরত আছেন জানিয়ে সিভিল সার্জন বলেন, উপজেলা পর্যায়ে করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় এসব চিকিৎসককে হয়তো নিজেদের পুরনো কর্মস্থলে ফিরিয়ে নেয়া হতে পারে।
চমেক হাসপাতাল ও চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের দুই দায়িত্বশীল কর্মকর্তার বক্তব্যে আমরা যেমন হতাশার সুর শুনি, তেমনি স্বাস্থ্যখাত সংশ্লিষ্ট মানুষদের সমালোচনা দেখতে পাই বিভিন্ন গণমাধ্যমে। তাঁদের অভিযোগ, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের শতাধিক চিকিৎসককে একযোগে অন্যত্র বদলি করা হলে এখানকার চিকিৎসাসেবা কীভাবে অব্যাহত রাখা যাবে, তা মোটেই ভাবলো না স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়। বৃহত্তর চট্টগ্রামের বিভিন্ন লোকালয়ের যে কোনো জটিল রোগীকে রেফার করা হয় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। কেননা এখানে আছে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। কিন্তু এখান থেকে যদি এই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের অন্যত্র বদলি করা হয়, তাহলে বড় শূন্যতা বিরাজ করবে। মনে রাখতে হবে, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল শুধুমাত্র চট্টগ্রাম শহরের নয়, এ অঞ্চলের প্রায় ৫ কোটি মানুষের সেবা প্রদানের একটি জরুরি প্রতিষ্ঠান। তাই চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে রিপ্লেসমেন্ট ছাড়া এই জটিল সময়ে চিকিৎসকদের বদলি কোনো অবস্থাতেই কল্যাণ বয়ে আনবে না। তাতে করোনা আক্রান্ত ও সাধারণ রোগীদের মাঝে জরুরি সেবা প্রদানে যে সংকট তৈরি হবে, তা হবে অকল্পনীয়। তাছাড়া, যেসব চিকিৎসককে চট্টগ্রাম মেডিকেল থেকে বদলি করে জেলা-উপজেলায় পাঠানো হচ্ছে, তাঁদের মধ্যে আছেন দন্তরোগ, চক্ষুরোগ, প্যাথলজিস্ট, মাইক্রোবায়োলজিস্ট, কার্ডিওলজিস্ট, নিউরোসার্জন, জেনারেল সার্জন, নাক-কান ও গলা রোগ, শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ। করোনা চিকিৎসার ক্ষেত্রে এসব বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ওখানে কী ভূমিকা রাখবেন তা সাধারণ মানুষের বোধগম্য নয়। বেশ কিছুদিন ধরে দেশের মানুষ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অস্থিরতা লক্ষ্য করছে। স্বাস্থ্যখাতের অনিয়ম এখন দেশব্যাপী আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। কিন্তু দুর্নীতি কমানোর জন্য কোনো কার্যকর উদ্যোগ চোখে পড়ে না। মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্তরা দুর্নীতির বিষয়টি আমলেই নেন না বলে অভিযোগ রয়েছে। স্বাস্থ্য খাতে যে অনিয়ম চলে আসছে সেটি দূর করে স্বাস্থ্য খাতের ওপর মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনা সরকারের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জিং কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেই জায়গায় নতুন করে সংকট তৈরি করা নিতান্তই বুদ্ধিহীনতার কাজ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে