চমেক হাসপাতালের নির্ধারিত প্রকল্প কুমিল্লায় করার প্রস্তাবনা

বলা হলো জায়গা সংকটের কথা, সংকট আসলে কতটা ।। ৮ বিভাগীয় মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিউরোসায়েন্স অর্থোপেডিক মানসিক ও স্কিন ইউনিট স্থাপন

আজাদী প্রতিবেদন | রবিবার , ৯ অক্টোবর, ২০২২ at ৬:৪৯ পূর্বাহ্ণ

দেশের ৮টি বিভাগীয় মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ‘নিউরোসায়েন্স, অর্থোপেডিক, মানসিক ও স্কিন ইউনিট স্থাপন’ শীর্ষক একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালও এই প্রকল্পের আওতাভুক্ত। প্রকল্পের আওতায় নির্ধারিত মেডিকেল কলেজ হাসপাতালগুলোতে নতুন করে চারটি ইউনিট (নিউরোসায়েন্স, অর্থোপেডিক, মানসিক ও স্কিন) স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এরই মাঝে এ প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই (ফিজিবিলিটি স্টাডি) সম্পন্ন হয়েছে। তবে এখনো ডিপিপি প্রণয়ন হয়নি।
কিন্তু এরই মাঝে নির্ধারিত এই প্রকল্প থেকে চমেক হাসপাতালের বাদ পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। সম্প্রতি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে এ সংক্রান্ত এক সভায় চমেক হাসপাতালের পরিবর্তে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এ প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রস্তাবনা ওঠায় এমন আশঙ্কা জোরালো হয়েছে। কারণ, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম এমন প্রস্তাবনা দিয়েছেন। এই প্রস্তাবনার পিছনে চমেক হাসপাতালে জায়গা সংকটের কথা উল্লেখ করেছেন তিনি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে প্রদত্ত তথ্য অনুযায়ী, স্বাস্থ্যের ডিজির গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলায়।
মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের আওতায় প্রস্তাবিত অননুমোদিত নতুন প্রকল্পসমূহের ফিজিবিলিটি স্টাডি, ডিপিপি প্রণয়ন এবং অনুমোদন প্রক্রিয়াকরণ অগ্রগতি পর্যালোচনা সংক্রান্ত সভা গত ৪ আগস্ট মন্ত্রণালয়ের সভা কক্ষে অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক। সভায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং বেশ কয়টি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক উপস্থিত ছিলেন। সভায় ৮টি বিভাগীয় মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ‘নিউরোসায়েন্স, অর্থোপেডিক, মানসিক ও স্কিন ইউনিট স্থাপন’ প্রকল্পের বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।
প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই সম্পন্ন হয়েছে অবহিত করে সভায় জানানো হয়, খসড়া সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের ওপর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে ২টি বৈঠক হয়েছে। তাতে সম্ভাব্যতা যাচাই প্রতিবেদনের ওপর মতামত দেয়া হয়েছে। প্রকল্পের আওতাভুক্ত চট্টগ্রাম, সিলেট ও ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ক্যাম্পাসে হাসপাতাল সম্প্রসারণের জন্য জায়গার অপ্রতুলতা রয়েছে মর্মে সভায় অবহিত করা হয়।
এর প্রেক্ষিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম সভায় বলেন, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে বিদ্যমান ভবনের যে বিন্যাস রয়েছে, সেখানে নতুন ভবন স্থাপন করলে হাসপাতালের বাতাস চলাচলের রাস্তা বন্ধ হয়ে যাবে। সভায় জানানো হয়, চট্টগ্রামে স্কিনের চিকিৎসার জন্য একটি আলাদা হাসপাতাল রয়েছে। উক্ত হাসপাতাল সম্প্রসারণের জন্য জাইকার অর্থায়নের প্রস্তাবও রয়েছে। ফলে স্কিনের ইউনিট চট্টগ্রাম মেডিকেলে সম্প্রসারণ না করলেও চলবে। আলোচনার প্রেক্ষিতে চট্টগ্রাম বিভাগে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিবর্তে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এই চারটি ইউনিট স্থাপন করা যায় কিনা তা পরীক্ষার সিদ্ধান্ত হয়েছে। অবশ্য স্কিন ইউনিট বাদ দিয়ে চমেক হাসপাতালে অন্য তিনটি ইউনিট স্থাপনের জন্য কী পরিমাণ জায়গা প্রয়োজন, কোথায় ভবন নির্মাণ সম্ভব; সে বিষয়ে একটি প্রতিবেদন দিতে নির্দেশনা দিয়েছেন স্বাস্থ্য মন্ত্রী। চট্টগ্রামে জমি পাওয়া না গেলে কুমিল্লায় এ প্রকল্প বাস্তবায়নের বিষয়টি পরীক্ষা করা যেতে পারে মর্মে মত দেন তিনি।
সভায় অংশ নেয়া চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শামীম আহসান হাসপাতালে অপ্রতুল শয্যা সংখ্যার তথ্য উল্লেখ করে দৈনিক প্রায় ৩ হাজার রোগী ভর্তি থাকেন বলে জানান এবং শয্যা সংখ্যা বাড়ানোর দাবি তুলে ধরেন। এর প্রেক্ষিতে চমেক হাসপাতালে মানসম্মতভাবে শয্যা সংখ্যা বাড়ানোর নির্দেশনা দেন স্বাস্থ্য মন্ত্রী। এছাড়া একটি দল গঠন করে চমেক হাসপাতালে পাঠিয়ে বর্তমানে কি কি আছে এবং কত শয্যা বাড়ানো যেতে পারে সে বিষয়ে প্রতিবেদন প্রণয়নের নির্দেশনা দিয়েছেন মন্ত্রী।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এরই মধ্যে এ সংক্রান্ত একটি কমিটি গঠন করেছে। যদিও কমিটি এখনো চট্টগ্রাম পরিদর্শন করেনি। এ তথ্য নিশ্চিত করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (পরিকল্পনা) আফরিনা মাহমুদ আজাদীকে বলেন, মন্ত্রণালয় এ সংক্রান্ত একটি কমিটি গঠন করেছে। আমাদের কাছে প্রতিনিধি চাওয়া হয়েছিল। আমরা প্রতিনিধি হিসেবে দুজনের নাম পাঠিয়েছি।
জায়গা সংকট কতটা : হাসপাতাল ক্যাম্পাসে জায়গার সংকট থাকলেও গুরুত্ব বিবেচনায় নতুন ভবন নির্মাণের জায়গা বের করা অসম্ভব নয় বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, হাসপাতালের মূল ভবনের পিছন দিকে নতুন রেডিওলজি অ্যান্ড ইমেজিং ভবন নির্মাণ হচ্ছে। এর পাশেই একটি খালি জায়গা রয়েছে। ওই জায়গায় চীনের অর্থায়নে বিশেষায়িত বার্ন ইউনিট স্থাপনের প্রস্তাবনা দেয়া হয়েছিল। তবে চাহিদার তুলনায় জায়গা কিছুটা কম থাকায় সেখানে বিশেষায়িত বার্ন ইউনিট স্থাপনে আগ্রহ দেখায়নি চীন। যদিও জায়গাটি বহুতল ভবন নির্মাণের উপযোগী বলে গণপূর্তের প্রকৌশলীরা চিহ্নিত করে প্রস্তাবনা দেন। বহুতল ভবন নির্মাণ হলে মূল ভবনের সাথে এর সংযোগ স্থাপনের সুযোগও রয়েছে। এর বাইরে হাসপাতাল ক্যাম্পাস থেকে কিছুটা দূরে গোঁয়াছি বাগান এলাকায় হাসপাতালের অনেক জায়গা রয়েছে। হাসপাতালের এসব জায়গায় অনেকে অবৈধ দখলের মাধ্যমে বসত-বাড়ি করে থাকছেন। গোঁয়াছি বাগান এলাকায়ও নতুন যে কোনো ভবন নির্মাণের সুযোগ রয়েছে। এছাড়া মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য হাসপাতালের স্টাফ কোয়ার্টারের পার্শ্ববর্তী (চমেক হাসপাতাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কাছে) জায়গা চিহ্নিত করা হয়েছিল, যা ব্যবহৃত হয়নি। সেখানেও নতুন ভবন নির্মাণের সুযোগ রয়েছে। সব মিলিয়ে নতুন ভবন নির্মাণের মতো জায়গা অবশ্যই বের করা সম্ভব বলে মনে করেন হাসপাতালের চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টরা। জায়গা সংকটের কথা বলে চট্টগ্রামের এ প্রকল্প কোনোভাবেই যাতে অন্যত্র সরিয়ে নেয়া না হয়, সে দাবিও জানিয়েছেন তাঁরা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধজায়গা সংকটের দাবি যৌক্তিক নয়
পরবর্তী নিবন্ধ৫০তম জুলুস কি রেকর্ড গড়বে