দেশের ১৭টি সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মধ্যে স্বাস্থ্যসেবায় সেরা হলো চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল। ৩ এপ্রিল দৈনিক আজাদীতে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, চিকিৎসা সরঞ্জামের পর্যাপ্ততা ও ব্যবহার, বহির্বিভাগে সেবা, আন্তঃবিভাগে রোগী ভর্তি, বেড অকুপেন্সি হার, নরমাল ও সিজারিয়ান ডেলিভারির হার, মেজর (বড় পরিসরে) ও মাইনর (ছোট পরিসরে) সার্জারির সংখ্যা, নিরাপদ রক্ত পরিসঞ্চালন, রোগীদের সন্তুষ্টি, অনলাইনে ডাটা ইনপুটসহ হাসপাতালের সার্বিক সেবা ও সুবিধা বিবেচনায় দেশের ১৭টি সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল নিয়ে র্যাংকিং নির্ধারণ করে আসছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। অনলাইনে প্রদত্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে অধিদপ্তরের এমআইএস (ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম) শাখা এ মূল্যায়ন করে থাকে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সর্বশেষ (২০২২ সালের ডিসেম্বর) মূল্যায়ন সূচকে স্বাস্থ্যসেবায় দেশ সেরা (প্রথম) অবস্থান করে নিয়েছে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল। নিজস্ব ওয়েবসাইটে গতকাল রোববার মূল্যায়নের এ ফল প্রকাশ করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
অধিদপ্তরের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, মূল্যায়ন সময়কালে (২০২২ সালের ডিসেম্বর) চমেক হাসপাতালের বেড অকুপেন্সি (শয্যার বিপরীতে রোগীর) হার ছিল ২১৮ শতাংশ। বহির্বিভাগে সেবা গ্রহীতার সংখ্যা ১ লাখ ৪২ হাজার ৫৫২ জন। যদিও লক্ষ্যমাত্রা ৬৮ হাজার ৩৮৪। মাসে ৫ হাজার ৬৫৮টি লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে মাইনর সার্জারি হয়েছে ৬ হাজার ২০টি। ২ হাজার ৩৭৩টি লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও মেজর সার্জারি সম্পন্ন হয়েছে ২ হাজার ৮৭১টি। অধিকাংশ ক্ষেত্রে লক্ষ্যমাত্রার বেশি সেবা প্রদানে পূর্ণাঙ্গ স্কোর পেয়েছে চমেক হাসপাতাল।
স্বাস্থ্যসেবায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের সেরা হওয়া এবং অসামান্য সাফল্য নিঃসন্দেহে একটা বড় অর্জন। এটি চট্টগ্রামবাসীর জন্য আনন্দ–সংবাদ। তারা বুঝতে পারলো যে তাদের হাসপাতাল তাদের সেবায় অপূরণীয় অবদান রেখে চলেছে।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের (চমেক) অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. সাহেনা আক্তার আজাদীকে বলেছেন, সামপ্রতিক সময়ে অধিদপ্তরের মূল্যায়ন সূচকে চমেক হাসপাতাল প্রায়ই ভালো অবস্থানে ছিল। তবে এবার প্রথম অবস্থানে জায়গা করে নিয়েছে। এটি নিঃসন্দেহে ভালো খবর। এ অবস্থান ধরে রাখতে সকলকে এখন সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে। পাশাপাশি রোগীদের সন্তুষ্টি অর্জনে সেবার মান বাড়াতেও আন্তরিক হতে হবে।
অন্যদিকে, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শামীম আহসান আজাদীকে বলেছেন, সীমিত জনবল, অপর্যাপ্ত বাজেট বরাদ্দসহ বিভিন্ন সীমাবদ্ধতার মাঝেও সেবার মান বাড়াতে আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। তবে নানা সংকট, সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও আমাদের হাসপাতালের এমন অর্জন অবশ্যই উৎসাহব্যঞ্জক। এটি আমাদের আন্তরিক প্রচেষ্টা/উদ্যোগকে আরো উৎসাহিত করবে। তবে বাড়তি জনবল ও প্রয়োজনীয় বাজেট বরাদ্দ পেলে আরো সন্তোষজনক সেবা দেয়া সম্ভব হবে। স্বাস্থ্যসেবায় রোগীদের সন্তুষ্টি অর্জনে আমাদের আন্তরিক প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।
বলা জরুরি যে, দেশের সবচেয়ে জনগুরুত্বপূর্ণ বিভাগ হচ্ছে স্বাস্থ্য বিভাগ। এই বিভাগটির সঠিক পরিচালনার ওপর নির্ভর করে দেশের মানুষের সুস্বাস্থ্য। এই বিভাগটির স্বচ্ছতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা শতভাগ থাকা বাঞ্ছনীয়। এখানে কোনো অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা মানে দেশের মানুষের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতার সমান। অবকাঠামোর দিক থেকে বাংলাদেশ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় হচ্ছে এশিয়া মহাদেশের মধ্যে সবচেয়ে সম্প্রসারিত, বিশাল এবং এর শাখা–প্রশাখা দেশের গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত সুবিস্তৃত। তবু
দেশের সাধারণ মানুষের জন্য সরকারি হাসপাতালের সেবার মান আরো বৃদ্ধি করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসা ব্যবস্থাসহ বেশ কিছু হাসপাতালের ভালো কাজের পাশাপাশি কিছু সমস্যাও গণমাধ্যমের কল্যাণে সবার সামনে চলে এসেছে। অনেকের অভিযোগ, হাসপাতালে সরঞ্জাম ও জনবলের অভাব, রোগীদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করা হয় না, অপরিচ্ছন্ন হাসপাতাল, সময়ের কাজ সময় মতো হয় না। খোদ স্বাস্থ্যমন্ত্রী এ বিষয়ে নিজে উদ্বিগ্ন। ইতোপূর্বে তিনি এক সভায় বলেছেন, জনগণের টাকায় সরকারি হাসপাতালগুলো নির্মাণ করা হয়েছে, তাহলে জনগণের চিকিৎসা সেবায় ঘাটতি থাকে কিভাবে? কেবল ভালো ব্যবহার ও পরিচ্ছন্নতার অভাবে দেশ থেকে হাজারো মানুষ ভারত, সিংগাপুর বা থাইল্যান্ডে চিকিৎসার জন্য যাচ্ছে। এতে আমাদের বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার দেশের বাইরে চলে যাচ্ছে। অথচ দেশেই একটু ভালো চিকিৎসা, ভালো ব্যবহার ও মেশিনগুলোর সঠিক প্রয়োগ করতে পারলে দেশেই এই বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার রাখা যেত। মন্ত্রী বলেন, আমরা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে গোটা দেশের স্বাস্থ্যসেবা খাতের উন্নয়নে মাঠে নেমেছি। আমরা দেখতে চাই, স্বাস্থ্যসেবার সরকারি সেবাখাতে মূল সমস্যা ঠিক কোথায় কোথায়।
তুলনামূলক কম বাজেট ও জনবলসহ বিভিন্ন সীমাবদ্ধতার মাঝেও রোগীদের চিকিৎসাসেবার মান বাড়াতে চেষ্টা করছেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। সংশ্লিষ্ট সকলের সম্মিলিত আন্তরিক প্রচেষ্টায় হাসপাতালের সেবার মান আরো উন্নত হবে—সেই প্রত্যাশা সকলের।