চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে ওষুধ পাচারকালে সুমন বড়ুয়া নামে এক যুবককে আটক করা হয়েছে। গতকাল বিকেলে হাসপাতালের চারতলার অপারেশন থিয়েটার (ওটি) থেকে নামার পথে সিঁড়িতে তাকে ধরা হয়। তার কাছে বিপুল পরিমাণ সরকারি ওষুধ-ইনজেকশান পাওয়া গেছে। চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শামীম আহসান এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
হাসপাতাল প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, আটক সুমন বড়ুয়া একজন বাহক হিসেবে কাজ করেন। তাকে ওটি থেকে ওষুধ সরবরাহ করেন হাসপাতালের সরকারি কর্মচারী শাহ আলম। শাহ আলম অর্থোপেডিক ওয়ার্ডের পরিচ্ছন্নতাকর্মী হিসেবে কর্মরত। জিজ্ঞাসাবাদে সুমন জানিয়েছে- সপ্তাহে ২ দিন শাহ আলম ওটি থেকে ওষুধ বের করে দেন। আর ওটির বাইরে অপেক্ষায় থাকেন সুমন। শাহ আলমের কাছ থেকে ওষুধ পাওয়ার পর সেগুলো হাসপাতালের বাইরে নিয়ে গিয়ে বিক্রি করেন সুমন।
হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শামীম আহসান বলেন, সুমন জানিয়েছে প্রতিবার ওষুধ পাচারে শাহ আলমকে সাড়ে তিন হাজার টাকা করে দেয়া হয়। আর ওষুধগুলো বাইরে বিক্রি করে এর বাইরে যা পাওয়া যায় তা সুমনের ইনকাম। গত ৬ মাস ধরে তারা এ কাজ করছে বলে সুমন স্বীকার করেছে। হিসেবে দেখা যায়, সপ্তাহে দুদিন করে প্রতি মাসে অন্তত ৮ দিন তারা দুজন এভাবে ওষুধ পাচার করছে হাসপাতাল থেকে। আর এই ওষুধ পাচার বাবদ কর্মচারী শাহ আলমের মাসিক আয় দাঁড়ায় ২৮ হাজার টাকা! এটি সরকারি বেতন-ভাতার অতিরিক্ত ইনকাম।
আটক সুমনের বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ দেয়া হচ্ছে জানিয়ে হাসপাতাল প্রশাসন বলছে, সুমনের তথ্যের ভিত্তিতে কর্মচারী শাহ আলমের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। যদিও প্রাথমিক ভাবে শাহ আলমকে অর্থোপেডিক ওয়ার্ড থেকে সরিয়ে কোভিড ওয়ার্ডে দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শামীম আহসান। বাহককে ধরা হলেও এ চক্রের মূল হোতা কর্মচারী শাহ আলম। তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান হাসপাতাল পরিচালক।
প্রসঙ্গত, গত ৭ ফেব্রুয়ারি হাসপাতালের ২৬ নং (অর্থোপেডিক) ওয়ার্ড থেকে সরকারি ওষুধ পাচারকালে মো. সৈয়দ নামে একজনকে হাতেনাতে আটক করা হয়। পরে আশু চক্রবর্তী নামে হাসপাতালের সরকারি এক কর্মচারীকেও আটক করা হয়। তার বাসা থেকেও বিপুল পরিমান সরকারি ওষুধ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে গত ২২ জুন গোলাম রসুল নামে হাসপাতালের আরো একজন সরকারি কর্মচারীকে ওষুধসহ আটক করা হয়। গোলাম রসুল হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটারে (২১ নং ওয়ার্ডে) কর্মরত ছিলেন। অপারেশন থিয়েটার থেকে বের হওয়ার পথে সরকারি বেশ কিছু ওষুধসহ তাকে তাকে হাতেনাতে আটক করা হয়। গোলাম রসুল এর আগে ধরা পড়া ওষুধ চোর চক্রের সদস্য বলে পুলিশ জানিয়েছিল। তবে তারা সবাই বর্তমানে জামিনে বের হয়ে এসেছেন বলে জানা গেছে।