চমেক অধ্যক্ষ ও হোস্টেল তত্ত্বাবধায়কের পদত্যাগ দাবি

ছাত্রলীগের একাংশের সংবাদ সম্মেলন

আজাদী প্রতিবেদন | বৃহস্পতিবার , ২৫ নভেম্বর, ২০২১ at ৫:৫২ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় ৩১ শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান এবং বহিষ্কারের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন করেছে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের অনুসারী ছাত্রলীগের কর্মীরা। গতকাল দুপুরে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব মিলনায়তনে আয়োজিত এ সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন চমেক ছাত্রলীগের কর্মী ও সদ্য গঠিত চমেক হাসপাতাল ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি একেএম তানভীর। সংবাদ সম্মেলন থেকে চমেক অধ্যক্ষ প্রফেসর ডা. সাহেনা আক্তার ও ইন্টার্ন হোস্টেলের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মিজানুর রহমানের পদত্যাগ দাবি করেছে ছাত্রলীগের এই অংশটি। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়- সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে জড়িত ১৬ জনের মধ্যে মাত্র ৮ জনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। বিপরীতে ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্ট নয় এমন ২৩ জনকে কোন রকম তথ্য-প্রমাণাদি ছাড়া বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কার করা হয়েছে। এই ২৩ জনকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগও দেয়া হয়নি।
মহানগর আওয়ামীলীগের জনৈক নেতা, বিএমএ চট্টগ্রাম শাখার একজন চিকিৎসক নেতার প্রণীত শিক্ষার্থীর তালিকা অনুসারে ও ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশে অধ্যক্ষ ডা. সাহেনা আক্তার, অধ্যাপক ডা. মনোয়ারুল হক শামীম ও ডা. প্রনয় দত্তের প্রভাবে প্রভাবিত হয়ে একাডেমিক কাউন্সিল এ ধরণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।
এই একাডেমিক কাউন্সিলের গঠন প্রণালী বৈধ নয় দাবি করে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, সভায় এমন অনেক সদস্য উপস্থিত ছিলেন, যারা সদস্য হওয়ার যোগ্যতা রাখে না। এছাড়া মেয়াদোত্তীর্ণ ছাত্র সংসদের দু’জন প্রতিনিধি একাডেমিক কাউন্সিলে আছেন। আমরা বার বার অধ্যক্ষকে ছাত্র সংসদ বিলুপ্ত করার কথা বললেও তিনি এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেননি। তাছাড়া একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় চমেক হাসপাতালের পরিচালককে আমন্ত্রণই জানানো হয়নি।
অধ্যক্ষকে ‘জামায়াতে ইসলামীর মদদপুষ্ট’ উল্লেখ করে বলা হয়, অধ্যক্ষের স্বামী জামায়াতের অর্থায়নে পরিচালিত আইআইএমসি’র অধ্যক্ষ। তিনিই মূলত চমেক পরিচালনা করছেন। স্বাধীনতাবিরোধী জামায়তপন্থি কয়েকজন শিক্ষককে চমেকের বিভিন্ন বিভাগের প্রধান করা হয়েছে। জামায়াতপন্থি অনেককে বিভিন্ন পরীক্ষায় পরীক্ষক হিসেবে নিযুক্ত করেছেন। এভাবে তিনি জামায়াত-শিবিরের পৃষ্ঠপোষক হিসেবে বিতর্কিত ভূমিকা পালন করে যাচ্ছেন।
অধ্যক্ষের সঙ্গে বসে একজন ঠিকাদার নেতা ও তার দুই সঙ্গী বহিষ্কারাদেশের তালিকা প্রণয়ন করেছেন অভিযোগ করে বলা হয়, ১৯৯৩ সালে ক্যাম্পাসে সংঘটিত ট্রিপল মার্ডারের মূল হোতা নিজের ঠিকাদারি ও সরবরাহ ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে ক্যাম্পাসকে অস্থিতিশীল করতে চাইছেন। দুদকের তদন্তে কোণঠাসা হয়ে পড়া এই ঠিকাদার চিকিৎসকই ক্যাম্পাসে কতিপয় ছাত্রকে বিভ্রান্ত করছেন। অধ্যক্ষের সঙ্গে বসে তার দুই ছায়াসঙ্গী বহিষ্কারাদেশের তালিকা প্রণয়নের পর একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় নাটক মঞ্চস্থ করেছেন। ছাত্রলীগ কর্মীরা কোন মতেই এ সিদ্ধান্ত মেনে নেবে না।
ঠিকাদার নেতার পরিচয় প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত চমেক ছাত্রলীগের কর্মী ও ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক খোরশেদুল ইসলাম বলেন, ‘বিএমএ নেতা ডা. ফয়সল ইকবাল চৌধুরীর প্রেসক্রিপশনেই বহিষ্কারাদেশের এ তালিকা প্রণয়ন করা হয়েছে। এ ধরনের গর্হিত কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে অনতিবিলম্বে চমেক অধ্যক্ষ প্রফেসর ডা. সাহেনা আক্তারের পদত্যাগ দাবি করা হয়েছে সংবাদ সম্মেলন থেকে।
একইসাথে সাবেক প্রধান ছাত্রাবাসের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মিজানুর রহমানের পদত্যাগ দাবি করে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, প্রধান ছাত্রাবাসে সংঘটিত অতীতের ঘটনা নিয়ন্ত্রণ ও সমাধানে ডা. মিজানুর রহমান সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছেন। বর্তমানে ইন্টার্ন হোস্টেলের তত্ত্বাবধায়কের পদ থেকে তার পদত্যাগ দাবি করা হয়েছে। এছাড়া অনতিবিলম্বে একপাক্ষিক ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার ও সঠিক তদন্তের মাধ্যমে উপযুক্ত তথ্য-প্রমাণাদি সাপেক্ষে প্রকৃত দোষীদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছে চমেক ছাত্রলীগের এ অংশ। অনতিবিলম্বে দাবি মানা না হলে কঠোর কর্মসূচি দেয়া হবে বলেও ঘোষণা দেয়া হয় সংবাদ সম্মেলনে।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মাঝে শাশ্বত মজুমদার আকাশ, মো. সাকী, কনক দেবনাথ, ফয়েজ উল্লাহ, হোজাইফা কবির পিয়াল, জামিল উদ্দিন খান, শাওন দত্ত, মো. সাইফ উল্লাহ, মুনান খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবহিষ্কারের সিদ্ধান্ত প্রত্যাখান ছাত্রলীগের অপর অংশেরও
পরবর্তী নিবন্ধআমি যখন ছাত্রলীগের রাজনীতি করেছি তখন তাদের জন্মই হয়নি